বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশ কেমন?
অথবা, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর ভূমিকা চিহ্নিত কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার অনেক কম। ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘ মানব প্রতিবেদনের মুখ্য বিষয় ছিল নারী। এখানে বলা হয়েছে যে এদেশের গ্রামীণ নারীরা পুরুষের চেয়ে অন্তত: ১০% বেশি কাজ করে। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর শ্রম হিসাব বহির্ভূত। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের নারীদের
একটা বৃহৎ অংশ কর্মক্ষম এবং শ্রমশক্তির আওতাধীন।
শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ : যেসব শ্রম শক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হলো :
১. কৃষিক্ষেত্রে : প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের নারীরা কৃষি কাজের সাথে জড়িত। এদেশে গ্রামীণ নারীর ৭৭%
কৃষি কাজে নিয়োজিত। নারী ও পুরুষের মাঝে তুলনা করলে দেখা যাবে যে কৃষিক্ষেত্রে নারীর অবদান কোন ভাবেই পুরুষের চেয়ে কম নয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি ১৯৮৫–৮৬ সালে শ্রমশক্তি ছিল ৩০.৯ মিলিয়ন এব ১৯৯৫-৯৬ সালে তা হয় ৫৬.০ মিলিয়ন। পরবর্তীতে কৃষিক্ষেত্রে নারীর কিছু কাজকে অর্থনৈতিক কর্ম হিসেবে বিবেচনার
ফলে শ্রমশক্তির পরিমাণ অনেক বেড়েছে।
২. পোশাক শিল্পে নারী : বর্তমানে আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাক শিল্প। এ শিল্প বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয়ের ৭৬% বয়ে আনে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের শ্রমশক্তির ৮০% হলো নারী শ্রমিক। আমাদের দেশে পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ যার ৯০% নারী।
৩. উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে নারী : বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীরাও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের নারীদের ন্যায় খাদ্য, জ্বালানি, পানি সংগ্রহে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু তাদের এ পরিশ্রমের কোন মূল্যায়ন এখন পর্যন্ত করা হয়নি। আমাদের দেশে গৃহপালিত পশু ও হাঁস-মুরগির যত্ন নেয়া, শাক-সবজির পরিচর্যা করা, ধানভানা ও তা গোলায় তোলা,
ধান বীজ সংরক্ষণ করা ইত্যাদি উৎপাদনমূলক কাজগুলোর সাথে নারীও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর শ্রমের কোন মূল্য দেয়া হয় না। তাই আমাদের উচিত সমাজের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নারী পুরুষ সমানভাবে অংশগ্রহণ করা এবং নারী শ্রমের যথার্থ মূল্য দেয়া।