Answer

বেগম রোকেয়ার সময় নারী সমাজের অবস্থা কিরূপ ছিল?

অথবা, “বেগম রোকেয়া সময় নারী সমাজ ছিল অনগ্রসর”- সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বেগম রোকেয়ার সময়ের দুর্দশা গ্রন্থ, অনগ্রসর নারী সমাজের বর্ণনা দাও।
উত্তর।৷ ভূমিকা:
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলার নারী জাগরণে তাঁর অসামান্য অবদান তাঁকে ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়। দর্শন, সমাজবিজ্ঞান সাহিত্যে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি পুরুষের পাশাপাশি নারীরও সার্বিক বিকাশের কথা বলেন। সমাজের সার্বিক কল্যাণ অর্জনের জন্য শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে নারী সমাজের উন্নতি সাধনের মহান ব্রতে তিনি নিজে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ মহান বিদুষী নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
নারীসমাজের অবস্থা : রোকেয়ার আবির্ভাবের সময় নারীসমাজের অবস্থা নিম্নরূপ।
১. গৃহবন্দি নারী : বেগম রোকেয়ার জন্মলগ্ন সে ছিল এক অন্ধকার যুগ। নারী ছিল পুরুষশাসিত সমাজে অবহেলিত, নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত। নারীদের অধিকার বলতে কিছুই ছিল না। তারা ছিল পুরুষদের হাতের পুতুল। তারা যেভাবে রাখবে সেভাবেই থাকতে হবে। নারীদের কোন সত্তা, নিজস্ব কোন মূল্যবোধ ছিল না। তারা এতটাই অসহায় ছিল যে মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। সে যুগে নারীরা ছিল ঘরে বন্দি।
২. কুসংস্কারে নিমজ্জ্বিত মুসলিম সমাজ : মুসলিম সমাজে নানারকমের কুসংস্কার বাসা বেঁধেছিল। অশিক্ষা, অজ্ঞানতা ও
রূপমণ্ডূকতার ছিল অপ্রতিহত প্রভাব। মেয়েদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে শোচনীয়। ন্যূনতম শিক্ষার কোন সুযোগ ছিল না।
৩. পর্দা প্রথা : পর্দা প্রথার নামে কঠোর অবরোধ প্রথা চালু ছিল। সেকালে শুধু পুরুষ মানুষ নয়, মেয়ে মানুষের সামনেও পর্দা পড়তে হতো। অবিবাহিতা মেয়েদের অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বাড়ির চাকরানী ছাড়া অপর কোন স্ত্রীলোক দেখতে পেত না। পর্দা প্রথার নামে মুসলিম সমাজে কার্যত অমানবিক অবরোধ প্রথা চালু ছিল। নারী ছিল প্রকারান্তরে ঘরে বন্দি। পবিত্র কুরআন শরীফে নির্দেশিত পর্দা প্রথার সাথে ব্রিটিশ ভারত তথা বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে প্রচলিত অবরোধ ব্যবস্থার কোন সম্পর্ক ছিল না। বেগম রোকেয়ার শৈশবে নারীকে গৃহিবন্দিনী করে রাখার ব্যবস্থার কঠোরতার জন্যই আল্লাহর দান সূর্যের অকৃপণ আলো এবং মুক্ত বাতাস থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। ঘর আর উঠান ছাড়া বাইরের জগতের কোনকিছু দেখার সৌভাগ্য তাদের ভাগ্যহত জীবনে খুব কমই ঘটত। কঠোর অবরোধে থাকার দরুন শুধু শিক্ষা থেকেই নয়, জীবনের বহু বিচিত্র নিক যেমন- স্বাস্থ্য এবং মনের প্রফুল্লতা ও স্বাচ্ছন্দ্য বিকাশ থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছিল।
৪. অবরোধ প্রথায় অভিশাপ : ঊনবিংশ শতাব্দীতে অবরোধ প্রথার অভিশাপে মুসলিম নারীসমাজের স্বাধীন বিকাশের সমস্ত পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। নারী ছিল সমাজের বোঝাস্বরূপ। সে অন্ধকারময় যুগে পর্দার নামে অবরোধ প্রথাই ছিল মুসলমান নারীসমাজের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। বেগম রোকেয়ার ভাষায়, “আমরা বহুকাল হতে অবরোধে থাকিয়া অভ্যন্ত হইয়া গিয়াছি। সুতরাং অবরোধের বিরুদ্ধে বলবার আমাদের বিশেষত আমার কিছুই নাই।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলার নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার অবদান নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয়। তিনি ছিলেন বাংলার নারীমুক্তি ও নারীকল্যাগের প্রথম উদ্যোক্তা। মুসলমান নারীসমাজকে তিনিই সর্বপ্রথম মুক্তিমন্ত্রে উজ্জীবিত করেন। তিনিই প্রথম মুক্তিপথে বাংলার মুসলমান নারীসমাজকে আলোর দিশা দেখিয়েছেন। বেগম রোকেয়াই বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার ইহলোক ত্যাগের অর্ধশতাব্দীকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এদেশের নারী জাগরণ তথা দেশ ও জাতির ইতিহাসে তাঁর অবদান অমলিন হয়ে আছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!