পৌরসভায় জনগণের অংশগ্রহণের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, পৌরসভায় জনগণের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
স্থানীয়ভাবে জনগণের সমস্যা সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো পৌরসভা। পৌর নাগরিক জীবনে সরকারের বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পৌরসভার উদ্ভব। পৌরসভা সাধারণত সরকারের নির্ধারিত অধ্যাদেশ ও আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নাগরিক সেবা প্রদান করে থাকে। পৌরসভা যেহেতু স্থানীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সেহেতু সেখানে জনগণের অংশগ্রহণ ও সাড়া প্রদান অত্যাবশ্যক। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত
অংশগ্রহণ পৌরসভার কার্যক্রমে গতিশীলতা ও সফলতা দান করে। পৌরসভার কার্যক্রমে সচ্ছতা নিশ্চিত করতেও জনগণের অংশগ্রহণের গুরুত্ব অত্যাধিক।
পৌরসভায় জনগণের অংশগ্রহণের গুরুত্ব : নিম্নে পৌরসভার কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. সুশাসন প্রতিষ্ঠা : পৌরসভায় নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পাল করছে কিনা তা যাচাই করার জন্য জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত অত্যাবশ্যক ও গুরুত্বপূর্ণ। মূলত, পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কর্মকাণ্ডের সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের অংশগ্রহণের কোন বিকল্প নেই। কেবলমাত্র জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণই প্রতিনিধিদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
২. স্বদেশপ্রেম জাগ্রত : পৌর সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ জাতীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। তারা স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মনোভাব লাভ করে। এতে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় স্বদেশ প্রেম।
৩. অধিকার ও দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন : পৌরসভার কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণ নিজস্ব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। তারা তাদের নিজস্ব দায়িত্ব ও সৃজনশীলতাক কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নযন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। পৌরসভার কার্যক্রমে জনগণের ফলে পৌরবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। ক্রমশ পৌর এলাকার অবহেলিত ও নির্বিকার জনগণ তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে।
৪. নেতৃত্বের বিকাশ : সঠিক নেতৃত্ব জাতিকে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। পৌর সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ফলে পৌরবাসীর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। ফলে পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে সফল নেতৃত্বদানের মাধ্যমে জাতিকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করে। বলা যায়, যে নেতা তার নিজ এলাকাকে স্বার্থকভাবে নেতৃত্বদান করতে পারে না, তার পক্ষে কোন মতে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বদান করা সম্ভব নয়।
৫. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সৃষ্টি : পৌরসভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ পৌরবাসীরদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্ম দেয়। গণতন্ত্র হলো বিশাল অট্টালিকা যার ভিত্তি প্রস্তর হলো স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন। অর্থাৎ নিচ থেকে গণতন্ত্রকে সুষ্ঠুভাবে বিকশিত করতে না পারলে জাতীয় পর্যায়ে তা সম্ভব নয়। সুতরাং পৌর এলাকায় পৌর সভাই গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল, এখান থেকেই গণতন্ত্রের পদযাত্রা শুরু হয়। এ জন্য লর্ড ব্লাইস (Lord Bryce) পৌর সভাগুলোকে গণতন্ত্রের বিদ্যালয় বলে অভিহিত করেছেন।
৬. সুনাগরিক গুণাবলীর বিকাশ : পৌরসভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ জনসাধারণের মধ্যে সুনাগরিকতার গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। যারা এসব প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা, ত্যাগের মানসিকতা, পরমত সহিষ্ণুতা,সহযোগিতা প্রভৃতি গুণাবলীর বিকাশ হয়।
৭. পৌর সভার কার্যক্রমে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে এক শ্রেণির টাউট ও দালাল প্রকৃতির লোক সাধারণ মানুষের সুবিধাকে নিজেরা ভোগ করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে তাই পৌরবাসীর প্রাণের প্রতিষ্ঠান পৌর সভাকে এ ধরনের কুচক্রী মহলের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন জনগণের সঠিক মাত্রায় অংশগ্রহণ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যে মহান আদর্শ ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে পৌর সভা ব্যবস্থাকে প্রবর্তন করা হয়েছে তার সঠিক বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও নির্বাচিত পৌর প্রতিনিধিদের ভূমিকাই যথেষ্ট নয়। এজন্য প্রয়োজন পৌর এলাকার জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত, সক্রিয় ও কার্যকর অংশ গ্রহণ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*