প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাঙালি দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য বিবৃত কর।

অথবা, প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।
অথবা, প্রাচীন ও বাঙালি দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য কী কী?
অথবা, প্রাচীন ও বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
উত্তরা।। ভূমিকা :
বাঙালির দর্শন চিন্তার ইতিহাস অতি প্রাচীন। বাঙালির দর্শন চিন্তার ইতিহাস নিয়েও অনেক বিতর্ক
রয়েছে। বাঙালির দর্শন চিন্তার ইতিহাসকে প্রাচীন, মধ্য এবং আধুনিক এ তিন যুগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়ে থাকে। প্রত্যেক যুগের দর্শন চর্চায় পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। অনেক প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে বাঙালির দর্শন চর্চা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রাচীন যুগে বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে প্রাচীন যুগে বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
ক. বস্তুবাদী চিন্তাধারা : প্রাচীন বাংলায় লোকায়ত সম্প্রদায় সর্বপ্রথম বস্তুবাদী দর্শন চর্চার সূত্রপাত করে। তাদের প্রচারিত ধর্মতত্ত্ব বা মতবাদ ছিল প্রত্যক্ষ নির্ভর ও ইহজাগতিক। সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় তাদেরকে লোকায়ত বলা হয়। তারা বেদের বিরোধিতা করতো এবং জ্ঞানের উৎস হিসেবে প্রত্যক্ষণকে মেনে নিয়েছিল।
খ. ভারবাদী চিন্তাধারা : প্রাচীন বাংলায় বক্তবাদের পাশাপাশি ভারব্বান বা অধ্যাত্মবাদী চিন্তাধারাও লক্ষ করা যায়। অনার্যরা পারলৌকিকতায় বিশ্বাস করতো এবং কল্যাণের জন্য তপস্যা বা উপাসনা করতো। আর্যদের আগমনের পূর্বেই তারা তন্ত্রবাদ,কর্মবাদ প্রভৃতি মতবাদ অনুসরণ করতো এবং পূজাপার্বণ উদযাপন করতো। বেদ ও উপনিষদকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশে অধ্যাত্মবানের সূচনা হয়।
গ. দার্শনিক সল্পনায় : প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য ও বেদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। বেদ বিরোধী নাস্তিক সম্প্রদায় বলতে চার্বাক বা লোকায়ত, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মীয় মতবাদকে বুঝানো হয় এবং বেদ অনুসারী আস্তিক সম্প্রদায় বলতে ষড়দর্শন বলে খ্যাত সাংখ্য, ন্যায়, বৈশেষিক, যোগ, মীমাংসা ও বেদান্ত দার্শনিক সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়। বাঙালি দর্শনের বিকাশে এসব সম্প্রদায়ের অবদান অনস্বীকার্য।
মধ্যযুগে বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে মধ্যযুগে বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
ক. ইসলামি দর্শন : মধ্যযুগে বাংলা মুসলমানদের শাসনাধীনে আসার ফলে আরব বিশ্বের উন্নত সংস্কৃতির সাথে এ দেশীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটে। মুসলিম বিজয়ের পরে এবং পূর্বে যেসব সুফি সাধক এসেছিলেন তাদের মাধ্যমে এদেশে অধ্যাত্মবাদের ব্যাপক প্রসার ঘটে। মুসলমান শাসকনের জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। মুসলমানদের একত্ববাদ,অধ্যাত্মবান, কর্মবাদ প্রভৃতি দ্বারা বাঙালি দর্শন প্রভাবিত হয়েছে ব্যাপকভাবে এবং এ ভাবেই সমৃদ্ধতর দর্শনে পরিণত হয়েছে।
খ. বৈবীয় দর্শন : ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রসার ভ্রাতৃত্ববোধ বাংলার অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের যখন ধর্মান্তরিত করে চলেছে,ঠিক তখন শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব হয়। তিনি প্রেম-দর্শন খ্যাত গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদ প্রচার করেন। তিনি বিদ্যমান মানুষে মানুষে ভেনাভেদ ভুলে নেন। ফলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, যখন সব মিলে এক মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত হলো। তার হাত ধরেই মানবতাবার প্রতিষ্ঠিত হলো। বাঙালি হিন্দু সমাজ লাভ করলো এক অভিনব ও বিস্ময়কর শক্তি ও চেতনা।
গ. বাউল দর্শন : চৈতন্যোত্তরকালে ইসলামের লুফি ধারা, বৈষ্ণবীয় ধারা ও হিন্দু ধারার সমন্বয়ে বাংলা ভূখণ্ডে আত্মপ্রকাশ করে নতুন এক মানবতাবাদী মতবাদ বা তত্ত্ব, যা বাউল তত্ত্ব নামে পরিচিত। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে আজ পর্যন্ত বাঙালি তত্ত্ব হিসেবে বাউল জন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে এবং বাঙালি দর্শনের অন্যতম শক্তিশালী অধ্যাত্মবাদী ধারার স্বীকৃতি পেয়েছে। তাদের তত্ত্ব দর্শনের মার প্রেম, মৈথুন তত্ত্ব, দেহতত্ত্ব প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
উপসসহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, বাঙালি দর্শনের ইতিহাসে প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগ একটি বিশেষ গুরুত্বের স্বীকৃতি বহন করে। এ সময়ই হিন্দু-বৌদ্ধ-ইসলাম ধর্ম বাঙালি দর্শনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে সমস্বয়বাদী দর্শনতত্ত্বে রূপ দান করে। একাধিক বৃহৎ ধর্ম দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে এরূপ প্রভাবিত দর্শন খুব একটা দেখা যায় না। মূলত এরূপ সমন্বয়ের কারণেই বাঙালি দর্শন সমৃদ্ধ দর্শন হিসেবে আত্মাপ্রকাশ করেছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%a6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079 or 01773270077

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*