Answer

বাউল দর্শনে গুরুবাদ লিখ।

অথবা, বাউল দর্শনে গুরুবাদ সম্পর্কে যা জান লিখ ।
অথবা, বাউল দর্শনে গুরুবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, বাউল দর্শনে গুরুবাদ কী?
অথবা, বাউল দর্শনে গুরুবাদ কাকে বলে?
অথবা, বাউল দর্শনে গুরুবাদের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
বাউল বাংলার একটি লোকজ সম্প্রদায়। বাংলার এক শ্রেণির অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, একতারা আশ্রয়ী, ভাববিদ্রোহী গায়ক, স্বাধীন ও সমন্বয়মূলক মরমী সাধকের নাম বাউল। বাউল শব্দের মূল শব্দ বাতুল। বাতুল বলতে সাধারণ পাগল বা উন্মাদ শ্রেণির লোককে বুঝায়। বাউলরা সংসার বিরাগী ভাবের বা প্রেমের পাগল, তাঁরা কোনো অবস্থাতেই মস্তিষ্ক বিকৃতিজনিত পাগল নয়। মস্তিষ্ক বিকৃতিজনিত পাগল (abnormal person) আর ভাবের পাগল বা প্রেমের পাগল এক কথা নয়। বাউলরা মস্তিষ্ক বিকৃত নয়। তাঁরা সাধক। তাঁরা প্রেম বা ভাবের পাগল।
বাউল দর্শন গুরুবাদে বিশ্বাসী : বাউল দর্শন গুরুবাদভিত্তিক। বাউলরা গুরুকে দুভাবে কল্পনা করেন। এক. মানুষ রূপে, দুই. মানুষরূপী ঈশ্বররূপে। গুরু শিষ্যকে সাধনার পথে এগিয়ে নিয়ে যান। সাধনার মাধ্যমেই ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। তবে এই ঈশ্বর বেদের ঈশ্বর নন, বা মানুষ বহির্ভূত কোনো সত্তা নন। মানুষ সাধনার মাধ্যমে ঈশ্বর তত্ত্ব লাভ করতে পারে। গুরুর রূপ সম্পর্কে লালনশাহ বলেন :
গুরু রূপের ঝলক দিচ্ছে যার অন্তরে, ও তার কিসের আবার ভজন সাধন লোক জানিত করে।
বাউল দর্শনে গুরুবাদ : প্রাচীনকাল থেকে ভারতে গুরুবাদভিত্তিক সাধনা প্রচলিত ছিল। যারা সাধনার মাধ্যমে নিজেদের অভিজ্ঞতার দ্বারা আধ্যাত্মিক সত্য লাভ করেন তাঁরাই গুরু । বাউল ধর্মে গুরুকে সর্বোচ্চ স্থান দেয়া হয়। গুরুকে আবার ঈশ্বররূপে কল্পনা করা হয়। বাউল গুরু তাঁর শিষ্যদের রারে আচার শিক্ষা দেন। কখনো প্রকৃতি পুরুষঘটিত যোগসাধনার ক্ষেত্রে গুরু নিজে উপস্থিত থেকে এই সাধন প্রণালির অতি গুহ্য বিষয়ে উপদেশ দিয়ে থাকেন। আধ্যাত্ম সত্যের দীক্ষা মিলতে পারে সদগুরুর কাছে।বাউল সাধনায় গুরুবাদ বা পীরবাদে নানা সম্প্রদায়ের ধ্যানধারণার মিশ্রণ ঘটেছে। ড. এনামুল হক এ সম্পর্কে বলেন, বাউল ধর্ম, সাধনা ও দর্শনে গুরুবাদের যে প্রভাব দেখা যায় তা একান্তভাবে বৌদ্ধ হিন্দুতন্ত্রের প্রভাবজনিত, ধর্ম, সাধনা ও যৌগিক প্রক্রিয়ায় গুরুর প্রভাব সামান্য। বাউলরা তাদের স্বাভাবিক চলার পথে গুরুকে সহায়করূপে পেতে চায়। তাই বাউল দর্শনে গুরুবাদ এক অনন্য ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার : বাউল দর্শনে দেহস্থিত আত্মাকে মনের মানুষ বলে অভিহিত করা হয়। তারা বিশ্বাস করে দেহের সাধনা দ্বারাই মনের মানুষকে পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে লালনশাহ বলেন “মনের নিষ্ঠা হলে মিলবে তারই ঠিকানা। বেদ বেদান্ত পড়বে যত বাড়বে তত লাঞ্ছনা।” এখানে বলা হয়েছে নিজেকে চিনলেই মনের মানুষকে চেনা যায় । নিজের মধ্যেই মনের মানুষ বা আত্মা অবস্থান করে। দেহের বাহিরে পরমাত্মা অবস্থান করে না।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!