বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কী? বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নীতিমালা কী আলোচনা কর ।

অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কাকে বলে? বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূত্রগুলো আলোচনা কর।
অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নীতিমালাসমূহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সংজ্ঞাসহ নীতিমালা আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
বিজ্ঞানী যে পদ্ধতি অনুসরণ করে গবেষণা কার্যক্রম চালান তাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি । বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বিজ্ঞানী প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিষয়াবলি বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরীক্ষিত জ্ঞান দ্বারা মানবকল্যাণে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যান। আর বিজ্ঞানসম্মত ও ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে কিছু কিছু পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়। এসব পদ্ধতিই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নামে আখ্যায়িত ।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি : বিজ্ঞানী যে যৌক্তিক পদ্ধতিতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলি বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তাকেই সাধারণ কথায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে । বস্তুত, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই বিজ্ঞানের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা ও রক্ষাকারী উপাদান।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : নিম্নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কয়েকটি সংজ্ঞা প্রদান করা হলো :
এনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিকাতে উল্লেখ করা হয়েছে, “A collective term denoting the various process by the aid of which the sciences are built up.” অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সকল বিজ্ঞান উঠে। গড়ে
বেরি এফ. এন্ডারসন (Barry F. Anderson) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে ঘটনার বর্ণনা ও ব্যাখ্যাদানের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিধিমালা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়; কর্মোপযোগী সংজ্ঞায়ন, সার্বিকীকরণ, নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ, পুনঃপুন পর্যবেক্ষণ, নিশ্চিতকরণ এবং সঙ্গতিবিধান। এখানে আরো স্পষ্টভাবে আমরা বলতে পারি যে, এ সংজ্ঞাটিতে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের নীতিমালার প্রতিও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
জে. এ. হগস (Prof. J. A. Hughes) এর সংজ্ঞাটির উল্লেখ করা প্রয়োজন। কারণ তিনি বৈজ্ঞানিক নীতিমালা অনুসরণে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর মতে, “বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে পৃথক বা স্বতন্ত্র নিয়মের পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করে দক্ষতাসহকারে উপাত্ত বা জ্ঞান অর্জন করা
জি. এ. ল্যুভবার্গ (G. A. Lundberg) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো তথ্যরাজির এক ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও শ্রেণিকরণ।” উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, দক্ষতার সাথে সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ, জ্ঞান অর্জন, পদ্ধতিগত যৌক্তিক শিক্ষা বা পাঠের জন্য আমরা যে পদ্ধতি ব্যবহার করি তাই হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে জ্ঞান আহরণ কেবল সহজবোধ্যই নয় বরং এর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে একটি নিশ্চয়তা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হয় ।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নীতিমালা : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো কিছুসংখ্যক নীতির সমাহার যার মূল লক্ষ্য হলো সুসংবদ্ধ ও প্রণালিবদ্ধ জ্ঞান প্রতিষ্ঠা করা। প্রায় সকল বিজ্ঞানীই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নীতিমালাগুলো অনুসরণ করে। এ নীতিগুলোই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে সুস্পষ্ট ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে। নিম্নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাধারণ নীতিগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. কার্যকরী সংজ্ঞা প্রদান : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্যতম নীতি হচ্ছে কার্যকরী সংজ্ঞা প্রদান। অর্থাৎ যেসব বিষয় বা ঘটনা বিশ্লেষণযোগ্য সেসব বিষয় বা ঘটনাকে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে, যা সহজে পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করা যায় ।
২. সার্বিকীকরণ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে যে নীতিটি পরিলক্ষিত হয়, তাহলো কোনো বিষয় বা অবস্থার নির্দিষ্ট কোনো অংশকে তুলে না ধরে সার্বিক দিকটি তুলে ধরা হয় । অর্থাৎ একটি সাধারণ সূত্র বা নিয়ম বা সত্যতা উপস্থাপন করা হয় ।
৩. নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি অন্যতম নীতি হলো গবেষণাধীন বিষয় বা ঘটনাকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পর্যবেক্ষণ করা : এক্ষেত্রে বিষয়ের উপর পর্যবেক্ষণকারীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাছাড়া সম্ভাব্য প্রভাব বিস্তারকারী অবস্থানগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে নিষ্ক্রিয় রাখা হয় ।
৪. সঙ্গতিবিধান : সংগৃহীত উপাত্তের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীগণ যে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেগুলো যাতে সঙ্গতিপূর্ণ হয় সেদিকে তারা লক্ষ রাখেন। অর্থাৎ তারা যে সত্য আবিষ্কার করেন সেগুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এগুলোর মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্য ও উল্লম্ফন নেই বলে তারা নিশ্চিত করেন ।
৫. পর্যবেক্ষণের পুনরাবৃত্তি : প্রাপ্ত উপাত্তের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তার নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য পর্যবেক্ষণের পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন হয় । অর্থাৎ স্থান-কাল-পাত্রভেদে বিজ্ঞানীগণ পুনঃপুন পর্যবেক্ষণ করে পূর্বের সত্যতার সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেন । বস্তুত পর্যবেক্ষণের পুনারাবৃত্তির ফলে প্রাপ্ত ফলাফল প্রাথমিক ফলাফলের সত্যতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে ।
৬. নিশ্চিতকরণ : প্রাপ্ত উপাত্তের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীগণ যে স্বতঃসিদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ উপায়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এর সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চান। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষিত বিষয় বা অবস্থাসমূহের মধ্যে একটা কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার প্রয়াস পান। বস্তুত বিজ্ঞানীরা গৃহীত সিদ্ধান্তটি সম্পর্কে পূর্ণমাত্রায় নিশ্চিত হতে চান ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মূলত সুসংঘবদ্ধ জ্ঞান প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচালিত কিছুসংখ্যক নীতির সমষ্টি। নীতিগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সক্ষম করে তোলে । স্থান-কাল পাত্রভেদে প্রায় সব বিজ্ঞানী উপরের উল্লিখিত এসব সাধারণ নীতি অনুসরণ করে চলে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!