বনলতা সেন : কবিতা, জীবনানন্দ দাশ

বনলতা সেন

জীবনানন্দ দাশ—বনলতা সেন
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী- ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

ক-বিভাগ

রূপসী বাংলার কবি কে?
উত্তর : জীবনানন্দ দাশ।
বাংলা সাহিত্যে তিমির হননের কবি নামে পরিচিত কোন কবি?
উত্তর : কবি জীবনানন্দ দাশ।
জীবনানন্দ দাশের কয়েকটি কাব্যের নাম উল্লেখ কর।
উত্তর : ঝরাপালক (১৯২৭), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩১), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)
প্রভৃতি।
জীবনানন্দ দাশ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : বরিশালে ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি।
কবির পিতার নাম কী?
উত্তর : সত্যানন্দ দাশ।
কবির মাতার নাম কী?
উত্তর : কবি কুসুম কুমারী দাশ।
কুসুম কুমারী রচিত দুটি বিখ্যাত চরণ হলো-
উত্তর : “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”
জীবনানন্দের ভাই ও বোনের নাম কী?
উত্তর : অশোকানন্দ দাশ ও সুচরিতা দাশ।
কোন বিষয়ে কবি বি.এ অনার্স পাস করেন?
উত্তর : ইংরেজিতে।
এম. এ. পাস করেন কোথা থেকে?
উত্তর : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ পাশ করেন ১৯২১ সালে, দ্বিতীয় বিভাগে।
জীবনানন্দের পত্নীর নাম কী?
উত্তর : লাবণ্য গুপ্ত।
জীবনানন্দের ছেলে ও মেয়ের নাম কী?
উত্তর : মেয়ে মঞ্জুশ্রী দাশ এবং ছেলে সমরানন্দ দাশ।
কবি কর্মজীবন শুরু করেন কখন?
উত্তর : ১৯২২ সালে কলকাতার সিটি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে।
জীবনানন্দ দাশের প্রথম কবিতা কোনটি?
উত্তর : ‘বর্ষা আবাহন’।
বর্ষা আবাহন কোন পত্রিকায় প্রকাশ হয়?
উত্তর : ১৯১৯ সালে । ব্রহ্মবাদী পত্রিকায়।
“সকলেই কবি নয়— কেউ কেউ কবি; কবি কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতর চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র
সারবত্তা আছে।”- উক্তিটি কার?
উত্তর : জীবনানন্দ দাশের (কবিতার কথা)
কবি নিজের সম্পর্কে কী মন্তব্য করেছেন?
উত্তর : ‘আমি কবি, সেই কবি,-
আকাশের কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি। আন্‌মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিল মেঘের পানে। পড়ে আছে হেথা ছিন্ন নীবার, পাখির নষ্ট নীড়। হেথায় বেদনা মা-হারা শিশুর, শুধু বিধবার ভিড়।’ (আমি কবি, সেই কবির ঝরা পালক)।
জীনানন্দ দাশের কবিতা কোন কোন পত্রিকায় প্রকাশ হতো?
উত্তর : কল্লোল, কালি-কলম, প্রভৃতি পত্রিকায়।
কল্লোল পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত কবিতা?
উত্তর : নীলিমা।
জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর : ঝরাপালক (১৯২৭)।
উপমা সম্পর্কে জীবনানন্দ দাশ কী বলেছিলেন?
উত্তর : জীবনানন্দ একদা বলেছিলেন “উপমাই কবিত্ব।”
জীবনানন্দ দাশ কোন সময়ের কবি?
উত্তর : তিরিশোত্তর আধুনিক কবি।
‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ কে সম্পাদনা করেন?
উত্তর : জীবনানন্দ দাশ নিজেই।
কোন কবিতার জন্য জীবনানন্দ সাহিত্য পুরস্কার পায়?
উত্তর : ‘বনলতা সেন’ কাব্যের জন্য।
ইতিহাস চেতনা সম্পর্কে কবির ধারণা কী?
উত্তর : “কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার, কবিতার অস্থির ভিতরে থাকবে ইতিহাস চেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন
কালজ্ঞান।” -(কবিতার কথা)।
কে বলেছিলেন ‘জীবনানন্দ দাশ এক বিমুঢ় যুগের বিভ্রান্ত কবি।’
উত্তর : দীপ্তি ত্রিপাঠী।
জীবনানন্দ দাশের কাব্যে কোন কোন ঋতুর প্রাধান্য আছে?
উত্তর : হেমন্ত ও শীত ঋতু।
কবি কিভাবে মারা যান?
উত্তর : ট্রাম দুর্ঘটনায়।
‘বনলতা সেন’ কবিতাটির সাথে কোন কবিতার মিল আছে?
উত্তর : Edger Allan poe এর “To Helen” কবিতার।
‘বনলতা সেন’ কবিতার স্তবক এবং চরণ সংখ্যা কত?
উত্তর : স্তবক ৩ এবং চরণ ১৮।
বনলতা সেন’ কবিতায় কবি কতদিন ধরে পথ হাঁটছেন?
উত্তর : হাজার বছর ধরে।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি হাজার বছর ধরে কোথায় পথ হাঁটছেন?
উত্তর : পৃথিবীর পথে ।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি পৃথিবীর কোন পথে পথ হাঁটছেন?
উত্তর : সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকার মালয় সাগরে।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি কত দূরে ছিলেন?
উত্তর : অন্ধকার বিদর্ভ নগরে।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি ক্লান্ত কবির চারপাশে কী বিরাজ করে?
উত্তর : চারদিকে সমুদ্র সফেন।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবিকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো কে?
উত্তর : নাটোরের বনলতা সেন।
বনলতা সেন’ কবিতায় কবি বনলতার চুল কেমন বলে আখ্যায়িত করেছেন?
উত্তর : অন্ধকার বিদিশার নিশা।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি বনলতার মুখ কেমন বলে মন্তব্য করেছেন?
উত্তর : শ্রাবস্তীর কারুকার্য।
বনলতা সেন’ কবিতায় হাল ভেঙে দিশা হারিয়েছে কে?
উত্তর : নাবিক।
উত্তর : বনলতা সেন কবিকে।
‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ কথাটি কে কাকে বলেছে?
‘বনলতা সেন’ কবিতায় পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে তাকায় কে?
উত্তর : নাটোরের বনলতা সেন।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় সমস্ত দিনের শেষে সন্ধ্যা আসে কীভাবে?
উত্তর : শিশিরের মতো।
উত্তর : চিল।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় পাণ্ডুলিপি কখন আয়োজন করা হয়?
উত্তর : পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি গল্পের তরে কী ঝিলমিল করে?
‘বনলতা সেন’ কবিতায় ডানার গন্ধ কে মুছে ফেলে?
উত্তর : জোনাকিরা।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় সব পাখি ঘরে ফিরলে, সব নদী জীবনের লেনদেন শেষ করলে আর কী অবশিষ্ট থাকে?
উত্তর : অন্ধকার এবং বনলতা সেনের মুখোমুখি বসবার।
সিংহল সমুদ্র কী?
উত্তর : ভারতের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ সমুদ্র। প্রাচীন লঙ্কা দ্বীপকে এক সময় সিংহল বলা হতো। বর্তমানে এটি শ্রীলঙ্ক। নামে পরিচিত। এর
চতুর্দিকে বেষ্টিত রয়েছে সমুদ্র। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাই লিখেছিলেন “ঐ সিন্ধুর টিপ, সিংহল দ্বীপ কাঞ্চনময় দেশ।”
বিম্বিসার কে?
উত্তর : প্রাচীন হর্ষভ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। ৫৪৫-৪৯৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে তিনি রাজত্ব করেছেন। তাঁর রাজ্যের নাম ছিল মগধ।
ভারতের বর্তমান বিহার প্রদেশের মধ্য ও দক্ষিণভাগ জুড়ে অবস্থান ছিল এই রাজ্যের। এ রাজ্যের জমি তখন নানা প্রকার
ধাতু ও খনিজদ্রব্যে সমৃদ্ধ ছিল। এই রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী ছিল রাজগৃহে। বর্তমানে এ জায়গাটি রাজগীর নামে পরিচিত।
অশোক কে?
উত্তর : মৌর্য বংশের প্রতাপশালী রাজা। তিনি ছিলেন রাজা বিন্দুসার এর পুত্র। ২৯৩-২৬৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মোট পঁচিশ বছর রাজত্ব
করার পর বিন্দুসার এর মৃত্যু হলে তার পুত্রদের মধ্যে রাজত্বের উত্তরাধিকার নিয়ে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে অশোক
তার সকল ভাইকে পরাজিত করে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকার কারণে ২৬৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে
সিংহাসন দখল করলেও তাঁর রাজ্যাভিষেক হয় চার বছর পর। শাসন কাজ ও ধর্মপ্রচারের জন্য অশোক বহু অনুশাসন প্রচার
করেন। অশোকের অনেক অনুশাসন পর্বতগাত্রে খোদিত রয়েছে। পাটলীপুত্র ছিল তার রাজধানীর নাম।
বিদর্ভ কী?
উত্তর : ভারতের বর্তমান মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত বিদর রাজ্যের প্রাচীন নাম।
‘বিদিশা’ কী?
উত্তর : বৌদ্ধ যুগের প্রাচীন সমৃদ্ধ নগরী বিদিশা।
‘শ্রাবন্তী’ কী?
উত্তর : প্রাচীন ভারতের একটি অপরূপ নগরী শ্রাবন্তী। দেউল ও ভাস্কর্যের কারুকাজের জন্য এ নগরী বিখ্যাত ছিল।
‘সমুদ্র সফেন’ কী?
উত্তর : ফেনাময় সমুদ্র।
‘ডানার রৌদ্রের গন্ধ’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর : ব্যস্ততা ভরা কর্মজীবনের অবসাদ বা ঘামের গন্ধ।

খ-বিভাগ

প্রশ্ন॥১॥ কবি জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
প্রশ্ন॥২॥ ‘বনলতা সেন’ কবিতার মূলভাব লেখ।
প্রশ্ন॥৩॥ “হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি।”— ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥৪॥ “বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি, আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে।”— ব্যাখ্যা কর।

প্রশ্ন॥৫॥ “আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।” – কবি কেন এমন বলেছেন তা ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥৬॥ “চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য।”- ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥৭॥ “সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে।”- ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥৮॥ “পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।”- ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥৯॥ “সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে, ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল।”— ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥১০॥ “বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন? পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।” কে, কাকে এবং কেন এমন বলেছে?
প্রশ্ন॥১১॥ “সব পাখি ঘরে আসে সব নদী- ফুরায় এজীবনের সব লেনদেন থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।” ব্যাখ্যা কর।

গ-বিভাগ

প্রশ্ন॥১॥ জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘বনলতা সেন’ কবিতার মূলবক্তব্য তোমার নিজের ভাষায় লিখ।
প্রশ্ন॥২॥ ‘বনলতা সেন’ কবিতা অবলম্বনে জীবনানন্দ দাশের কবিতার বিশিষ্টতা বিশ্লেষণ কর।
প্রশ্ন॥৩॥ জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতায় প্রেম ও প্রকৃতি চেতনার যে সমন্বয় সাধিত হয়েছে তার বিবরণ দাও।
প্রশ্ন॥৪॥ ভ্রমণক্লান্ত কবির নীড়াশ্রয়ী মন কিভাবে শান্তি পেল ‘বনলতা সেন’ কবিতা অবলম্বনে বর্ণনা কর।
প্রশ্ন॥৫॥ “বনলতা সেন” কাব্যের ‘বনলতা সেন’ কবিতাটির শিল্পমূল্য আলোচনা কর।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

1 Comment

  1. বনলতা সেন কবিতা টোৰ আধাৰত জীবনানন্দ দাসৰ কবিতাৰ বৈশিষ্ট্য লিখা

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*