অথবা, অন্যান্য দেশের শিক্ষা আন্দোলন সম্পর্কে বেগম রোকেয়া কী বলেছেন?
অথবা, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষা আন্দোলনকে বেগম রোকেয়া কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
অথবা, বিভিন্ন শিক্ষা আন্দোলন সম্পর্কে বেগম রোকেয়ার অভিমত লেখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা : বেগম রোকেয়া যে বংশের কন্যা তা ‘সাবির’ বংশ খ্যাত। তাঁর পিতার পুরো নাম মুহম্মদ নূহ সাবের আবুল কামু সাবের জহিরুদ্দিন মুহম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের। বেগম রোকেয়ার মায়ের নাম রাহাতান্নেছা সাবেরা চৌধুরানী। তিনি ঢাকার বলিয়াদীর জমিদার হোসেন উদ্দিন চৌধুরী সাহেবের কন্যা। বেগম রোকেয়া উনিশ শতকের শেষভাগে ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অন্তর্গত পায়রাবন্দ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়েছিল ভারতের বিহার প্রদেশের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর স্বামীর নাম সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বিহার প্রদেশের ভাগলপুরের অধিবাসী ছিলেন।
বিদেশে শিক্ষা আন্দোলন ও বেগম রোকেয়ার মনোভাব : স্বদেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে বেগম রোকেয়া জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। অন্তরের ঐ একই প্রেরণায় তিনি বিদেশে শিক্ষা আন্দোলন ও সামাজিক সংস্কারকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। আফগানিস্তানের ইতিহাসে বাদশাহ আমানুল্লাহর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থা থেকে আধুনিক সমাজব্যবস্থার উত্তরণে তিনি দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হয়েছিলেন। বাদশাহ স্বদেশের উন্নতির জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন যেমন তিনি দশ বৎসরের মধ্যে কাবুলের গুলজার করে তুললেন। তিনি রাস্তা তৈরি করলেন, ইমারত নির্মাণ করলেন, মোটর চালালেন, বৈদ্যুতিক তার লাগালেন, উদ্যান প্রস্তুত করলেন, হাসপাতাল স্থাপন করলেন। আধুনিক জগতের সকল প্রকার জ্ঞানবিজ্ঞান ও সমৃদ্ধি দ্বারা কাবুলকে গৌরবময় করে তোলাই ছিল বাদশাহর একান্ত আকাঙ্ক্ষা। তিনি তদুদ্দেশ্যে নিজের দেশ থেকে বেছে বেছে তরুণদের শিক্ষালাভের জন্য ইউরোপে পাঠালেন, যাতে তাঁরা নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং, খনির কাজ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষালাভ করে ফিরে আসতে পারে এবং যাতে নিজের লোকরাই কাজ করতে পারে। কাবুলে ৬টি বালিকা বিদ্যালয় স্বয়ং মহারানী মুরাইয়া স্থাপন করেছিলেন। স্বয়ং মহারানী মেয়েদের পরীক্ষা নিতেন এবং যখন তখন স্কুল পরিদর্শন করতে যেতেন। এ স্কুলে যারা ভর্তি হতো তাদের মধ্যে গরিব মেয়েদের জোড়া জোড়া কাপড় এমনকি জুতা পর্যন্ত মহারানী দিতেন। বাদশাহ স্বয়ং প্রত্যেক মেয়েকে রাজকোষ হতে বৃত্তি দিতেন, যাতে লোকে কাপড় ও বৃত্তির লোভে মেয়েকে পড়ায়। বাদশাহ স্ত্রীলোকদের ইউরোপ ও তুরস্কে পাঠিয়েছেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য যাতে দেশের শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাইরের শিক্ষার আনার প্রয়োজন না হয়। আফগানিস্তানের ইতিহাসে কূপমণ্ডূকতার হাত থেকে আফগান জাতিকে মুক্ত করার জন্য তিনি যে প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন তা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। আপামর আফগান নারী-পুরুষের মধ্যে বাদশাহ আমানুল্লাহ শিক্ষা প্রচারের উদ্যোগী হয়েছিলেন বলে বেগম রোকেয়ার অন্তরের গভীর সহানুভূতি
ছিল তাঁর প্রতি। এ কারণে বাদশাহ আমানুল্লাহর প্রমাতা কোম তয়জীর সাথে সাক্ষাৎ সম্পর্কিত উর্দু ভাষায় রচিত নিবন্ধটি দেশবাসীর মধ্যে প্রচারের ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষায় তিনি মাতৃভাষায় অনুবাদে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলমান নারী জাগরণের অগ্রদূতী পুণ্যময়ী নারী। তিনি শুধু নিজের দেশের নারীর মুক্তির কথা চিন্তা করেন নি। তিনি সমস্ত বিশ্বের নারীর মুক্তির কথা চিন্তা করেছেন, নারীমুক্তির জয়গান করেছেন। তাঁর এ অবদান কোনদিন অম্লান হবার নয়। তিনি সর্বদা ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল জ্যােতিষ্ক হয়ে থাকবেন।
Leave a Reply