Answer

বাঙালি দর্শনে মহাভারতের প্রভাব কীরূপ?

অথবা, মহাভারত কিভাবে বাঙালি দর্শনে প্রভাব বিস্তার করেছে সংক্ষেপে তা আলোচনা কর।
অথবা, বাঙালি দর্শনে মহাভারতের প্রভাব সম্পর্কে লিখ।
অথবা, “বাঙালি দর্শনে মহাভারতের প্রভাব রয়েছে”- সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাঙালি দর্শনে মহাভারতের প্রভাব সম্পর্কে তোমার অভিমত দাও।
উত্তর।। ভূমিকা :
বাঙালি দর্শনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। বিভিন্ন যুগে বাঙালি দর্শনে বিভিন্ন ধর্মের চিন্তাভাবন প্রভাব বিস্তার করেছে। সনাতন ধর্মের নানা গ্রন্থে বর্ণিত দার্শনিক চিন্তাধারা বাঙালি দর্শনের প্রাথমিক যুগের দর্শনচর্চার অন্যতম উপাদান। এ রূপই একটি দার্শনিক তত্ত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ হলো মহাভারত। বাঙালির ধ্যানধারণা, চিন্তা মশন, ভাবধারা,মতামত, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে মহাভারতের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
বাঙালি দর্শনে মহাভারতের প্রভাব : মহাভারতের মূল উপজীব্য হলো মানুষ। মানবজীবনের সকল দিক, যেমন- মানবজীবনের উদ্দেশ্য, পরিণতি, আদর্শ, প্রকৃতি প্রভৃতির আলোচনা করা হয়েছে মহাভারতে। বাঙালি দর্শনে মহাভারতের প্রভাব নিম্নরূপ।
১. মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব : মহাভারতে মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব বলা হয়েছে। মানুষের সাথে বা জীবনের সাথে সম্পর্কিত মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক বা পারলৌকিক সকল বিষয়ই মহাভারতের আলোচনায় এসেছে।
২. নৈতিকতা : মহাভারতে নৈতিকতাকে ধর্মের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। নৈতিক বর্জিত সমাজ আনন্দহীন শ্রীহীন।
৩. সার্বিক কল্যাণ : মহাভারতে সকলের সার্বিক কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। মহাভারতে নশ্বর জীবের বাসভূমি এ অথত জগৎকে আত্মনির্ভরশীল দেহ বলে বিবেচনা করা হয়েছে।
৪. মানবিক উৎকর্ষতা: মহাভারতে কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যকার যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করা হলেও এর মধ্যে রয়েছে মানবিক গুণাবলি চর্চার নির্দেশনা। সংযম, ক্রোধ ও ঘৃণা থেকে মুক্তি এবং বৃহত্তর কল্যাণে ও সত্য প্রতিষ্ঠায় একনিষ্ঠতা অনুসরণ মানবিক উৎকর্ষতা সাধনেরই উপায় নির্দেশক।
৫. সামাজিক ন্যায়বিচার : মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে, “তোমার কাছে যা অপ্রীতিকর, অন্যের প্রতি তা প্রয়োগ করো না।…….. যা সমাজের মঙ্গল বিধান করে কিংবা যার জন্য তোমার লজ্জিত হবার সম্ভাবনা আছে। এমন কাজ করো না।”
৬. মানব প্রকৃতি : মহাভারতে মানুষের প্রকৃতিকে তিনটি গুণের সমন্বয় বলা হয়েছে। যথা : সত্ত্ব, রজঃ এবং তমঃ এ তিনটি গুণের তারতম্যের কারণেই মানুষ বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
৭. মোক্ষ তত্ত্ব : মহাভারতে মোক্ষ বলতে এমন একটি অবস্থাকে নির্দেশ করা হয়েছে যা স্বরূপত রহস্যঘন। মোক্ষ হলো এমন অবস্থা যেখানে ধর্ম, অর্থ ও কামের ঊর্ধ্বে উঠে তাদের উপর সম্যক কর্তৃত্ব লাভ করা যায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, মহাভারত মানুষের উপর সঠিক গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং কি করে মানুষের জীবনের প্রকৃত কল্যাণ লাভ করা যায় তার দিকনির্দেশনা রয়েছে। পণ্ডিতদের মতে,বেদোপনিষদের আত্মতত্ত্বের প্রতিধ্বনি লক্ষ করা যায় মহাভারতে। বাঙালি দর্শন বিকাশে মহাভারতের অবদান অস্বীকার করা যায় না।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!