বাঙালির দর্শন বলতে কী বুঝ?
অথবা, বাঙালির দর্শন কী?
অথবা, বাঙালির দর্শন কাকে বলে?
অথবা, বাঙালির দর্শনের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, বাঙালির দর্শন সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর।৷ ভূমিকা : দৈহিক গঠন, ভৌগোলিক আবাসভূমি, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতেই জাতি গঠিত হয় । ঠিক তেমনি করে বাঙালি নামক একটি জাতি গঠিত হয়েছে। বাঙালি একটি প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ জাতি। এদিক থেকে বিবেচনা করলে একটি বিশেষ দৈহিক গঠনের অধিকারী আদি বঙ্গদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানবগোষ্ঠীই বাঙালি জাতি। অন্যদিকে, দর্শন যেহেতু দৃষ্টির ব্যাপার, তাই স্রষ্টায় মতভেদ থাকাটাই স্বাভাবিক। সাদামাটা কথায় ভাষাভিত্তিক জাতিতত্ত্ব ও কৃষ্টিতত্ত্বে যাঁরা বিশ্বাস করেন তারা এতদঞ্চলের দর্শনকে বাঙালির দর্শন বলতে আগ্রহী।
বাঙালির দর্শন : যাঁরা বাংলায় কথা বলেন, আবহমান বাংলার সংস্কৃতিতে যারা চিন্তা-চেতনা ও মনন সাধনা করেন তাঁদের দর্শনই হলো বাঙালির দর্শন। বাঙালির দর্শন সম্পর্কে অনেকে নৈরাশ্যজনক কথা বলে থাকেন। অন্যদিকে আধুনিককালের “জাতীয়তাবাদ” নামক তত্ত্বে যারা বিশ্বাসী, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক ভৌগোলিক সীমারেখায় প্রাচীনকাল হতে অদ্যাবধি যে দর্শন বিকাশ লাভ করেছে, তাঁরা যে দর্শনকে দেশের নামে ‘বাংলাদেশ দৰ্শন’ বলতে আগ্রহী। খ্রিস্টপূর্ব দশ হাজার বছর পূর্বে শুরু হওয়া আদি অনাৰ্যসভ্যতাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে আজ পর্যন্ত যে বিবর্তিত বাঙালি জাতিসত্তার পত্তন হয়েছে তার ইতিহাসই হচ্ছে বাঙালি দর্শনের ইতিহাস। তাই আমরা বলতে পারি যে, “বাঙালি জাতির বিবর্তনের ইতিহাসে জগৎ ও জীবনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সমস্যাবলির স্বরূপ অন্বেষণ ও সমাধানকল্পে যুক্তি, বুদ্ধি, মনন ও বিচার বিশ্লেষণের যে প্রয়োগ ও ফলাফল আমরা দেখতে পাই তাই বাঙালির দর্শন।”
নিম্নে কয়েকজন প্রথিতযশা পণ্ডিত ব্যক্তির বাঙালি দর্শনের সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
অধ্যাপক শরীফ হারুন মনে করেন, “বাংলায় যেসব চিন্তাধারা দেশ, জাতি ও জনগণের সমস্যা, সমস্যার প্রকৃতি এবং সমাধান খুঁজেছে জগৎ ও জীবনের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের ভিত্তিতে দর্শনের ক্ষেত্রে তাই বাঙালির দর্শন।”
ড. আবদুল হাই ঢালী বলেন, “প্রাক বৈদিক চিন্তাধারার, বৈদিক চিন্তাধারা, বেদবিরোধী চিন্তাধারা, ইসলামি চিন্তাধারা, দেশজ মরমিতত্ত্ব এবং পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ ও বিচারধর্মী চিন্তাধারা এ ৬টি চিন্তাধারার সমন্বয়ে বাঙালির যে দার্শনিক ভাব গড়ে উঠেছে তাকেই বাঙালির দর্শন বলা হয়।”
ড. প্রদীপ কুমার রায় এর মতে, “ যে প্রজ্ঞাময় দর্শন বাংলার আবহমানকালের বিশাল পটভূমিতে প্রাগৈতিহাসিক কাল
থেকে এ সময় পর্যন্ত বিবর্তিত হয়েছে তাই বাঙালির দর্শন ।”
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, বাঙালির পুরানো ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক চিন্তাধারার বিভিন্ন মালমশলা মিলেই তৈরি হয়েছে বাঙালির দর্শন।