বাঙালি দর্শনের স্বরূপ নিরূপণ কর।

অথবা, বাঙালি দর্শনের প্রকৃতি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাঙালি দর্শনের স্বরূপ কী?
অথবা, বাঙালি দর্শনের প্রকৃতি কী?
অথবা, বাঙালি দর্শনের প্রকৃতি বা স্বরূপ কী?
উত্তর।৷ ভুমিকা :
অন্যান্য প্রাগ্রসর অনেক জাতির মতো বাঙালিরও দর্শন-চিন্তার ঐতিহ্য আছে; আছে ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস। অন্যান্য জাতির দর্শন যেমন- গ্রিক দর্শন, ইউরোপীয় দর্শন, ভারতীয় দর্শন ইত্যাদি সম্পরে আছে নিজস্ব চিন্তাভাবনার ঐতিহ্য তেমনি বাঙালি দর্শনেরও আছে মনন সাধনার তত্ত্বীয় সমাচার।
বাঙালি দর্শনে স্বরূপ : বাঙালি দর্শনের স্বরূপ নিম্নরূপ :
১. পৌরাণিক কাহিনী, ধর্ম ও দর্শন : বাঙালি দর্শন মূলত প্রাচীন ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীর উপর নির্ভর করে পড় উঠে। এর সাথে সাথে আছে ধর্মের প্রভাব ও দর্শনের অবস্থানও দৃঢ়। প্রাচীন গ্রীসের দর্শনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তব, ধর্ম ও পৌরাণিক কাহিনীকে বাদ দিয়ে দর্শন চর্চা শুরু করেন। কিন্তু বাঙালি দর্শন পৌরাণিক কাহিনীকে বাদ দিতে পারে নাই।
২. মানবতাবাদের প্রাধান্য : ইতিহাস অনুসন্ধান করলে যেখা যায়, অন্যান্য জাতির মতো বাঙালি দর্শনচিন্তা ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে বিকাশ সাধন হয়। বাঙালি দর্শনের মূল উপজীব্য হলো মানুষ। বাঙালি দর্শনচিন্তা বিভিন্নভাবে বিকশিত হলেও মানবতত্ত্বের যে দিকটি সার্থক জীবন দর্শনের স্বরূপ লক্ষণের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। এ দর্শনে মানুষের সর্বাধিক কল্যাণের উপর প্রাধান্য দিয়েছে।
৩. বাঙালি দর্শন উপনিষদ ভিত্তিক : বাঙালির উৎপত্তির ইতিহাস যেমন সনাতন তেমনি বাঙালি দর্শনও সনাতন। কেননা বাঙালি দর্শন উপনিষদ দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। উপনিষদ পরমসত্তার উপর নির্ভরশীল। আর এ পরমসত্তা এক ও অদ্বিতীয় ।
৪. বাঙালি দর্শন উদার : বাঙালি দর্শন উদারনীতি সম্পূর্ণ। কেননা তারা তাদের মূলকে অস্বীকার করে না। অর্থাৎ তাদের মূল হচ্ছে বেদ। তারা বেদের মূলনীতিগুলো গ্রহণ করে তাদের দর্শন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। এতে বোঝা যায় বাঙালি দর্শন উদারনীতির পরিচয় বহন করে।
৫. সমষ্টিগত চিন্তাধারা : বাঙালি দর্শন একক চিন্তাধারার দর্শন নয়, এটা সমষ্টিগত চিন্তাধারার দর্শন। বাঙালি দর্শনে সুফিবাদ, দেহতত্ত্ব, বাউল তত্ত্ব, বৈষ্ণবতত্ত্ব, বেদান্ত দর্শনতত্ত্ব, জ্ঞানবিদ্যা, যুক্তি ইত্যাদি আলোচনা করা হয়।
৬. বাঙালি দর্শন এক ঈশ্বরবাদী : বাঙালি দর্শন এক ঈশ্বরবাদী। কেননা এ দর্শন মনে করে মানুষের সবকিছু পরম সত্তার উপর নির্ভরশীল । মানুষের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ সবকিছু পরমসত্তা নিয়ন্ত্রণ করে।
৭. লোকায়ত দৰ্শন : বাঙালি দর্শনকে লোকায়িত দর্শন বলা হয়। কেননা এ দর্শন সাধারণ মানুষের জীবন ও চেতনা নিয়েই এর পরিব্যাপ্ত । এটা যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষের চিন্তাচেতনা আলোচনা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙালি দর্শন বাঙালি মানুষের দর্শন। যা বাঙালি ঐতিহ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি করেছে। বাঙালি দর্শনকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে যারা বিশেষভাবে ভূমিকা রাখেন। তারা হচ্ছেন ড. জি.সি. দেব, ড. আমিনুল ইসলামসহ অনেক দার্শনিক, বাঙালি জীবনের দর্পণ বাঙালি দর্শন।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!