বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের ভোটদানে নারীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা কর ।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানে নারীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানে নারীর অংশগ্রহণ সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, ‘বাংলাদেশের নারীদের সবচেয়ে স্বাভাবিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ হচ্ছে নির্বাচনে ভোটদান’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর ভূমিকা : ভোটদান একজন নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার। নির্বাচনে ভোটদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সরাসরি সংযোগ ঘটে। আর ভোটার যখন প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করে, তখন তাকে ভোটদান করা বলে। বাংলাদেশে নারীর ভোটাধিকার পূর্ণাঙ্গরূপে স্বীকৃত তাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই নারীরা
ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে আসছে।
স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানে নারীদের অংশগ্রহণ : বাংলাদেশের নারীদের সবচেয়ে স্বাভাবিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ হচ্ছে নির্বাচনে ভোট দান। ভোটার হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে দেখা যায় যে, ভোটদানকারী নারী ভোটারের সংখ্যাও পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান। নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচনে নারী ভোটারের অংশগ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ১৯৯১ সালের নির্বাচন : পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম ব্যাপক সংখ্যক নারী ভোটারের অংশগ্রহণে লক্ষ্য করা যায়। প্রায় ৩০ শতাংশ নারী এ নির্বাচনে ভোটদানের জন্য অংশগ্রহণ করে।
২. ১৯৯৬ সালের নির্বাচন : ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় নির্বাচনেও দেশের মোট ভোটারের অর্ধেক ছিল নারী ভোটার। অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ নারী ভোটার হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল ২,৭৯,৫৭,000।
৩. ২০০১ সালের নির্বাচন : ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যাপক সংখ্যক নারী ভোটার লক্ষ্য করা যায়। এই নির্বাচনে ৩,৬৩,০০০০০ জন নারী ভোট প্রদান করে। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচনে কিছু এলাকায় নারীরা বৃহৎ পরিসরে ভোট দিলেও এসব এলাকায় নারীদের ভোটদানে সামাজিক বিধিনিষেধ রয়েছে।
৪. ২০০৮ সালের নির্বাচন : ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অধিক সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ ভোটাধিকার বঞ্চিত নারীদের নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
৫. ২০১৪ সালের নির্বাচন : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত দশম জাতীয় সংসদে ২০ জন প্রার্থী জনগণের সরাসরি ভোটে সংসদে ২০ জন প্রার্থী জনগণের সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া আরো আট জন নারী সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারী ভোটারের অংশগ্রহণ : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নারীর ভোটারের ভোট দান নিশ্চিত করা জরুরি। ১৯৫৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের ভোটদানের অধিকার ছিল না। কেননা দীর্ঘকাল পর্যন্ত নারীরা ছিল অবহেলিত ও নিষ্পেষিত। ১৯৫৬ সালে সর্বপ্রথম নারীরা সর্বজনীন ভোটদান করতে সমর্থ হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিগত বিভিন্ন শাসন আমলে বেশ কয়েকবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সকল নির্বাচনেও নারী ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় তবে সীমিত পর্যায়ে। কিন্তু ১৯৯৭ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল বেশি। এ নির্বাচনে প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ নারী ভোটারের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই ভোট কেন্দ্র গিয়ে ভোট প্রদান করে। ‘খান ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে- ১৯৯৭ সালের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নির্বাচিত নারী সদস্যের হিসেব মতে, ৫০ থেকে ৭০% নারী ভোটার ভোট প্রদান করেছিলেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ সংখ্যাগত পরিমাণ এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেছে। সাধারণত একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে একজন নারী ভোটার তিনটি করে ভোট দিতে পারেন। একটি চেয়ারম্যান পদের জন্য একটি সাধারণ আসনের জন্যও একটি সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নারীদের ভোট দানে ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুতরাং ভবিষ্যতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে নারীরা যেন স্বাধীনভাবে ভোটদানে অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।