মনে হয় তুমি শুধু অশরীরী সুর! তবু জানি তুমি সুর নও, তুমি শুধু সুরযন্ত্র! তুমি শুধু বও আকাশ জমানো ঘর অরণ্যের অন্তলীন ব্যথাতুর গভীর সিন্ধুর।”—ব্যাখ্যা কর।
উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু সাত সাগরের মাঝি কাব্যগ্রন্থের ‘ডাহুক’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে ডাহুকের ডাক কবিচিত্তে চেনা-অচেনার যে অধ্যাত্মবোধ সৃষ্টি করেছে তা প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্লেষণ : গভীর রজনী চারদিক স্তব্ধতায় ঘেরা। ঘুমের ঘোরে অচেতন সমস্ত পৃথিবী। শুধু জেগে আছেন কবি আর বনপ্রান্তে বিরহী এক ডাহুক। তার একনিষ্ঠ হৃদয় বিদীর্ণ সুরে রাত্রির নিস্তব্ধতা আর মধুর হয়ে উঠে। সে ডাক বয়ে নিয়ে আসে এক নতুন বারতা। কবি অসীমের বাণী শুনতে পান ডাহুকের কণ্ঠে। অপূর্ব সে সুর মদিরা। কবির চেনা বর্ণিল সে পাখি ডাহুক কবি চিত্তে ধরা দেয় সাধকের প্রতীক হিসেবে। পরম স্রষ্টাকে পাবার জন্য সাধক যেমন এক নাগাড়ে যিকির করে চলে ডাহুক তেমনি ডেকে চলেছেঅবিশ্রান্ত। কবির মনে হয়েছে এ সুর অশরীরী কোন এক আত্মার আহ্বান। যে সুর বিষাদময় হয়ে আকাশ অরণ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সে সুরে কবিচিত্ত আজ দ্বন্দ্বের দোলায় দোলায়িত। কবির মনে হয় অন্ধকার প্রান্তর ভেদ করে ভেসে আসা সুর ডাহুকের নিজের নয়। সে সুরযন্ত্র মাত্র। কোন এক অসীম শক্তির ইশারায় সে সুরযন্ত্র বেজে যায়। কবির মনে হয়, অধ্যাত্ম সাধনায় ডাহুকের মতো একনিষ্ঠতাই কেবল মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।
মন্তব্য : পরম স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে চাইলে হৃদয়কে রাখতে হবে পবিত্র। স্বার্থমুক্ত একনিষ্ঠভাবে শুধু তারই সাধনা করতে হবে।