Answer

“সাহিত্যের আনন্দের ভোজে, নিজে যা পারি না দিতে, নিত্য আমি থাকি তারি খোঁজে। – ব্যাখ্যা কর।

উৎস : উদ্ধৃত পঙক্তিদ্বয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ঐকতান’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : সাহিত্যসাধনার ক্ষেত্রে নিজের মধ্যে যে অপূর্ণতা কবি লক্ষ করেছেন অন্যদের ভিতর তারই সন্ধান করার কথা আলোচ্য চরণ দুটিতে ব্যক্ত হয়েছে।
বিশ্লেষণ : নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারাটা জীবন নিজেকে সাহিত্যসাধনায় ব্যাপৃত রেখেছিলেন। সাহিত্যের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি কৃতিত্বের সাথে বিচরণ করেননি। এমন সব্যসাচী সাহিত্যিকও নির্দ্বিধায় নিজের সীমাবদ্ধতার কথা ‘ঐকতান’ কবিতায় স্বীকার করেছেন। কবি জন্মেছিলেন সোনার চামচ মুখে নিয়ে। তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কেটেছে উচ্চবিত্ত প্রাচুর্যের মধ্যে। বার্ধক্যে এসে বিশ্বজোড়া খ্যাতি তাঁকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছিল। তাই সাধারণ খেটে খাওয়া তাঁতী জেলে কামার কুমার কুলিদের কথা তেমন করে সাহিত্যে টেনে আনার সুযোগ তিনি পাননি। তাই কৃষাণের জীবনের শরিক যে জন, কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তা করেছে অর্জন, এমন কবির আবির্ভাবের জন্য তিনি গভীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করেছেন। তিনি কান পেতে অপেক্ষা করেছেন সেই মাটির কাছাকাছি কবির কবিতা শোনার জন্য। রবীন্দ্রনাথ নিজের জ্ঞান গরিমা ও শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে কখনো অহঙ্কার করেননি। যেটুকু তিনি অর্জন করেছিলেন তা নিয়ে গর্ব না করে, যেটুকু অর্জন করতে পারেননি তার জন্য আপসোস করেছেন সারা জীবন। নিজের এ দীনতা সম্পর্কে কবি অকপটে বলেছেন-

‘জ্ঞানের দীনতা তাই আপনার মনে
পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে’


জীবন যখন ফুরিয়ে এসেছে, সময় যখন শেষ হয়ে এসেছে কবি তখন নিজের অপূর্ণতা ও অক্ষমতার যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছেন। সাহিত্যের আনন্দ সাগরে তিনি যা দিতে পারেননি প্রতিনিয়ত অন্যদের মধ্যে তার সন্ধান করেছেন। বিনয়াবনত বিশ্বকবির এ সত্যভাষণ ‘ঐকতান’ কবিতার ছত্রে ছত্রে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
মন্তব্য: ব্যাখ্যেয় চরণ দুটিতে কবির ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে উদার মানসিকতার যেমন প্রকাশ ঘটেছে, না পাবার বেদনাও তেমনি ফুটে উঠেছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!