Answer

বাঙালি দর্শনে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অবদান কী?

অথবা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের গুরুত্ব কী?
অথবা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের ভূমিকা কী?
অথবা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের তাৎপর্য কী?
অথবা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রভাব কী?
উত্তর।৷ ভূমিকা :
বাঙালি দর্শনের অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন মনীষীর অবদান রয়েছে। তারা তাদের সুচিন্তিত মতামত। করা যায়। তেমনই একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা হলো মুসলিম সাহিত্য সমাজকেন্দ্রিক বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। এ আন্দোলনের দ্বারা বাঙালি দর্শনকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাঙালি দর্শনের অগ্রযাত্রায় ব্যক্তিগত অবদানের পাশাপাশি সংগঠিত প্রচেষ্টাও লয় মাধ্যমে যে দর্শন চর্চার সূত্রপাত তা ছিল যুক্তিবাদী, উদারতাবাদী এবং মানবতাবাদী দর্শন।
বাঙালি দর্শনে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অবদান : বাঙালি দর্শনে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। নিম্নে প্রশ্নের আলোকে বাঙালি দর্শনে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রধান প্রধান অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. যুক্তিবাদিতা : বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ আন্দোলনের সদস্যরা ছিল যুক্তিবাদী এবং সকল গোঁড়ামি ও কুসংস্কার বিরোধী। তাঁরা তাঁদের দর্শন ও সাহিত্যে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁরা নিজস্ব প্রজ্ঞা ব্যবহার করে যুক্তির আলোকে সবকিছু গ্রহণ করেছেন যা তাঁদের যুক্তিবাদী দর্শনের ভিত্তিকে আরো সুদৃঢ় করেছে। তাঁরা প্রাচীন ঐতিহ্যের অপ্রয়োজনীয় ধ্যানধারণাকে বাদ দিয়ে আসল রূপটির সাথে বিজ্ঞান মনস্কতার সমন্বয় ঘটিয়ে দর্শন রচনা করেন, যা বাঙালি দর্শনকে যুক্তিবাদিতার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছে।
খ. উদারতাবাদ : মুসলিম সাহিত্য সমাজ বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রাণ কেন্দ্র হলেও প্রজ্ঞাবান যেকোন আদর্শ ও ধর্মের অনুসারী ব্যক্তিই তার সদস্য হতে পারতো। মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রতিটি সদস্য ছিলেন উদার। তারা উদারনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন। মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রথম অধিবেশনে দুই বাংলার, দুই ধর্মের প্রজ্ঞাবানদের অপূর্ব সম্মিলন ঘটে। তারা কোন গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সমগ্র জাতির কল্যাণের কথা ভেবেছেন। “বুদ্ধির মুক্তি” ধারণাটিকে তাই কোন বিশেষ শ্রেণির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি। তাদের বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন পরবর্তী দার্শনিক সম্প্রদায়ের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করেছে।
গ. মানবতাবাদ : বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সদস্যরা সাহিত্যিক ও দার্শনিক আলোচনায় সক্রিয় থাকলেও তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মানব কল্যাণসাধন করা। এজন্য তারা সমাজকে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে বের করে প্রগতির দিকে নিয়ে যেতে সচেষ্ট ছিলেন। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম সদস্য আবুল হোসেন জনগণের অর্থনৈতিক উন্নতির কথা বলেন। কারণ অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যতীত প্রকৃত মানব কল্যাণ অর্জন সম্ভব নয়। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রতিটি সদস্যই মানব কল্যাণকে মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে তাদের সাহিত্য ও দর্শন রচনা করেন।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বাঙালি দর্শনে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন এক যুগান্তকারী আন্দোলন। পাশ্চাত্য ও নিজস্ব চিন্তা চেতনার সমন্বয় ঘটিয়ে তারা যে দর্শন রচনা করেন তা যুক্তিবাদিতা, উদারত এবং মানবতাবাদের পথকে আরো প্রশস্ত করেছে। তাদের চিন্তা চেতনাতেও তার প্রকাশ ঘটেছে। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রভাব আমরা পরবর্তী বাঙালি দার্শনিকদের মধ্যে লক্ষ্য করি। বাঙালি দার্শনিকদের চিন্তা ও মননে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রভাব অনস্বীকার্য।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!