বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় দাও।
অথবা, নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে বাঙালির পরিচয় দাও।
অথবা, নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে বাঙালির উদ্ভব ও বিকাশ সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর।। ভূমিকা :
প্রাচীনকাল থেকে বঙ্গ বা বাঙলা বা বাংলা ভূখণ্ডে সভ্যতার বিকাশ হয়েছে বলে জানা যায়।ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছে। ফলে বাঙালি রক্তের সাথে অন্যান্য জাতির রক্তের সংমিশ্রণে সংকর জাতিতে পরিণত হয়েছে, আর তাই বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় জটিল প্রকৃতির।
বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় : কোনো জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্ধারণের জন্য তাদের দৈহিক বা আঙ্গিক কাঠামো পরিমাপ করার প্রয়োজন হয়। যেমন- দৈহিক উষ্ণতা, মাথার আকৃতি, নাকের আকৃতি, মুখের আকৃতি, নাকের উচ্চতা, দেহের বর্ণ, চোখের পাতার ভাজ, চুলের প্রকৃতি ও বর্ণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ, পরিমাণ ও বিশ্লেষণ করে কোনো সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্ধারণ করা হয়।বাঙালি জাতির মধ্যে নেগ্রিটো, আদি অস্ট্রেলীয় ও মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ ঘটেছে সর্বাধিক। হার্বার্ট রিজলি মনে বাঙালি হলো মঙ্গোলীয় দ্রাবিড়ীয় উপাদানের আনুপাতিক অন্তমিলনের ফল।ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, উত্তরভারতীয় আদি আর্য জাতি, দ্রাবিড় জাতি, গোল মাথা বিশিষ্ট আলপাইনীয় জাতি ও মোঙ্গলীয় জাতির আনুপাতিক সংমিশ্রণে বাঙালি জাতির উদ্ভব হয়েছে। পরবর্তীতে তুর্কি, আরব,পাঠান, মুঘল, মগ, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ইংরেজ জাতির সংমিশ্রণে বাঙালি জাতি বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে।ড. নীহাররঞ্জন রায় বলেন, নরতত্ত্বের দিক থেকে বাঙলার জনসমষ্টি মোটামুটি দীর্ঘমুণ্ড প্রশস্ত নাস আদি অস্ট্রেলীয় বা
কোলিড দীর্ঘমুণ্ড, দীর্ঘ ও মধ্যোন্নত নাস মিশর এশীয় বা মেলানিভ এবং বিশেষভাবে গোলমুণ্ড, উন্নত নাস, অ্যালপাইন বা পূর্বব্র্যাকিড এই তিনজনের সমন্বয়ে গঠিত। এর পাশাপাশি নিগ্রোবটু রক্তেরও স্বল্প প্রভাব উপস্থিত।টি.এস. জয়েসের মতে, মধ্য এশিয়ার তরু-মকান মরুভূমির চারদিকে যারা বসবাস করতো তাদের মস্তক চওড়া এবং এরা আর্য-ইরানি ভাষা ব্যবহার করতো। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের হিন্দু-আফগান জাতিও আর্য-ইরানি ভাষা ব্যবহার করতো, এদের মাথা ততটা চওড়া নয়। মধ্যম করোটি এ দুই জাতির সংমিশ্রণের ফল। এ দুই ধরনের করোটির সংমিশ্রণেই বাঙালি জাতির উদ্ভব। রাম প্রসাদ চন্দ্ৰ ‘Indo Aryan Races’ গ্রন্থে বলেন, পামির ও টাকলামান অঞ্চলের অধিবাসীদের হোমো-আলপাইন্স বলা হয়। এরাই বাঙালির আদি পুরুষ। এরা আর্য ভাষা ব্যবহার করলেও তারা আর্য জাতি থেকে পৃথক ছিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, বাঙালি জাতির উৎপত্তি তথা নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে তাদের সকলের মতামত যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা সবাই বাঙালিকে সংকর জাতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%a6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*