বৈষ্ণববাদের ঈশ্বরতত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, বৈষ্ণববাদের ঈশ্বরতত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা দাও?
অথবা, বৈষ্ণববাদের ঈশ্বরতত্ত্ব কাকে বলে?
অথবা, বৈষ্ণববাদের ঈশ্বরতত্ত্ব কী?
অথবা, বৈষ্ণববাদের ঈশ্বরতত্ত্বের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর।। ভূমিকা : বৈষ্ণবাদ বাংলার অতি প্রাচীন ভক্তি ধর্মমত যা বিষ্ণু দেবতার আরাধনাকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়। শ্রীচৈতন্যদেবের বহু পূর্ব থেকেই এ মত প্রচলিত ছিল এবং পরবর্তীতে শ্রীচৈতন্যদেবের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছিল। বৈষ্ণববাদে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বৈষ্ণবীয় ঈশ্বরতত্ত্ব তার মধ্যে অন্যতম।
বৈষ্ণববাদের ঈশ্বরতত্ত্ব : বৈষ্ণববাদ একটি ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদ। বৈষ্ণববাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, বৈষ্ণৰ ধর্মমত যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। বৈষ্ণবীয় মতে, মানব সত্তার মৌলিক প্রবৃত্তি হলো জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ এবং প্রেম। তারা মনে করে জ্ঞানযোগে পরম ও সর্বব্যাপী, ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। আবার কর্মযোগেও ঈশ্বরের প্রাপ্তি সম্ভব নয়। কেননা অভাববোধ থেকেই কর্মের উদ্ভব হয়। কিন্তু ঈশ্বরের সাথে প্রয়োজনবোধের ধারণা বা পূর্ণতার সাথে কর্মের প্রত্যাশা সংগতিপূর্ণ নয়। সুতরাং কর্ম বা জ্ঞানযোগ দ্বারা ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। বৈষ্ণব মতে, প্রেম ও ভক্তি যোগেই কেবল ঈশ্বরকে পাওয়া যায়। পরম রসময়, ভাবময়, করুণাময়, প্রেমময় ঈশ্বরকে
পেতে প্রেম ও ভক্তির ভাবসাগরে নিমজ্জিত হতে হবে। বৈষ্ণব ধর্ম মতে, ঈশ্বরে ছয়টি ঐশর্য রয়েছে। যথা : পূর্ণ সৌন্দর্য,পূর্ণ ঐশ্বর্য, পূর্ণ বীর্য, পূর্ণ যশ, পূর্ণ জ্ঞান এবং পূর্ণ বৈরাগ্য। এ ছয়টি ঐশ্বর্য অনন্ত। বৈষ্ণবীয় মতে, ঈশ্বর নির্গুণ নয়, বরং সগুণ। ঐশ্বর্য ও বীর্য দ্বারা জগৎ সৃষ্টি করে ঈশ্বর জগতেই অন্তরীণ হয়ে আছেন। এ কারণে জীব প্রেমকে বৈষ্ণব ধর্মে ঈশ্বর প্রেম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বৈষ্ণব ধর্ম মতে, জগতে ঈশ্বরের তিনটি শক্তি ক্রিয়াশীল- চিৎ শক্তি, জীবশক্তি এবং মায়া শক্তি। চিৎ শক্তি বলে ঈশ্বর জগতে প্রকাশমান এবং প্রজ্ঞাবান; জীবশক্তি বলে ঈশ্বর জীবে লীন এবং মায়া শক্তি বলে ঈশ্বর জগতে অন্তরীণ হয়ে আছেন। এ ত্রিবিধ শক্তি এক ও অভিন্ন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, বৈষ্ণব ধর্মে বর্ণিত ঈশ্বরতত্ত্ব এমন এবং ঈশ্বরের কথা বলে যে ঈশ্বর জ্ঞান বা কর্মে নয় বরং ভক্তির মাধ্যমে পাওয়া যায়। বৈষ্ণবীয় ঈশ্বর জগতেই বিদ্যমান এবং জীব সেবার মধ্য দিয়ে তার সান্নিধ্য লাভ সম্ভব। তিনি জগতের মাঝে আত্মা ও জগত্রপে বিভূতিত হয়েছেন।