Answer

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর শিল্পায়নের প্রভাব আলোচনা কর।

অথবা, পরিবেশের উপর শহরায়ন ও শিল্পায়নের যে প্রভাব রয়েছে তা বর্ণনা কর ।
অথবা, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর শিল্পায়নের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
অথবা, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর শিল্পায়নের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্র ও চিন্তাধারার জগতে এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে বদলে গেছে পৃথিবীর মৌল কাঠামো ও মানুষের জীবনযাপন প্রণালিতে এসেছে বিরাট ভিন্নতা যা আধুনিক সভ্যতাকে ত্বরান্বিত করেছে। তবে সভ্যতার এ অগ্রগতির পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে কিছু মারাত্মক
পরিবেশগত ঝুঁকি যা প্রত্যক্ষভাবে শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফল।
পরিবেশের উপর শহরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাব : পরিবেশ প্রধানত ২ প্রকার। যথা : প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ। শিল্পায়নের ফলে মানুষের জীবনধারণ ব্যবস্থা উন্নত হলেও তা উভয় পরিবেশের নানা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পরিবেশের উপর শহরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. বায়ুদূষণ : বায়ুদূষণের ফলে পরিবেশের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন যা শিল্পায়ন ও শহরায়নের প্রত্যক্ষ ফল। গাড়ি ও কলকারখানার কালোধোঁয়া, ইটভাটা প্রভৃতি কারণে এটা ঘটছে। বায়ু দূষণ এর ফলে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে যা সভ্যতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
২. ইটের ভাটা : শহরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন দালানকোঠা। আর এজন্য প্রয়োজন হচ্ছে ইটের। ইটের ভাটা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এর ফলে আবাদি জমি ও বৃক্ষ হ্রাস পাচ্ছে। ভাটাসংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ নানারকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
৩. বৃক্ষনিধন : বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে ভবন নির্মাণের জন্য অনেক বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ নানা পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনছে।
৪. যানবাহনের কালোধোঁয়া : শিল্পায়ন ও শহরায়ণের ফলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। ঢাকা শহরের ৯০% গাড়িই বাতাসে (কার্বন সনোক্সাইড) কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে ।
৫. বর্জ্য ও আবর্জনা : শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন বিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে, তেমনি বেড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যের বিশাল ভাণ্ডার। এ বর্জ্য ও আবর্জনা যত্রতত্র ফেলার ফলে মাটি, বায়ু প্রবলভাবে দূষিত হচ্ছে যা জনজীবনের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক হুমকিস্বরূপ। লুই বার্নার কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় জানা দৈনিক দানাদার বর্জ্যের পরিমাণ ১১৫০ টন। যায় ঢাকায়।
৬. মাটি দূষণ : শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ মাটি ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার, ইটভাটা তৈরি, বৃক্ষনিধোন, শিল্পকারখানার বর্জ্য প্রভৃতি এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
৭. পলিথিন : শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার শুধু হয়েছে। তবে, এটি সম্পর্কে অপচনশীল পদার্থ । ফলে মাটির অভ্যন্তরে বায়ু ও উদ্ভিদের খাদ্য পৌঁছাতে পারে না, মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়, ড্রেনেজ
ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
৮. পানি দূষণ : শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে পানি দূষণের মাত্রা দিনদিন বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশে অধিকাংশ শিল্পকারখানা নদীর তীরে অবস্থিত। এসব শিল্পকারখানা হতে প্রতিদিন নিক্ষিপ্ত বর্জ্য পদার্থ সরাসরি নদীর পানির সাথে মিশে পানিকে মারাত্মক দূষিত করছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের বর্জ্য ব্যাপকভাবে পানিকে দূষিত করছে। দেশের ২৭০টি চামড়া শিল্পের ৯০ ভাগই ঢাকার হাজারীবাগে অবস্থিত। এখানে প্রতিদিন ৭.৭ মিলিয়ন টন তরল, ৮৮ টন কঠিন বর্জ্য পদার্থ নির্গত হয় যার অধিকাংশ বুড়িগঙ্গায় পতিত হয়ে পানিকে দূষিত করে।
৯. শব্দ দূষণ : শিল্পকারখানা, নির্মাণ কাজ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও প্রচারে মাইকের ব্যবহার, যানবাহনের শব্দ প্রভৃতি শব্দ দূষণ সৃষ্টি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিশেষজ্ঞ জোরাল মন্তব্য করেছেন, শব্দ দূষণের ফলে বিরক্তিকরভাবে ক্রোধ, প্রবণতা, মানসিক উত্তেজনায়ুবিক দুর্বলতা, বদহজম ও অবসন্নতার শিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ৩০ শতাংশ মানুষ।
১০. তেজস্ক্রিয়তার কিরূপ প্রতিক্রিয়া : শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। পরমাণু শক্তির গবেষণা, স্বাস্থ্যশিল্প গবেষণা ও কৃষিক্ষেত্রে তেজস্ক্রিতার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশকে ক্রমেই দূষিত করে চলেছে। আর তেজস্ক্রিয়তা মাত্রই জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পায়ন ও শহরায়ন মানবসভ্যতা বিকাশে অপরিহার্য হলেও এটা বিভিন্নভাবে আমাদের পরিবেশ তথা সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যা আমাদের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিরাজমান।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!