মাঠকর্মের নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, মাঠকর্মের নীতিমালা বর্ণনা কর।
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের নীতিমালা বর্ণনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : মাঠকর্ম অনুশীলনে শিক্ষার্থীকে কতিপয় অনুসরণ করতে হয়। এসব নীতি অনুসরণের মাধ্যমেই শিক্ষার্থী তার মাঠকর্ম অনুশীলন সম্পাদন করেন ।
মাঠকর্মের/ মাঠকর্ম অনুশীলনের নীতিমালা : নিম্নে মাঠকর্মের নীতিমালা আলোচনা করা হলো :
১. সাহায্যার্থীর মূল্য ও মর্যাদা (Recoginition of values and status of the client) : মাঠকর্মে মাঠকর্মী সাহায্যার্থী যেই হোক না কেন তাকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। নতুবা সাহায্যার্থী সমাজকর্মীর নিকট কোনো সাহায্য চাইবে না । তাই এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীর অবস্থান অনুযায়ী তাকে মর্যাদা প্রদান করতে হবে ।
২. যোগাযোগ নীতি (Principles of communication) : এটি মাঠকর্মের একটি অন্যতম নীতি। এ নীতি অনুযায়ী, মাঠকর্মে কাজ করতে যেয়ে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থীর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে করে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। এর ফলে সমাজকর্মী বা মাঠকর্মী সাহায্যার্থী সম্পর্কে বিস্তারিত জানবে এবং তাকে সাহায্য করবে ।
৩. সংস্থার লক্ষ্য মেনে চলা (To execute the aims and objectives of the agency) : সংস্থায় মাঠকর্মের জন্য প্রেরিত শিক্ষার্থীকে অবশ্যই সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীকে সংস্থার লক্ষ্য ও আদর্শ মেনে চলতে হয় সমাজকর্মীকে ।
৪. গোপনীয়তার নীতি (Cenfidential principles) : গোপনীয়তার নীতি মাঠকর্মের একটি বিশেষ নীতি। শিক্ষার্থী বা মাঠকর্মী সাহায্যাখীর যাবতীয় তথ্য গোপন রাখবেন এবং সাহায্যার্থীকে এর নিশ্চয়তাও দিবেন। এতে করে সাহায্যার্থী সমাজকর্মীর-১উপর আস্থা তৈরি হবে । এ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে ।
৫. আত্মসচেতনতার নীতি (Principles of self-awarness) : আত্মসচেতনতার নীতি অনুযায়ী শিক্ষার্থী সংস্থায় সচেতনতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করবেন।এখানে তাকে হতে হবে পরিবর্তনের প্রতিনিধি বা Change agent এর ব্যতিক্রম হলে মাঠকর্মী লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
৬. সম্পদের সদ্ব্যবহার নীতি (Praper utilization of resourecs) : সম্পদের সদ্ব্যবহার বলতে সম্পদকে সঠিক সময়ে সঠিক কাজে লাগানোকে বুঝায় । এক্ষেত্রে মাঠকর্মী যার যতটুকু সম্পদ প্রয়োজন সে যেন ততটুকু পায় তা নিশ্চিত করবে।নিজস্ব সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে সাহায্যার্থীর সমস্যার সমাধান করা এর অন্যতম নীতি।
৭. সকলকে সমান চোখে দেখা (All are equal to the field worker) : সকল মানুষকে সমান চোখে দেখা-মাঠকর্মের একটি তাৎপর্যপূর্ণ নীতি। এক্ষেত্রে Client যেই হোক না কেন তাকে সমান চোখে দেখবেন এবং সেবাদান প্রক্রিয়া অব্যাহক রাখবেন ।
৮. নমনীয় কর্মকাঠামো (Principles of flexible function) : নমনীয় কর্মকাঠমো বলতে কোনো পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়াকে বুঝায়। এক্ষেত্রে মাঠকর্মীকে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে। এতে করে সাহায্যার্থীও লাভবান হবে ।
৯. মূল্যায়ন নীতি (Principles of evaluation) : মূল্যায়ন নীতি মাঠকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি।এক্ষেত্রে মাঠকর্মী তার কাজের শেষে মূল্যায়ন করবেন। তার কাজের সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করে ত্রুটি সংশোধনের সচেষ্ট হবেন ।
১০. পেশাগত সম্পর্ক নীতি (Principles of rapport) : মাঠকর্মের অন্যতম নীতি হলো পেশাগত সম্পর্কের নীতি।এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী (শিক্ষানবিস সমাজকর্মী) এবং সাহায্যার্থীর মধ্যে পেশাগত সম্পর্ক (Ropport) প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক।অর্থাৎ তিনি এজেন্সির মাধ্যমে সাহায্যার্থীর সঙ্গে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন করা সাপেক্ষে তার কার্যসম্পাদন করবেন ।
১১. অংশগ্রহণ নীতি (Principles of participation) : মাঠকর্মের আরেকটি নীতি হলো অংশগ্রহণ নীতি।এ নীতি অনুযায়ী, শিক্ষার্থী এজেন্সিতে সাহায্যার্থীর সাথে সরাসরি কাজ করবেন। অর্থাৎ তিনি এজন্য সরাসরি কাজে অংশগ্রহণ করবেন । এ নীতি সাহায্যার্থীর জন্য ও সমভাবে প্রযোজ্য ।
১২. তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশ মেনে চলা (Order of the supervisor’s) : মাঠকর্মে শিক্ষার্থী দু’জন তত্ত্বাবধায়কের (একজন বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক এবং অন্যজন সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক) অধীনে মাঠকর্ম সম্পন্ন করেন। শিক্ষার্থীকে তত্ত্বাবধায়কের উপদেশ ও নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয়। তারাই মূলত কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দেন ।
১৩. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি : মাঠকর্মের আরেকটি নীতি হলো আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি। এ নীতি অনুযায়ী,শিক্ষার্থী এজেন্সিতে সাহায্যার্থীর সাথে সরাসরি কাজ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন হবেন।
১৪. পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নীতি : মাঠকর্মের আরেকটি নীতি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নীতি।এ নীতি অনুযায়ী,শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় মাঠকর্মের নীতিগুলোর গুরুত্ব অত্যধিক।এ নীতিকে সমাজকর্মী অনুসরণ করে থাকে। এ নীতির ফলে সাহায্যার্থীরাই বেশি উপকৃত হয়। তাই মাঠকর্ম নীতির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না । মূলত মাঠকর্ম অনুশীলনের নীতি সমাজকর্মীদের জন্য একটি গাইড লাইন।