বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীর অধস্তনের বিভিন্ন দিকগুলো কী কী?
অথবা, সমাজের কোন কোন ক্ষেত্রে নারীকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে?
অথবা, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীদের অধীনতা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীর অধস্তনের বিভিন্ন দিক বর্ণনা কর ।
অথবা, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীর অবমূল্যায়নের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পিতৃতন্ত্র এমন একটি সামাজিক ব্যবস্থা যেখানে পুরুষ নারীর উপর প্রভুত্ব করে। নারীর উপর নির্যাতন চালায় এবং নারীকে শোষণ করে। পিতৃতন্ত্র এমন এক পরাক্রমশালী যে নারী সকল নির্যাতন মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সকল নির্যাতন নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নিয়ে প্রতিবাদ থেকে দূরে থেকেছে। পিতৃতন্ত্রের উদ্ভবের কারণ যাহোক,
নারী নির্যাতন পিতৃতন্ত্রের একটি বিশেষ দিক।
বাংলাদেশের সমাজে নারীদের অধীনতা : বাংলাদেশের সমাজে বিভিন্ন দিক থেকে নারীদের অধীনতা নিম্নে দেয়া হলো :
১. আইনগত দিক : পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষরা নিজেদের সুবিধা আদায়ে আইন তৈরি করে নিয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের সময় দেনমোহরের টাকা মেয়েদের দেয়ার কথা থাকলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেয়া হয় না। আর বিয়ের সময় যৌতুক তো আছেই।
২. সামাজিক অবস্থান : সামাজিকভাবে মেয়েদের অবস্থান একেবারেই নিম্ন। বিশেষ করে গ্রামের মেয়েদের অবস্থান একেবারেই নিচে। যেমন কোন অফিসে মেয়েরা চাকরি করলে এখনো তাদের ছোট করে দেখা হয়।
৩. শিক্ষাক্ষেত্রে : শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের বৈষম্যের কথা বুঝা যায় মেয়েদের শিক্ষার হারের দিকে তাকালেই। মেয়েদের শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই যতটুকু দরকার শুধু বিয়ের জন্য। তাই নারী শিক্ষার হার কম।
৪. স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে : ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মেধা কম হয়- এ ধারণায় মেয়েদের ঘরে রেখে দেয়া হয় এবং ছেলেদের বাইরের কাজে উৎসাহিত করা হয়। মেয়েরা সারা দিন ঘরে থেকে খাবার তৈরি করে এবং ছেলেরা খাওয়ার পর যা থাকে তা তারা ভাগ করে খায়।
৫. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে : আমাদের দেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি কাজ করে। কিন্তু মেয়েদের গৃহস্থালি কাজের কোন আর্থিক মূল্য নেই। আর চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা কম। তাই অর্থনৈতিক দিক থেকে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে। অথচ একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণের উপর।