প্রযুক্তিতে নারীর ভূমিকা আলোচনা কর ।
অথবা, প্রযুক্তিতে নারীর অবদান মূল্যায়ন কর।
অথবা, “প্রযুক্তিতে নারীর ভূমিকা আজ অনন্য” ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “প্রযুক্তির উৎকর্ষতার পিছনে নারীর অবদানও উল্লেখযোগ্য” তুমি এই বক্তব্যের সাথে একমত? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানবজীবনের প্রথম চাহিদা ছিল খাদ্য অর্থাৎ ক্ষুধা নিবারণ করা। আর নারীর আহরিত খাদ্য দিয়েই পৃথিবীতে মানুষের ক্ষুধা প্রথম নিবারণ হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার তথা প্রযুক্তি প্রথম আবিষ্কার করে নারী। ফলমূল গাছ থেকে পাড়ার জন্য এবং খাওয়ার জন্য চাকু, ছুরি, লম্বা আগায় লাগানো ধারালো আকশি, গাছের মূল উৎপাটনের জন্য কোদাল, শাবল ও খুন্তি এবং বন্য ফসল মাড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয়, মই ইত্যাদি যন্ত্রপাতি নারীরা উদ্ভাবন করেছিল এবং এসব হাতিয়ার নিজ হাতে তৈরি করতো। সভ্যতার প্রথম থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নারীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
প্রযুক্তিতে নারী : প্রযুক্তি দ্বারা এমন ধরনের জটিল অথচ প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ বা এর ব্যবহারকে বুঝায়, যা দ্বারা স্বল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থ উপার্জন সম্ভব হয়। প্রযুক্তি হলো A set of knowledge an institution and expertise a process used in production. অর্থাৎ, প্রযুক্তির সাথে জড়িয়ে রয়েছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ইমেল প্রভৃতি বিষয়গুলো। প্রযুক্তি মানবজীবনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। মানুষের জীবনে এনেছে স্বাচ্ছন্দ্য। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির কারণেই দ্রুত যে কোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। কারণ ঘরে বসেই এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষের পরামর্শ নেয়া যায় যে কোনো বিষয়ে । তথ্যপ্রযুক্তিতে বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কম্পিউটারের প্রথম প্রোগ্রামার হচ্ছেন কব লর্ড বায়রনের কন্যা লেডি অ্যাডা তথ্যপ্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লেডি অ্যাডার নাম অবিস্মরণীয় হয়ে আছে ।
তথ্য আদান প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম কম্পিউটার হওয়ায় নারীরা কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, টুল ফ্রি কল সেন্টার, এআইটি ওম্যান, গ্রাফিক ডিজাইনার, ওয়েব পেজ ডিজাইনার, হার্ডওয়ার টেকনিশিয়ান প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, এয়ারলাইন টিকেটিং, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি টেস্টিং, রেলওয়ে টিকেট রিজার্ভেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীরা সম্পৃক্ত হচ্ছে। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এবং বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অশিক্ষা, ইংরেজি জ্ঞানের অভাব, প্রয়োজনীয় সময়, আর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ইত্যাদি। এসব বাধা সত্ত্বেও ক্রমে অধিক সংখ্যক নারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে আসছে। একজন নারী-পুরুষের মতো সুযোগ পেলে তারাও সমান দক্ষতা নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে যেতে পারবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে দেখা যায় যে, সভ্যতার আদিতে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু পরে তা পুরুষের দখলে চলে যায়। উন্নয়নে নারীদের অবস্থান বিবেচনা করলে দেখা যায়, নারীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে রয়েছে। বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তিতে নারীদের প্রবেশাধিকার খুব নিম্ন। অথচ উন্নয়নের স্বার্থেই এ সকল ক্ষেত্রে নারী- পুরুষ সমতা জরুরি তাই বলা যেতে পারে, Integration of men and women in development matrix and technological acceptance along with justice and equity is a precondition for any meaningful
growth pattern. প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবাধ প্রবেশাধিকারের মাধ্যমেই নির্ধারণ করা যায় কোনো দেশ বা সমাজ
কতটা আধুনিক এবং জেন্ডার বৈষম্যহীন। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা আনতে হবে তবেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক বেশি উপকৃত হবে এবং তা মানবকল্যাণে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবে।