যুগে যুগে তিনি এমনি নীরবে তাঁর রাজবন্দী সত্য সৈনিকের পশ্চাতে এসে দণ্ডায়মান হন।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু সত্য সৈনিক প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : স্রষ্টার প্রতি গভীর ও নিশ্চিত আস্থার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে কবি বিচার-প্রহসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
বিশ্লেষণ : রাজা অর্থাৎ শাসকগোষ্ঠী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কবির বিরুদ্ধে রাজদ্রোহীর অভিযোগ সাজিয়েছেন। কবি মনে করেন তিনি রাজবিদ্রোহী নন। তাঁর কণ্ঠে যিনি বীণা বাজান সে বিশ্বস্রষ্টাই প্রকৃত রাজদ্রোহী। কারণ সে মহাশক্তিই তাঁর মনে শক্তি সঞ্চার করেছেন, তাঁকে বিদ্রোহী করে তুলেছেন, তাঁর কণ্ঠে মুক্তির মন্ত্র তুলে দিয়েছেন। ফলে জনগণ জেগেছে, অধিকারের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হয়েছে। এতে কবির দোষ কোথায়? যিনি শক্তির শক্তি মহাশক্তি তাঁকে অভিযুক্ত করার মতো কেউ নেই, তাঁকে শাস্তি দেওয়ার মতো দ্বিতীয় শক্তি নেই। কবি আসামীর কাঠগড়ায় একা দাঁড়িয়ে আছেন। কেননা ন্যায়-সত্য, সুন্দরকে সমুন্নত রাখার জন্য যদি কবি আসামী হন, তাহলে সত্য-সুন্দরের উৎস যিনি তিনিও তো আসামী সাব্যস্ত হয়ে যান। দেশে দেশে শান্তি ও কল্যাণের জন্য যারা নিবেদিত প্রাণ, স্রষ্টাই তাদের নির্দেশদাতা ও আশ্রয়দাতা। তাই সেই সব দেশপ্রেমিক, মানবপ্রেমিক ও ত্যাগী মানুষের পশ্চাতে তিনিই অভয়দাতা, মুক্তিদাতা হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কবি বিশ্বাস করেন যেদিন খ্রিস্টকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়, গান্ধীকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়, সেদিনও স্বয়ং সত্যসুন্দর নীরবে এসে তাদের পশ্চাতে দাঁড়িয়েছিলেন। কবি আরো বিশ্বাস করেন, তিনি যা কিছু বলেছেন এবং লিখেছেন তা তাঁর অনুপ্রেরণাতেই লিখেছেন। কাজেই তাঁর কোন ভয় নেই।
মন্তব্য: স্রষ্টার প্রতি গভীর বিশ্বাস থাকলে এবং তাঁর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করলে, স্রষ্টা সবসময়ই সত্য সৈনিকের পাশে থাকেন এবং অভয় দেন বলে কবি নিশ্চিতভাবে মনে করেন।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*