মাঠকর্মের ধারণা দাও। মাঠকর্মের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, মাঠকর্মের সংজ্ঞা দাও। মাঠকর্মের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কাকে বলে? ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : যে কোনো পেশাদার বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। সমাজকর্ম একটি পেশাদার বিষয় বলে সমাজকর্মেও ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক।সমাজকর্মে ব্যবহারিক জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় মাঠকর্ম অনুশীলন।মাঠকর্ম মূলত একটি অনুশীলনধর্মী শিক্ষা।সমাজর্মীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের পর ব্যবহারিক জ্ঞার অর্জন করতে হয়। সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্র হলো
মাঠকর্ম।মাঠকর্মের মাধ্যমে একজন সমাজকর্মী তার জ্ঞান ও দক্ষতাকে যেমন বাস্তব ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে তেমনি বাস্তব ক্ষেত্র থেকে জ্ঞান অর্জন করে সমাজকর্মের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
মাঠকর্মের ধারণা : মাঠকর্মের ইংরেজি প্রতিশব্দ Field Work। শব্দগত অর্থে মাঠকর্ম বলতে এমন ধরনের কাজকে বুঝায় যা সরাসরি কর্মক্ষেত্রে বা মাঠে সম্পাদন করা হয় । শিক্ষানবিস সমাজকর্মী বা শিক্ষার্থীগণ তাদের পাঠ্যক্রমের আলোকে তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী সরাসরি কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করে তাকে মাঠকর্ম বলে। মাঠকর্ম বলতে সমাজকর্মের নীতিমালা অনুসরণ করে এর জ্ঞানকে বাস্তব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর জন্য যে অনুশীলন করা হয় তাকে বুঝায় । ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতকের প্রথমদিকে সমাজকর্মে মাঠকর্ম অনুশীলন শুরু হয়।মাঠকর্ম অনুশীলন এমন একটি প্রক্রিয়া যা কোনো বিষয়ের তাত্ত্বিক জ্ঞান ও কলাকৌশল মানবকল্যাণার্থে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। সমাজকর্মের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের আওতায় সমাজর্মের জ্ঞান, দর্শন, মূল্যবোধ, নীতিমালা ও পদ্ধতি সম্পর্কে শ্রেণিকক্ষে পাঠগ্রহণের পর বিভাগীয় শিক্ষক ও কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়কের অধীনে সে এজেন্সিতে যে কাজ করে তাই মাঠকর্ম অনুশীলন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : Field work Manual-এ M. A. Momen বলেন, “মাঠকর্ম কর্মসূচি হলো একজন ছাত্রকে স্বতন্ত্র পেশাগত কর্ম সম্পাদন এবং তার দক্ষতা ও যোগ্যতার উন্নয়নের জন্য সাহায্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান।” (Field Work programme is designed to help and guide a student to develop his skill and competence for his independent professional as functioning and carrying out appropriate responsibilities.) (M. A. Momen, : Field Work Manual, E.S.W.R.D.V, 1979)
Brown এবং Gloyne মাঠকর্ম সম্পর্কে বলেন, “এটা একটা ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা। আর এ অভিজ্ঞতা তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা এ বিষয়ে অর্থাৎ সমাজকর্ম বিষয়ে পড়াশুনা করছে বা যারা ভবিষ্যতে সমাজকর্মী হতে চায়। এটি সাধারণত একটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে ঘটে থাকে ।” (Field work is any kind of practical experience in a social organization or agency if this experience has been deliberately arranged for the education of students who are undertaking course party or wholly designed for those who intend to become social workers.)
ভারতের সমাজকর্মী R. R. Sing বলেন, “মাঠকর্ম হলো সমাজকর্মের ছাত্রছাত্রীদের কোনো একটি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা সম্প্রদায়ের একটি অংশের সাথে সংযোগ করে যেখানে তাদের জ্ঞান, বুঝাপড়ার ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতাগুলো বাড়াতে সাহায্য করা হয় ।” (Field work is an educationally sponsored attachment of social work students to an institution agency or a section of community in which they are helped to extend their knowledge and understanding and experience the impact of human needs.)
Oxford Advanced Learners Dictionary (2002; 493) অনুযায়ী “এটি একটি অনুধ্যান বা গবেষণা যা শ্রেণিকক্ষ বা পরীক্ষাগারের পরিবর্তে বাস্তব জগতে সম্পাদন করা হয় ।” (Field work is a research or study that is done in the real world rather than in the laboratory or classroom.)
Holis and Taylor এর মতে, “মাঠকর্ম অনুশীলন হলো সমাজকর্ম শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ । এটা প্রাতিষ্ঠনিক অধ্যয়ন ও পেশাগত শিক্ষার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্দেশ করে।” (Field work is an intergral part of social work education. It is in this area of that difference between academic study and professional education emerges most clearly.)
International encyclopedia of social science এ বলা হয়েছে, “মাঠকর্ম বলতে কোন সংস্কৃতির একজন সদস্য হিসেবে এবং একই সাথে বিভিন্ন সংস্কৃতির একজন প্রশিক্ষিত সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে বলতে, চিন্তা করতে ও অনুভব করা শেখাকে বুঝায় ।” (Field work comes to mean learining as far as possible to speak, think, feel and act as member of its culture and at the same time as a trained social scientist from a different culture.)
পরিশেষে বলা যায়, মাঠকর্ম এমন একটি শিক্ষা কার্যক্রম যেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্থাপন করে তাদেরকে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হয় এবং বাস্তবক্ষেত্রেও সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করতে হয়।হয়। শিক্ষানবিস সমাজকর্মী হিসেবে আমাদের দেশে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে ৬০ কর্মদিবসের মাঠকর্ম অনুশীলন করতে হয়।
মাঠকর্মের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : সমাজকর্ম একটি অনুশীলনধর্মী বিজ্ঞান। এটি পেশা হিসেবে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মূলত আমেরিকায়। তবে সমাজকর্মের বীজ রোপিত হয় মূলত ব্রিটেনে। এক্ষেত্রে মানবতাবাদী আন্দোলন, দান সংগঠন সমিতি, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, শিল্পবিপ্লব সমাজকর্ম পেশার ভিত্তি রচনায় সহায়তা করেছে। তবে সমাজকর্মকে পেশাগত রূপ দেয়া ও এর পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন সমাজকর্মের উপর পেশাগত শিক্ষা
ও প্রশিক্ষণ । সমাজকর্ম শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত ও দক্ষ সমাজকর্মী তৈরি এবং সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত সমাধান নিতে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের দক্ষ সমাজকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়।কানাডা, জার্মান যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সর্বত্রই সমাজকর্ম শিক্ষার প্রসার ঘটেছে।সনাতন সমাজকল্যাণ যখন সমাজস্থ মানুষের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছিল, তখনই সুসংগঠিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজকর্মের সূচনা হয়। সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে রূপদানের জন্য প্রয়োজন হয় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার। এক্ষেত্রে প্রথমেই যার ভূমিকা অগ্রগণ্য তিনি হলেন এনা এল. ডয়েস (Anna L. Dawes)।
উল্লেখ্য দান সংগঠন সমিতি আমেরিকাতে পেশাগত সমাজকর্মের ভিত্তি স্থাপন করে। আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত Charity Organization Society বা দান সংগঠন সমিতিগুলোর উদ্দেশ্য ছিল সাহায্য প্রার্থীদেরকে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে পরিদর্শন সাপেক্ষে তাদের প্রকৃত আর্থসামাজিক অবস্থার অনুসন্ধান এবং সুসংগঠিত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর সমস্যার সমাধান।কিন্তু সমিতিগুলো পরিদর্শনের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়।যার প্রেক্ষিতে প্রখ্যাত সমাজকর্মী এনা এল. ডয়েস (Anna L. Dawes) ১৮৯৩ সালে শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত ‘International Congress of Charities Correction and Philanthropy’-তে সর্বপ্রথম সমাজকর্মের উপর পেশাগত প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন।তাঁর এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৮৯৭ সালে মেরি রিচমন্ড (Mary Richmond) সমাজসেবার জন্য ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দানের উদ্দেশ্যে ‘Training School for Applied Philanthropy’ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। Charity Organization Society— (COS) ও উক্ত School এর যৌথ প্রচেষ্টায় ৬ সপ্তাহের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে।এই প্রশিক্ষণ কোর্সটি পরে ৬ মাসে উন্নীত করে ‘New York School of Philanthropy’ নামকরণ করা হয়। এটি সমাজকর্মকে পেশায় উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।পেশাগত বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান, দক্ষতা ও নৈপুণ্যতা ছাড়া কোন বিষয়কেই পেশার মানদণ্ডে বিচার করা যায় না।অন্যান্য পেশার ন্যায় সমাজকর্মের ক্ষেত্রেও পেশাগত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় আমেরিকাতে।সেখানে মূলত ‘New York School of Philanthropy’ (১৯০৪) পেশাগত শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে। এর পূর্বে অবশ্য ১৯০১ সালে শিকাগো শহরে প্রতিষ্ঠিত ‘Institute of Social Sciences’ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘School of Civics and Philanthropy’ প্রতিষ্ঠিত হয়।of Social Service Administration’ নামধারণ অন্যদিকে, ‘New York School of Philanthropy’ পরবর্তীতে ‘New York School of Social Work’ এ উন্নীত হয়।১৯৪০ সালে এই স্কুলটি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ সময় Chicago, Boston, Filladelphia প্রভৃতি শহরেও ‘School of Social Work’ প্রতিষ্ঠিত হয় । উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে ‘New York School of Social Work’ এর পুনঃনামকরণ করা হয় ‘Columbia University School of Social Work’. আমেরিকায় পেশাগত সমাজকর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘The National Association of Schools of Social Administration’ এর ভূমিকাও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । বর্তমানে আমেরিকার প্রায় রাজ্যেই পেশাগত সমাজকর্ম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।১৯৮৯ সালে প্রদত্ত তথ্যে জানা যায় আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পেশাগত স্কুলের সংখ্যা ৮৮টি।এসব প্রতিষ্ঠানে সমাজকর্ম বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়।National Conference of Charities and Correction- এর বিশেষজ্ঞগণ ১৯১৫ সালে সমাজকর্মের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেন। তখন ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাজীবনের অর্ধেক সময় মাঠ পর্যায়ে ব্যয় করতো। কতিপয় প্রশিক্ষকের প্রাণপণ চেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর দিকে মনে। সমীক্ষণ তত্ত্ব উদ্ভাবিত হওয়ার ফলে এটি
সমাজকর্ম শিক্ষার বিকাশে প্রভাব ফেলে।সমাজকর্মভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মান বজায় রাখার জন্য ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘American Association of School of Social Work.’ পরবর্তীতে ১৯৩২ সালে এক বছরের জন্য এবং ১৯৩৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমাজকর্ম কোর্স চালু হয়। একই সময়ে দু’বছর মেয়াদি মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয় । ১৯৩০-৪০ সালের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চার বছর মেয়াদি স্নাতক শিক্ষকার্যক্রম চালু করা হয়।এদিকে ১৯২০-৩০ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডে চিকিৎসা সমাজকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়। ‘Institute of Case Work’ এর উদ্যোগে মনো-সমাজকর্ম, শিশু কল্যাণ সেবা, পারিবারিক কেস ওয়ার্ক এর উপর প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়।১৯৬২ সাল থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমাজকর্মীদের সমাজকর্মের সনদ প্রদান আরম্ভ হয়। ১৯৭০ সালে ইংল্যান্ডে সমাজকর্ম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উপর প্রশিক্ষণ কাঠমো প্রণয়ন করা হয়।(ড.মোঃ নূরুল ইসলাম )
এদিকে জাতীয় সমাজকর্ম সমিতি (NASW) ১৯৫৬ সালে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রসারে প্রচেষ্ট চালায়। এজন্য ১৯৬২ সালে NASW জ্ঞান সম্মেলনের আয়োজন করে। ১৯৭৭ সালে NASW তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন সুপারিশ প্রদান করে। ১৯৭৭ সালে এক সম্মেলনে সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধ চূড়ান্ত করে। ১৯৮১ সালে NASW এর ‘Conceptual Framework for Social Work-II’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিষয় চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হয়।(মোঃ নূরুল ইসলাম)।
বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা বিকাশের সূচনা হয় অর্ধ শতাব্দীকাল আগে।এদেশে সমাজকর্ম শিক্ষার বিকাশে রয়েছে বৈচিত্র্যতা।১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পূর্ব পর্যন্ত এদেশের সমাজকল্যাণ মূলত কার্যক্রম মূলত সনাতন প্রথার ভিত্তিতে পরিচালিত হতো।১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে।ভারত থেকে হাজার হাজার উদ্বাস্তু বাংলাদেশে আগমন করে।সামাজিক সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তদানীন্তন সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালে জাতিসংঘ ড. জেমস আছ, ডাম্পসন এর নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ দল পাঠায় বাংলাদেশে । তাঁরা আর্থসামাজিক সমস্যা ও সমাজকল্যাণ কর্যক্রমের উপর ব্যাপক জরিপকার্য পরিচালনা করে। বিশেষজ্ঞ দল প্রাপ্ত জরিপের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমাজকর্মীর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন এবং এজন্য পেশাগত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য সুপারিশ করেন। এদেশে সমাজকর্ম শিক্ষার ইতিহাস পর্যালোচনায় প্রথমেই আসে সমাজকর্ম বিষয়ে প্রশিক্ষণ কোর্স।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৫৩ সালে ঢাকায় ৩ মাসের জন্য সমাজকর্ম বিষয়ে প্রশিক্ষণ কোর্স প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এটি এদেশে সমাজকর্মের উপর প্রথম প্রশিক্ষণ কোর্স এবং এই কোর্সের মাধ্যমে এদেশে পশাদার সমাজকর্মের ভিত্তি রচিত হয়। ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে এটিকে নয় মাসের কোর্সে উন্নীত করা হয়। ১৯৫৭ সালের দিকে নয় মাসের কোর্সটিকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে গ্রহণ করা হয়। দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমাজকর্মী সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পেশাগত শিক্ষার জন্য যথেষ্ট বিবেচিত না হওয়ায় পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা কর্যক্রম প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
“প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের শুরুতেই ১৯৫৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘সমাজকল্যাণ কলেজ ও গবেষণা কেন্দ্ৰ’ (College of Social Welfare and Research Centre) । জাতিসংঘের উপদেষ্টা ড. জে. ও. মূর (Dr. J. O. Moore) এর পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে এখানে দু’বছরে মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হয়। এটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই চ্যান্সেলর।প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি ও স্বনামধন্য নাগরিকদের নিয়ে গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত হতো । এর পেশাগত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৮-৫৯ সালে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে।পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে
অনার্স কোর্স চালু হয় । এরপর ১৯৯৩ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগ চালু করা হয়।বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনে শতাধিক কলেজ অনার্স ও অর্ধশতাধিক কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।প্রতিটি কোর্সেই মাঠকর্ম অনুমীলন বাধ্যতামূলক।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে রূপদানের পদক্ষেপ হিসেবে মাঠ পর্যায়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা ৬০ দিনের এই ব্যবহারিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে।মাঠকর্ম শেষে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী কর্ম অভিজ্ঞতার উপর প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। ব্যবহারিক শিক্ষাক শেষে প্রত্যেককেই মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। এর মাধ্যমে
শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের অভিজ্ঞতাকে বাস্তবে প্রয়োগের যোগ্যতা অর্জন করে।