বাংলাদেশে মাঠকর্ম অনুশীলনে সমস্যা দূরীকরণের উপায় বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে মাঠকর্ম অনুশীৰ্শনে সমস্যা দূরীকরণের উপায়সমূহ আলোচনা কর।
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সমস্যা দূরীকরণের উপায়সমূহ আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সমস্যা দূরীকরণের উপায়সমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : বাংলাদেশে মাঠকর্ম অনুশীলনে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা মাঠকর্ম সম্পাদন করার সময় নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়।
বাংলাদেশে মাঠকর্ম অনুশীলনে সমস্যা দূরীকরণের উপায় : নিম্নে বাংলাদেশে মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা দূরীকরণের উপায় আলোচনা করা হলো-
১. শিক্ষার্থীদের পছন্দের প্রতি গুরুত্বারোপ : ( Importance to the choice of students) : শিক্ষার্থীদের পছন্দের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মাঠকর্ম এজেন্সি বাছাই করা যেতে পারে । তবে এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে শিক্ষার্থীর এ পছন্দ ফাঁকি দেবার প্রবণতা বৃদ্ধি করে কিনা।
২. সংস্থা পছন্দ করার ক্ষমতা (Choice of agency) : বাংলাদেশে মাঠকর্মের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হলো শিক্ষার্থীদের সংস্থা পছন্দ করার ক্ষমতা না থাকা। তাই এ সমস্যা সবার আগে সমাধান করতে হবে। অর্থাৎ তাদের পছন্দনীয় এজেন্সিতে পাঠাতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের খাপখাওয়াতে সুবিধা হবে।
৩. সর্বজনীন নির্দেশনা অনুসরণ (Follow the universal guidline) : সমাজকর্মের নির্দিষ্ট নৈতিক মানদণ্ড রয়েছে। মাঠকর্মেরও কতিপয় নির্দেশনা রয়েছে। এসব নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বজনীন নিয়মকানুন প্রবর্তন অত্যাবশ্যক । এর ফলে মাঠকর্ম গতিশীল ও ফলপ্রসূ হবে ।
৪. সামাজিক গবেষণার প্রতিষ্ঠা (Establishing social laboratory) : মাঠকর্মের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সমাজকর্মের মূল্যবোধ, নীতি ও পদ্ধতিগুলো অনুশীলন করতে হবে। পাশাপাশি সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
৫. সাহায্যার্থীদের সচেতন করা (Client’s consurness) : সাহায্যার্থীরা প্রায়ই অসচেতন থাকে । তাই সাহায্যার্থীদের তাদের স্বার্থেই সকল দিক থেকে বিশেষ করে সমাজকর্ম বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। এর ফলে তাদের সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে। সমাজকর্মীর কাছেও সাহায্যার্থীর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
৬. পেশাদার তত্ত্বাবধায়ক বৃদ্ধি (Professional supervison) : প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদার তত্ত্বাবধায়কের সংখ্যা বাড়াতে হবে । তত্ত্বাবধায়করা যদি সমাজকর্মের উপর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে তাহলে তারা মাঠকর্ম সফল করার জন্য গুরুত্ব দিয়ে সহায়তা করবে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ভালো দিকনির্দেশনা পাবে ।
৭. ছাত্রছাত্রীর সংস্থা নির্দিষ্ট করা (Specific student) : মাঠকর্মে সংস্থা ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থী সংস্থাপন করতে হবে । ছোট প্রতিষ্ঠানে অনেক ছাত্রছাত্রী দেয়া যাবে না। এজন্য পূর্ব থেকেই সংস্থার আকার অনুযায়ী ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ঠিক করতে হবে । তাহলে সুশৃঙ্খলভাবে মাঠকর্ম সম্পাদন হবে ।
৮. সমাজকর্মের পেশাগত স্বীকৃতি (Professional recognition fo social work) : বাংলাদেশে সমাজকর্ম এখনো পেশার পরিপূর্ণ মর্যাদা অর্জন করেনি। ফলে বিভিন্ন সংস্থায় অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়োগ পাচ্ছে। এর ফলে সমাজকর্ম অনুশীলন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় এদেশে সমাজকর্মের পেশাগত স্বীকৃতি অতি জরুরি।
৯. চলমান মাঠকর্মের প্রচলন (Introducing concurrent field work) : আমাদের দেশে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট মাঠকর্ম চালু রয়েছে। কিন্তু পেশাদার সমাজকর্মী হিসেবে মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য এখানে চলমান মাঠকর্ম চালু করতে হবে।উন্নত দেশগুলোতে চলমান মাঠকর্ম প্রচলিত আছে ।
১০. নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা (Regular communication and co-ordination) : নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে মাঠকর্মকে কার্যকর ও ফলপ্রসূ করা যায়। এর ফলে সাহায্যার্থীর সেবা প্রদান এবং মাঠকর্মের লক্ষ্যার্জন নিশ্চিত হয়।
১১. তত্ত্বাবধানমূলক সভার আয়োজন (Arrangement of supervisory conferency) : সংস্থায় এবং কলেজে উভয় স্থানেই নিয়মিত তত্ত্বাবধায়ক সভার আয়োজন করতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব দিয়ে মাঠকর্ম সম্পাদন করবে।তত্ত্বাবধায়কগণ ও ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত হবে।
১২. পর্যাপ্ত সময় নির্ধারণ (Available time determination) : মাঠকর্ম সম্পন্ন করার সময় আরো বাড়াতে হবে।দৈনিক কর্মঘণ্টাও ঠিক করতে হবে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে মাঠকর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। এতে করে মাঠকর্মের অনেক বাধা দূর হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় উপর্যুক্ত পন্থায় বাংলাদেশে মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে সহজেই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারে। এজন্য শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান, তত্ত্বাবধায়ক, সাহায্যার্থী সকলেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।এর ফলে মাঠকর্ম সফলভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হবে।