মাঠ প্রশাসনের সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ আলোচনা কর ।

অথবা,মাঠ প্রশাসনে বিরাজিত সমস্যাসমূহের কিভাবে সমাধান করা যায়? তা বর্ণনা কর।
অথবা, মাঠ প্রশাসনের সমস্যা সমাধানের উপায় বর্ণনা কর।
অথবা, কিভাবে মাঠ প্রশাসনের সমস্যা সমাধান করা যায়? তা আলোচনা কর।
অথবা, মাঠ প্রশাসনের সমস্যা সমাধানে তোমার মতামত ব্যক্ত কর।
অথবা, মাঠ প্রশাসনের সমস্যা কিভাবে সমাধান করা সম্ভব? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মতো কল্যাণকামী রাষ্ট্রসমূহের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের আর্থসামাজিক সংশ্লিষ্ট সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। সরকার এ উদ্দেশ্যে বাস্তবধর্মী ও যুগোপযোগী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে প্রশাসন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। প্রশাসনের এ বিন্যাসকে মাঠ প্রশাসন বলা হয়।
মাঠ প্রশাসনের সমস্যা সমাধানের উপায় : বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসন যেসব অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যার বেড়াজালে নিমজ্জিত তা থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিম্নে মাঠ প্রশাসনের সমস্যা সমাধানের উপায়গুলো আলোচনা করা হলো:
১. কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন : স্থানীয় ও মাঠ পর্যায়ের উন্নয়ন নিয়ে কেন্দ্র ও মাঠ পর্যায়ের দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। কারণ স্বাধীনতার পর থেকেই দেখা যায় কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা হয় যার কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে উভয় স্তরের মধ্যে বিবদমান সম্পর্কের অপসারণের মাধ্যমে একটি সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন মাঠ প্রশাসনের উন্নতিকল্পে।
২. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনের মাধ্যমে : আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র একটি অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান। তবে আমলাতন্ত্রে কল্যাণের পাশাপাশি বিভিন্ন অসুবিধাও সৃষ্টি করে। যার প্রভাব দেখা যায় মাঠ প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে। তাই জনকল্যাণের কথা বিবেচনায় রেখে সরকার এবং আমলাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব জটিলতা নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে।
৩. যোগ্য নেতৃত্ব গড়ার মাধ্যমে: যে কোনো প্রশাসনকে সুদূরপ্রসারী করে তুলতে হলে যোগ্য, দক্ষ নেতৃত্ব ও গুণসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি অনুপস্থিত তা বেশ লক্ষণীয়। দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য নেতাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। তারই সাথে সাথে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে হবে এবং সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা থাকতে হবে।
৪. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দূরীকরণ : বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রশাসনিক পদে দুর্নীতি একটি মহামারী ব্যাধিতে রূপলাভ করেছে। তাছাড়াও রয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নৈতিক অবক্ষয় ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। এর ফলে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তৃতিতে মাঠ প্রশাসনের উপর জনগণের আস্থার ভিত্তি নেই। তাই সরকারকে দুর্নীতি দমনে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকারের একার প্রচেষ্টায় দুর্নীতি দূরীকরণ করা সম্ভব নয়, সকলকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে।
৫. সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সহঅবস্থান নিশ্চিতকরণ : বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় হচ্ছে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ ও বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্ক। আর এর প্রভাবে দেখা যায় রাজনৈতিক অস্থিরতা। তাই সরকারকে বিরোধী দলের প্রতি সহনশীল হওয়া দরকার ঠিক তেমনি বিরোধী দলেরও উচিত সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা।
৬. কেন্দ্রীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে সেতুবন্ধন : কেন্দ্রীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের বন্ধন তৈরি করতে হবে। এ ধরনের যোগাযোগের ফলে উভয় ব্যবস্থার মধ্যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রশাসকদের উপর অতিরিক্ত কাজের ভার লাঘব হয় এবং প্রশাসকগণ জনগণের সাথে অতি সহজে যোগাযোগ করতে পারে।
৭. মাঠ প্রশাসন ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন : প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য পুলিশি ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। কারণ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণসাধন করাই হলো সরকারের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের বিষয়টিও আসে। কিন্তু দেখা যায় যে, পুলিশ প্রশাসন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করণে আন্তরিকতার পরিচয় দেয় না, এর ফলে দেখা যায় সমন্বয়হীনতা যা উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর। তাই সঠিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
৮. প্রশাসনিক বিভাগের সমন্বয়সাধন : সুশাসনের জন্য প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সমন্বয় ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকা অতি আবশ্যকীয়। আমরা মাঠ প্রশাসনকে বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই সেখানে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যেসব বিভাগ রয়েছে সেখানে সমন্বয়ের অভাব প্রকট। তাই কেন্দ্র কর্তৃক গৃহীত নীতি ও পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য সমন্বয়ের অভাবকে অস্বীকার করা যায় না।
৯. অর্থ সরবরাহ : বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের আয়ের উৎস থেকে যে পরিমাণ অর্থ সংগৃহীত হয় তা দ্বারা মাঠ পর্যায়ের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই মাঠ প্রশাসনকে তার প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বিভাগের দ্বারস্থ হতে হয়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থের যোগান দিতে বিলম্ব হয়। তাই মাঠ প্রশাসনে সফলতা নিশ্চিত করতে অর্থের নতুন নতুন উৎস সৃষ্টিসহ কেন্দ্রীয় সরকারকে সবরকম সহযোগিতা করতে হবে।
১০. দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা : বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দলীয়করণ। যেখানে দলীয় স্বার্থ ব্যাহত হয়, সেখানে শুরু হয় সংঘাতের। প্রশাসনের দলীয়করণের প্রভাব যতশীঘ্রই সম্ভব হ্রাস করতে হবে। তবেই মাঠ প্রশাসনের সাফল্য বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মাঠ প্রশাসনের অচলাবস্থা দূর করলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*