বেঙ্গল রেনেসাঁর চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, বাঙালির রেনেসাঁর বৈশিষ্ট্য কী?
অথবা, বাঙালি রেনেসাঁর চারটি বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, বেঙ্গল রেনেসার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
অথবা, বাঙালি রেনেসাঁর বৈশিষ্ট্য চারটি কী কী?
উত্তর।৷ ভূমিকা : বেঙ্গল রেনেসাঁ উনিশ শতকে বঙ্গদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয়। এ পরিবর্তনকে বেঙ্গল রেনেসাঁ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। প্রথমত, কতিপয় ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও মিশনারি এবং স্থানীয় বিজ্ঞজনদের মধ্যে যোগাযোগ-সংশ্লেষের ফলে এ পরিবর্তন দেখা দেয়। এ রেনেসাঁর উদ্ভব কলকাতায় ।
বেঙ্গল রেনেসাঁর চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য : উনিশ শতকের বঙ্গীয় রেনেসাঁকে বাঙালি বিদ্বানেরা পদ্ধতিগতভাবে চারটি স্তরে গড়ে তোলেন। এ চারটি স্তরকে বেঙ্গল রেনেসাঁর চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
প্রথমত, তাঁরা বাংলা গদ্যভাষা ও নতুন বাংলা সাহিত্য সৃষ্টি করেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামকমল সেন, বাংলা ভাষায় তাঁদের সৃজনশীল প্রতিভার ব্যাপক পরিচয় দিয়েছেন যা বাংলা সাহিত্যে রেনেসাঁর বিকাশে সহায়তা করেছিল। মাইকেলের মেঘনাদবধ কাব্য এবং রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিতে যেভাবে ঐতিহ্যের পুনর্ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তাতে এ কাব্য দুটিকে বলা যেতে পারে রেনেসাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। গীতাঞ্জলির ইংরেজি (Song of Offerings) ভাষ্য প্রকাশিত হওয়ার এক বছর পরে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথকে যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
দ্বিতীয়ত, ভারতের স্বর্ণযুগ নামে আখ্যাত ধ্রুপদী যুগের পুনরাবিষ্কার করেন যার সাথে রয়েছে গ্রিস ও রোমের গৌরবময় ঐশ্বর্য্যের সমতুল্যতা সনাক্তকরণ ।
তৃতীয়ত, ভারতীয় বিদ্বানেরা নিজেদের ঐতিহাসিক অবস্থার সাথে শ্রীরামপুরের মিশনারিদের দেওয়া প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন সম্পর্কে নতুন ব্যাখ্যার সাদৃশ্য লক্ষ্য করেন।
চতুর্থত, বৈশ্বিক প্রগতি সম্পর্কে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ধারণায় উপনীত হন যার উপর নির্ভরশীল ছিল তাঁদের প্রত্যাশা। সত্য যে, এ নতুন প্রত্যাশার ধারায় তাঁরা অতীতকে পুনরুদ্ধার করতে অনাগ্রহী কিন্তু ভবিষ্যতের মধ্যে স্বর্ণযুগকে তুলে ধরতে সচেষ্ট।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচ্যবিদেরা ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেন। তাঁরা আঞ্চলিক ইতিহাস ছাড়াও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছেন প্রাচীন ইতিহাসের দিকে। তাঁদের প্রচেষ্টাতেই উনিশ শতকে বঙ্গদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্রসহ আধুনিক বাঙালি মনীষীদের কেউ কেউ জ্ঞানালোকের এ সময়টাকে অভিহিত করেছেন বাঙালির রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বলে।