বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, বাঙালি দর্শনের কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে?
অথবা, বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।
অথবা, বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
অথবা, বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
পৃথিবীর অন্যান্য জাতির ন্যায় বাঙালির একটি নিজস্ব দর্শন রয়েছে। অবিভক্ত বাংলাকে কেন করে বাঙালি দর্শন বিকশিত হয়েছে। বাঙালি জাতির নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি স্বতন্ত্র চিন্তা চেতনার এক সমন্বিত রূপ হলে বাঙালির দর্শন।
বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্য : পৃথিবীর প্রতিটি দর্শনেরই নিজস্ব কতকগুলো স্বতন্ত্র গুণাবলি রয়েছে। বাঙালি দর্শনও এর ব্যতিক্রম নয়। নিচে বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধারা হলো :
১. জড়বাদ : বাঙালি দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি জড়বাদী দর্শন। অনার্যরা এদেশে এসে জড়বাদী দর্শনের উত্থান ঘটায়। এ দর্শন আত্মাধিক কোনকিছুকে স্বীকার করে না।
২. অধ্যাত্মবাদ : বাঙালি দর্শনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো আধ্যাত্মবাদ । প্রাচীনকালে আর্যরা অধ্যাত্মবাদের সূচনা করে। মূলত অনার্য ও চার্বাক সম্প্রদায়ের বস্তুবাদী দর্শনের বিরোধিতা করে অধ্যাত্মবাদী দর্শন বিকাশ লাভ করে।
৩. ধর্ম প্রভাবিত দর্শন : বাঙালির দর্শন ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইসলাম ধর্মের মানবতাবাদ, বেদের কর্মবাদ, জন্মান্তরবাদ, বৌদ্ধদর্শনের অনাত্মবাদ, জৈন দর্শনের স্যাদবাদ বাঙালি দর্শনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৪. মুক্তচিন্তা : বাঙালি দর্শন ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হলেও এখানে মুক্তচিন্তা বিশেষ বিরোধিতার সম্মুখীন হয়নি। বেঙ্গল রেনেসাঁ তার বড় প্রমাণ। বেঙ্গল রেনেসাঁয় ধর্মকে ত্যাগ না করেও বাঙালির চিন্তা চেতনায় মুক্ত চিন্তার প্রসার ঘটে।
৫. ভাববাদী দর্শন : বাঙালি দর্শন ভাববাদী দর্শন। ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও ভাববাদ বিকশিত হয়েছে। ড. জি. সি দেব, ড. আমিনুল ইসলামের চিন্তাভাবনায় ভাববাদের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায় ।
৬. মানবতবাদী দর্শন : বাঙালি দর্শন মানবতাবাদী দর্শন। ড. জি সি দেব বলেছিলেন যথার্থ দর্শনই মানবতাবাদী দর্শন। যথার্থ দর্শন জীবনের সাথে সম্পর্কিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, এদেশ মানবের দেশ, প্রাণের নামে, মানবতার নামে দাবি করলে এখানে সাড়া মিলবে। চণ্ডীদাস বলেছিলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। সুতরাং বাঙালি দর্শন মানবতাবাদী দর্শন ।
৭. উপযোগবাদী দর্শন : বাঙালি দর্শনে উপযোগবাদেরও বীজ নিহিত আছে। উপযোগবাদে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ সুখ কামনা করা উচিত। বাঙালি দর্শন এ নীতি দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
৮. নিরীশ্বরবাদ : বাঙালি দর্শনে নিরীশ্বরবাদী ধারাও দেখতে পাওয়া যায়। যেমন চর্বাক সম্প্রদায় ছিল নিরশ্বরবাদী। আর বৌদ্ধ ও জৈনরাও অনেকাংশে নিরীশ্বরবাদী মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।
৯. সমন্বয়ীভাববাদ : বাঙালি দর্শনে সমন্বয়ীভাববাদের ধারাও দেখতে পাওয়া যায়। এ দর্শনে একই সাথে ভাবাদ ও বস্তুবাদকে স্বীকার করা হয়। ড. জি সি দেব সমন্বয়ী ভাববাদের অন্যতম প্রবক্তা।
১০. মার্কসবাদ : বাঙালি দর্শনকে বলা হয় মার্কসবাদী দর্শন। কেননা এ দর্শন মেহনতী মানুষের জয়গান করে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙালি দর্শনে বস্তুবাদ, ভাববাদ, মানবতাবাদ, নিরীশ্বরবাদ, জড়বাদ, অধ্যাত্মবাদ ও মুক্তচিন্তার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। এজন্য বাঙালি দর্শনকে সমন্বয়ী দর্শন বলা হয়।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!