বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাফল্যের শর্তাবলি আলোচনা কর ।

অথবা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সফলতার পূর্বশর্তসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাফল্যের কতিপয় শর্তসমূহ বর্ণনা কর ।
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য আওতাধীন সম্পদের সুষম বন্টনের নিমিত্তে ভবিষ্যৎ কার্যাবলির সুশৃঙ্খল পদক্ষেপই হচ্ছে পরিকল্পনা। যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সফল করতে হলে কিছু শর্তাবলি মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশ একটি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ তাই এদেশে অন্যান্য যে কোনো পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে কিছু শর্ত মানতে হবে।
পরিকল্পনা : উন্নয়নের কৌশল নির্ধারণে পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক। পরিকল্পনা হচ্ছে প্রত্যাশিত কোনো কার্য সম্পাদনের পূর্ব প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় মূলত কোনো কার্যক্রম প্রক্রিয়া বা কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে। অর্থাৎ সুশৃঙ্খল, সুন্যবস্থিত, সুসংগঠিত, সুনিয়ন্ত্রিত ও ধারাবাহিকভাবে কার্য পরিচালনার পাশাপাশি যথামণ, অর্থবহ ও কার্যকর ফলাফল অর্জনের সহায়ক ব্যবস্থাই হচ্ছে পরিকল্পনা।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বলতে বুঝানো হয় এমন ধরনের পরিকল্পনা কৌশল যেখানে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্পদ বরাদ্দ দেয়া হয় টাকা না অর্থের বিবেচনায়। আর্থিক পরিকল্পনায় বাজারের চাহিদা সরবরাহের নীতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বস্তুগত পরিকল্পনায় সম্পদ বরাদ্দ দেওয়া হয় মানুষ, বস্ত্র এবং যান্ত্রিক বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে। এখানে সমাজের বজ্রগত ভারসাম্যের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাফল্যের শর্তাবলি : বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাফল্যের হার খুব কম হওয়ার উন্নয়নের গতি অত্যন্ত মন্থর। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাফল্য অর্জন করতে হলে নিচের ব্যবস্থাবলি গ্রহণ করতে হবে।
১. পরিকল্পনামুখী উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় সাফল্য পেতে হলে প্রথমেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পনামুখী আধুনিক, উপযুক্ত শিক্ষার আলোকে তৈরি করতে হবে। যদিও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ তবুও এই শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দক্ষ, উপযুক্ত এবং আধুনিক কর্মী বাহিনীর সৃষ্টি হবে। জনগণের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে পরিকল্পনার সুফল ভোগ করা যাবে। তবে আশার কথা হলো আজকের বাংলাদেশে প্রচুর কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মী এবং বিদেশ ফেরত দক্ষ জনবলে দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে।
২. সঠিক ও তথ্য নির্ভর পরিকল্পনা প্রণয়ন : বাংলাদেশে সঠিক ও তথ্য নির্ভর পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সকলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। বর্তমান সময়কে বলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, সঠিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এক পরিকল্পনাকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কথায় বলা হয় সঠিক এবং উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি পরিকল্পনার অর্ধেক কাজই শেষ হয়। তবে তথ্য নির্ভর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হলে তথ্য সংগ্রহের সংগঠনকে বৈজ্ঞানিক কার্যকর রূপে গড়ে তুলতে হবে।
৩. সুস্থ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ : বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অসুস্থ। এদেশে হানাহানি হিংসাত্মক, এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি বিদ্যমান। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সফল হতে হলে রাজনৈতিক পরিবেশ সুস্থ ও স্থিতিশীল হতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি গণতান্ত্রিক হলেও রাজনৈতিক কার্যকলাপ সুষ্ঠু ও জবাবদিহিমূলক নয়। তাই সুস্থ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. অভ্যন্তরীণ সম্পদের যথাযথ অনুসন্ধান : যে কোনো দেশের জন্য একটি বড় উপহার প্রাকৃতিক সম্পদ। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান বর্তমান বিশ্বে সম্পদশালী দেশ কারণ তাদের দেশে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের সমাহার। বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হলেও এদেশে সীমিত আকারে বেশ কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশের এই অভ্যন্তরীণ সম্পদের যথাযথ অনুসন্ধান জরুরী। কারণ অভ্যন্তরীণ সম্পদ যে কোনো দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা লাভে সাহায্য করে।
৫. সম্পদের কার্যকর ব্যবহার : অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক অথবা অপ্রাকৃতিক উভয় প্রকার সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। তবে এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয় যে, পরিকল্পনা হতে হবে দেশীয় সম্পদের উপর ভিত্তি করে এবং বাস্তবসম্মত।
৬. জন চাহিদার দাবি পূরণ : বাংলাদেশের জনগণের বিভিন্নমুখী চাহিদা বিদ্যমান। তবে এদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নকল করতে হলে তা এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে তা যেন জনগণের চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়। সমাজের সকল শ্রেণি, পেশার, বর্ণের মধ্যে যেন অসামঞ্জস্য না থাকে। সমাজের কোনো অংশ যেন বৈষম্যের শিকার না হয়।
৭. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কমিশন গঠন : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সফলতা লাভের জন্য একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কমিশন গঠন প্রয়োজন। এই কমিশনের কাজ হবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করা। পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাসহ সার্বিক দিক খেয়াল রাখতে হবে।
৮. যথাযথ ব্যয় : বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রকল্পে যথাযথ ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত লোক নিয়োগ, তত্ত্বাবধানে ত্রুটি বাস্তবায়নের সময়ের দীর্ঘতা, কুশলীর অদক্ষতা, দুর্নীতি, ঘুষ, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ইত্যাদি এর কারণে যেন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ব্যর্থ না হয়।
১. পরিকল্পনা কমিশন ও প্রশাসকের মধ্যে সম্পর্ক : অনেক সময় বুষ্টু যুগযোপযোগী পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসকের সাথে ভাল সম্পর্ক না থাকার কারণে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। কারণ পরিকল্পনার কাজের বাস্তবায়ন করে। থাকে প্রশাসক।
১০. দক্ষ জনবল নিয়োগ : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে সফল করতে দক্ষ জনবলের নিয়োগ দান করতে হবে। কারণ দক্ষ লোকবল ছাড়া অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মত জটিল বিষয় সবার দ্বারা সম্ভব নাও হতে পারে।
উপসংহার : বাংলাদেশের ন্যায় তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে উপরোক্ত শর্তাবলি অবশ্যই দরকার, এছাড়া জনগণের সচেতনতা এবং শাসকগোষ্ঠীর সাহায্য, ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে সফল এবং সাফল্যমণ্ডিত করে জনকল্যাণ সাধন করা সম্ভব।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*