বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্ব পর্যালোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির অবদান আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : গ্রামপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির ব্যাপক ভূমিকা ও গুরুত্ব বিদ্যমান । গ্রামীণ অর্থনীতি ও শহুরে অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্বৈততা (Dualism) বলা হয়। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, আর্থিক ও বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ ও পরিবহন কেন্দ্র ইত্যাদি শহরে অবস্থিত এবং এগুলোর উৎপাদন ও বিপণন সম্পর্কিত কার্যকলাপ নিয়েই শহুরে অর্থনীতি গঠিত। পক্ষান্তরে, কৃষিজাত দ্রব্য, মৎস্য, গবাদিপশু, কুটির শিল্পজাত দ্রব্য, বনজ সম্পদ ইত্যাদির উৎপাদন, আহরণ ও বিপণন সম্পর্কিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি (Rural economy) গঠিত । economy in the economy of Bangladesh) : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্ব ও ভূমিকা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্ব (Role and importance of rurat সম্যক উপলব্ধি করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচ্য হিসেবে ধরা যেতে পারে :
১. খাদ্যের যোগান (Supply of food) : দেশের খাদ্যের যোগান দেয় গ্রামীণ অর্থনীতি। দেশের মোট খাদ্যের প্রয়োজনের প্রায় ৮০% গ্রামীণ অর্থনীতি যোগান দেয় এবং বাকি অংশ আমদানি করা হয়। অতএব গ্রামীণ অর্থনীতি অধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামীণ অর্থনীতি সুস্থ না থাকলে দেশের খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অতএব গ্রামীণ
অর্থনীতির উন্নয়ন সমগ্র অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য পূর্বশর্তস্বরূপ।
২. কাঁচামালের যোগান (Supply of row materials) : বাংলাদেশের শিল্প খাতের অনেক কাঁচামাল, যথা : পাট বেত, কাঠ ইত্যাদি গ্রামীণ অর্থনীতি যোগান দেয় । অতএব শহরের শিল্প খাত বিশেষভাবে গ্রামীণ অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল।
৩. জনসংখ্যা ও কর্মসংস্থান (Population and employment) : বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি এ দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগ ধারণ করে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১১ অনুযায়ী দেশের শ্রমশক্তির ৪৮.৪% কৃষি, বনজ ও মৎস্য খাতে নিয়োজিত। আর এ খাতগুলো প্রধানত গ্রামীণ অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত। অতএব বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় দু’তৃতীয়াংশ গ্রামীণ অর্থনীতি যোগায়।
৪. জাতীয় আয়ে অবদান (Contribution in national income) : বাংলাদেশের G.D.P তে কৃষিখাতের অবদান বর্তমানে প্রায় ৩০%। অতএব গ্রামীণ অর্থনীতির অবদান ৩০% থেকে কিছু বেশি। অর্থাৎ, দেশের G.D.P. এর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গ্রামীণ অর্থনীতিতে উৎপাদিত হয়।
৫. শ্রমের যোগান (Supply of labour) : যেহেতু দেশের পল্লি অঞ্চলে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ বাস করে, সেহেতু গ্রামীণ অর্থনীতি শহুরে অর্থনীতির জন্য শ্রমের যোগান দেয়। গ্রামীণ অর্থনীতির আধুনিকীকরণ ও উন্নয়ন সম্ভব হলেই অধিক উদ্বৃত্ত শ্রম শহরে যোগান দেয়া যাবে। অতএব শ্রম যোগানের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. বাজার সৃষ্টি (Creation of market) : শহুরে অর্থনীতির উৎপন্ন দ্রব্যের বাজার সৃষ্টি করে গ্রামীণ অর্থনীতি৷ বস্তুত গ্রামীণ অর্থনীতি শহুরে অর্থনীতির পশ্চাৎভূমি হিসেবে কাজ করে। গ্রাম শিল্পের কাঁচামাল যোগায় এবং শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার সৃষ্টি করে। অতএব গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে।
৭. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন (Earning of foreign exchange) : বাংলাদেশের প্রচলিত প্রধান রপ্তানি দ্রব্য পাট আসে গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে। এছাড়া চামড়া, মাছ ইত্যাদি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি দ্রব্য যা গ্রামীণ অর্থনীতি যোগান দেয় । অতএব বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গ্রামীণ অর্থনীতির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার : অতএব বিভিন্ন দিক থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এখনো বাংলাদেশ একটি গ্রামভিত্তিক দেশ। হাজার হাজার গ্রামের অর্থনীতি সুস্থ থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সুস্থ থাকবে । গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন হলেই বাংলাদেশের সত্যিকার উন্নয়ন সম্ভব।