Answer

বাংলাদেশি সমাজব্যাবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্ব সম্পর্কে আলোকপাত কর।

অথবা, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্ব সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
অথবা, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
গ্রাম তথা যে কোনো এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য সঠিক নেতৃত্বের ভূমিকা অতুলনীয়।যুগের পরিবর্তনে সমাজ যেমন পরিবর্তিত হচ্ছে, ঠিক সেভাবে নেতৃত্বের পরিবর্তনও লক্ষ করা যাচ্ছে। আর এ পরিবর্তনের হাওয়া গ্রামীণ নেতৃত্বকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে। যখন বাংলাদেশে প্রাচীন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ চলত, তখন নেতৃত্ব ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার সাথে সাথে গ্রামীণ নেতৃত্বের মধ্যে পরিবর্তনশীলতার ছোঁয়া লক্ষণীয় । গ্রামীণ নেতৃত্বের পরিবর্তনশীলতা আলোচনা করার আগে গ্রামীণ নেতৃত্ব কি সে সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক।
বাংলাদেশী সমাজব্যবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্ব : বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্বের পরিবর্তনের আলোচনার পূর্বে বাংলাদেশি সমাজব্যবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা দরকার। নিম্নে বাংলাদেশ সমাজব্যস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. কৃষি ব্যবস্থায় নেতৃত্ব : ‘পুরাতন ধাঁচের সমাজব্যবস্থায় যাদের হাতে জমির মালিকানা ছিল তারাই গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় ক্ষমতাবান ছিল। উচ্চ বংশীয় মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি খুব কমই গ্রামীণ নেতৃত্বে এগিয়ে আসত। পুরাতন ধাঁচের কৃষি ব্যবস্থায় যারা উচ্চ বংশ মর্যাদার অধিকারী ছিল, তারাই অধিকাংশ জমির মালিক ছিল। বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় যাদের দ্বারা জমি ও চাষাবাদের সেচ যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয়, তারাই গ্রামীণ সমাজে ক্ষমতাবান। কারণ এদের সহযোগিতা ছাড়া কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি সচল রাখা সম্ভব নয় ।
২. শিক্ষাব্যবস্থায় নেতৃত্ব : শিক্ষার ক্ষেত্রে একসময় শুধু মক্তব, মাদ্রাসার মৌলবি সাহেব, পণ্ডিত মশাই এরা নেতৃত্ব দিত। ইদানীং কালে গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুল, কলেজ, সরকারি শিক্ষা প্রশাসন সর্বদাই এগিয়ে থাকছে। গ্রামীণ জনপদগুলো ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে।
৩. বিচারকার্যে নেতৃত্ব : পণ্ডিত মশাই, পঞ্চায়েত প্রধান, উচ্চ বংশীয় মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, গ্রাম্য মোড়ল ইত্যাদি পদবি ছিল প্রাচীন ধাঁচের গ্রামীণ নেতৃত্বের ধারক। আধুনিক গ্রামীণ জীবনে এদের নেতৃত্ব খর্ব হয়। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ বৈধ প্রশাসক হিসেবে তৈরি হয়েছে। এখনো গ্রামীণ জনপদে শালিস, দরবার, মোড়ল, মাতব্বর শ্রেণি থেকে চেয়ারম্যান, মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, যা গ্রামীণ জনপদে তাদের কর্তৃত্বের প্রমাণ দেয় ।
৪. রাজনীতিতে নেতৃত্ব : সনাতন ধাঁচের গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় জোতদার, মোড়লরা গ্রামীণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত।বর্তমানকালের সময়ে গ্রামীণ রাজনীতি শহুরে রাজনীতির সংস্পর্শে এসেছে। আর সে কারণে শুধু জোতদার, মোড়ল নয়, শিক্ষিত সচেতন যে কোনো শ্রেণি, রাজনৈতিক দলের সদস্য তথা, নেতা নির্বাচিত হয়ে গ্রামীণ নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাচ্ছে।
৫. সাহায্য ও রিলিফ বণ্টনে নেতৃত্ব : প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা বিপদকালীন সময়ে সহযোগিতা ও সরকারি ত্রাণ বণ্টনে গ্রাম্য মাতব্বর শ্রেণির কর্তৃত্ব দেখা যেত। বর্তমানে ইউ. পি চেয়ারম্যান, মেম্বার ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে এ পর্যায়ে নেতৃত্বদানকারী নেতারা নতুন করে নেতৃত্বে আসতে শুরু করেছে।
৬. সাধারণ গ্রাম্য সদস্য : গ্রামের সাধারণ সদস্যগণ গ্রামীণ নেতৃত্বে তেমন প্রভাব না রেখে শুধু অংশগ্রহণ করে।অনেক সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তখন সাধারণ গ্রাম সদস্যদের ভূমিকা প্রতিপন্ন হয়। অন্যক্ষেত্রে সাধারণ সদস্যদের কোনো ভূমিকা থাকে না। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
৭. সমাজসেবী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিবর্গ : সমাজসেবী ও বিচক্ষণ বা জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ যেমন- ডাক্তার, শিক্ষক, উকিল ইত্যাদি গ্রামীণ নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেন। তাদের নেতৃত্বে অনেক সময় গ্রামীণ শালিস সম্পন্ন হয়ে থাকে।
৮. বংশীয় নেতৃত্ব : বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বংশীয় নেতৃত্বেরও যথেষ্ট কদর রয়েছে। উচ্চবংশের লোকেরা সাধারণত গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন শালিসের মীমাংসা করে থাকেন। অনেক সময় যে বংশের সমস্যা সে বংশের লোকেরাই সমাধান করে। আবার যখন ঐ বংশের লোকেরা তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে না, তখন জন্য বংশের নেতার সাহায্য গ্রহণ করে।
৯. গ্রামীণ মাতব্বর : বাংলাদেশের গ্রামীণ নেতৃত্ব গ্রামের মোড়ল, মাতব্বর, ধনী কৃষক, মহাজন, সর্দার ইত্যাদি শ্রেণির উপর নির্ভরশীল। এরা অধিকাংশই গ্রামীণ শালিস কমিটির সদস্য। গ্রামের যে কোনো সমস্যার সমাধানে এদের ভূমিকা অগ্রগামী।
১০. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার : গ্রামীণ রাজনীতির সবচয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ। কেননা তারা গ্রামের জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সাথে জড়িত। গ্রামীণ শালিসে তাদের নেতৃত্ব সবচেয়ে অগ্রগণ্য ও শক্তিশালী।
উপসংহার : উপর্যুক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় গ্রামীণ নেতৃত্বের প্রকৃতি সম্পর্কে একটি ধারণা লাভ করা যায়। বলা যায় যে, গ্রামীণ নেতৃত্ব স্থানীয় তথা গ্রামীণ উন্নয়ন ও গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!