মাঠকর্মের পরিধি বা ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা কর ।
অথবা, সমাজকর্মে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, মাঠকর্মের পরিধি সম্পর্কে বিশ্লেষণ কর।
অথবা, মাঠকর্মের ক্ষেত্রসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের পরিধি আলোচনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : সমাজসেবামূলক বা সমাজকল্যাণমূলক যেসব সংস্থায় শিক্ষার্থীরা মাঠকর্ম অনুশীলনের সুযোগ পায় সেগুলোই মাঠকর্মের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। যেসব ক্ষেত্রসমূহে ছাত্রছাত্রীরা তাদের মাঠকর্ম সম্পন্ন করার জন্য প্রেরিত হয় সেসব সংস্থা নিয়েই মাঠকর্মের পরিধি গঠিত।
মাঠকর্মের/ মাঠকর্ম অনুশীলনের পরিধি : নিম্নে মাঠকর্মের পরিধি বা ক্ষেত্রসমূহ বর্ণনা করা হলো :
১. মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র (Drug addiction) : এদেশে সরকারি ও সরকারিভাবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য চিকিৎসা দেয়া হয়।সমাজকর্মের শিক্ষার্থীরা এসব কেন্দ্র মাঠকর্মের পরিধির আওতাভুক্ত।
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (Education institution) : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাঠকর্মের পরিধির অন্তর্ভুক্ত । সমাজকর্মের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের মাঠকর্ম সম্পাদন করে থাকে। উদারহণস্বরূপ,ইউসেপ বাংলাদেশ-এ শিক্ষার্থীরা মাঠকর্ম সম্পাদন করে।এনজিও কর্তৃক পরিচালিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মাঠকর্ম সম্পাদন করা হয়।
৩. পরিবার কল্যাণ (Family welfare) : বাংলাদেশের অসংখ্য পরিবার নানাবিধ সমস্যা যেমন- দাম্পত্যকলহ, বিবাহবিচ্ছেদ, পারিবারিক ভাঙ্গন প্রভৃতিতে নিমজ্জিত । এসব সমস্যা দূর করার জন্য পরিবার কল্যাণ কর্মসূচি অত্যাবশ্যক।এজন্য কতিপয় প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানেও ছাত্রছাত্রীদের মাঠকর্ম সম্পন্ন করার জন্য প্রেরণ করা হয়।
৪. হাসপাতাল সমাজসেবা (Hospital social service) : বাংলাদেশে জেলা সদরের ৬৪টি হাসপাতালসহ ৮৪টি হাসপাতালে ‘হাসপাতাল সমাজসেবা’ বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগে দারিদ্র্য রোগীসহ অন্যান্যদের আর্থসামাজিক ও মনোদৈহিক সেবা প্রদান করা হয়। সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের হাসাপাতাল সমাজসেবায় মাঠকর্মের শিক্ষার্থীদের হাসাপাতাল সমাজসেবায় মাঠকর্মের জন্য সংস্থাপন করা হয় ।
৫. সংশোধনমূলক কেন্দ্র (Correctional centre) : সংশোধনী কেন্দ্রে কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে।এসব কেন্দ্রে সমাজকর্মের ছাত্রছাত্রীদের মাঠকর্মের জন্য প্রেরণ করা হয়।শিক্ষার্থীরা সমাজকর্মের পদ্ধতি প্রয়োগ করে কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের প্রচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশে এ ধরনের সংশোধনী প্রতিষ্ঠানের নাম জাতীয় কিশোর উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান । এদেশে তিনটি এ জাতীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।
৬. বৃদ্ধনিবাস (Older home) : বর্তমান বিশ্বে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধনিবাস প্রবীণদের বাসস্থান ও নিরাপত্তার স্থান হিসেবে বিবেচিত । বৃদ্ধদের সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্ত করার জন্য বৃদ্ধাশ্রম গঠিত । শিক্ষানবিস সমাজকর্মী হিসেবে ছাত্রছাত্রীরা এ ধরনে প্রতিষ্ঠানে মাঠকর্ম সম্পন্ন করে থাকে । এটি মাঠকর্মের পরিধির অন্তর্ভুক্ত ।
৭. সমষ্টিসেবা (Community service) : বাংলাদেশে সমষ্টিসেবা হিসেবে গ্রামীণ সমাজসেবা ও শহর সমাজসেবার নাম উল্লেখযোগ্য । গ্রামীণ সমাজসেবা মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের উন্নয়ন সাধিত হয়। অপরদিকে, শহরসেবা শহরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা চালায়। এসব কর্মসূচিতে সমাজকর্মের শিক্ষার্থীরা তাদের মাঠকর্ম সম্পাদন করে থাকে ।
৮. পুনর্বাসন কেন্দ্র (Rehabilitation centre) : সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কয়েকটি পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে । এসব কেন্দ্র লাঞ্চিতা মহিলা, পতিতা ও সক্ষম পেশাদার ভিক্ষুকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পুনর্বাসন করে থাকে সমাজকর্মের ছাত্রছাত্রীরা এসব কেন্দ্রে তাদের মাঠকর্ম সম্পন্ন করে থাকে ।
৯. যুক কল্যাণ (Youth welfare) : যুবকল্যাণ কর্মসূচি মূলত বাংলাদেশ সরকারের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর দ্বারা পরিচালিত । যুবকদের স্বাবলম্বী করা এ সংস্থার মূল লক্ষ্য। সমাজকর্মের ছাত্রছাত্রীরা এ বিভাগে মাঠকর্ম সম্পাদন করে থাকে । এখানে তারা যুব সমস্যার উগর সমাজকর্মের পদ্ধতি প্রয়োগ করে এবং নিজেদের দক্ষতা অর্জন করে ।
১০. সরকারি শিশু পরিবার (Government Chield Family) : আমাদেরে দেশের প্রতিটি জেলাতেই সরকারি শিশু পরিবার রয়েছে।এসব শিশু পরিবারগুলোও মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত।
১১. এনজিও (NGO) : দেশে কর্মরত এনজিওগুলো উন্নয়নের সাথে জড়িত। এনজিওগুলো উন্নয়নমূলক বা সেবাধর্মী কাজ করে থাকে । ব্র্যাক, ওয়ার্ল্ড ভিশন, আশা, প্রশিকা, কেয়ার, ওয়াল্ড ভিশন প্রভৃতি এনজিও আমাদের দেশে উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। এসব সংস্থায় শিক্ষার্থীরা মাঠকর্ম সম্পন্ন করতে পারে ।
১২. নারীকল্যাণ (Women welfare) : এদেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নারীদের কল্যানে কাজ করে থাকে।এসব প্রতিষ্ঠানে সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের মাঠকর্ম সম্পাদন করার জন্য প্রেরণ করা হয়।এ ধরনের কয়েকটি সংস্থা হলো-বাংলাদেশ মহিলা আইন-জীবি সমিতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, আইন ও সালিম কেন্দ্র প্রভৃতি । এসব প্রতিষ্ঠান নারীদের আইনী সহায়তা, ও নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে ।
১৩. শিশুকল্যাণ (Child welfare) : শিশুদের কল্যাণ তথা তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য বিভিন্ন সংস্থা এদেশে কাজ করে যাচ্ছে । এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মদ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এসওএস (SOS) শিশু পল্লী, শিশু সদন, শিশুপরিবার,দিবাযত্ন কেন্দ্র শিশু পল্লী প্রভৃতি।এসব প্রতিষ্ঠানে সমাজকর্মের ছাত্রছাত্রীরা মাঠকর্ম অনুশীলন করে থাকে
১৪. সংশোধন কেন্দ্র (Rectification centre) : দেশে যে কটি কিশোর রঅপরাধ সংশোধনী কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর নবই মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত ক্ষেত্র ছাড়াও মাঠকর্মের অন্যান্য পরিধি বা ক্ষেত্রসমূহ হলো হাসপাতাল, ট্রমা সেন্টার, প্রতিবেশী কেন্দ্র, শ্রমকল্যাণ সংস্থা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, মানসিক সমস্যা নিরাময় কেন্দ্র, অটিস্টিক কেন্দ্র প্রভৃতি । এসব ক্ষেত্রসমূহেও সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য প্রেরণ করা হয়ে থাকে ।