পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের কারণসমূহ কী কী?
অথবা, পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের কারণগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের কারণ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের পাঁচটি কারণ উল্লেখ কর।
অথবা, পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের কারণ আলোচনা কর।
অথবা, কী কারণে পুরুষতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে?
উত্তর৷ ভূমিকা : নারী যে চিরদিনই পুরুষের অধীন ছিল এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ইতিহাসের ধারায় এক সময় সমাজের ধনসম্পত্তির উপর পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো এবং ব্যক্তিগত মালিকানা প্রবর্তিত হলো। সেই সময় থেকেই নারী জাতি পুরুষের পরাধীন হয়ে গেল এবং শেষ পর্যন্ত নারী পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হলো। এভাবে পুরুষতন্ত্রের উদ্ভব ঘটল।
পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের কারণ : পুরুষতন্ত্রের মূল কথা হলো, পুরুষ প্রভু ও নারী পুরুষের সেবাদাসী। নিম্নে পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. প্রজননগত কারণ : জৈবিক কারণই প্রজননে নারী ও পুরুষের ভূমিকার পার্থক্য রয়েছে। জৈবিকভাবে পরিণত পুরুষ শুক্রাণুর অধিকারী এবং পরিণত বয়সের নারী ডিম্বাণুর অধিকারী। প্রজননে নারীর ভূমিকাকে আড়ালে রেখে পুরুষতন্ত্র সমাজের স্থিতি ও সংরক্ষণে মুখ্য চালিকাশক্তি বলে উপস্থাপিত করে পুরুষ নারীর উপর জিন কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ‘নারীর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য পুরুষতন্ত্রের সৃষ্টি হয়।
২. যৌনতা : প্রকৃতির সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী নারী ও পুরুষ যৌন সুখ অনুভবের জন্য যৌন মিলনে মিলিত হয়। আদিকাল হতেই নারী ও পুরুষের যৌন মিলনে পুরুষকে কর্তা বা কর্ম সম্পাদক এবং নারীকে পুরুষের কর্ম সম্পাদনের বস্তু মনে করা হয়। নিজের সন্তুষ্টি নয়, পুরুষের সন্তুষ্টি মুখ্য করে দেখা নারীর যৌনতার একমাত্র উদ্দেশ্য। এভাবে যৌন মিলনে পুরুষের ভূমিকাকে মুখ্য করে দেখে নারীকে পুরুষের সেবা দাসী করে পুরুষতন্ত্রের উদ্ভব হয়।
৩. ধর্ম : ধর্মীয় বিধিবিধান পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের অন্যতম কারণ। ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মে আদি পিতা আদমকে সৃষ্টি করা হয় আদি মাতা ইভ বা হাওয়ার। আগে নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের পাজরের হাড় থেকে। নারী নিজের শরীরের জন্য পুরুষের কাছে ঋণী। শুধু স্বামী সেবার সাহায্যেই নারী স্বর্গে যাবে। সব ধর্মে নারী অসম্পূর্ণ মানুষ। এভাবে
ধর্মীয়ভাবে পুরুষতন্ত্রের শিকড়ের বিস্তৃতি ঘটেছে।
৪. উৎপাদন পদ্ধতি : অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে পিতৃতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে উৎপাদনের উপকরণের মালিক হয়ে যায় পুরুষ। পুরুষ কৃষি, শিল্প সর্বক্ষেত্রে নিজেদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র তৈরি করে। নারীর বিচরণ ক্ষেত্র হয় গৃহকর্মে। নারীর শ্রমে উৎপাদিত পণ্য দৃশ্যমান নয়। যার অর্থনৈতিক মূল্য নেই। নারী অর্থনৈতিকভাবে পুরুষের উপর হয়ে পড়ে। যা পুরুষতন্ত্র উদ্ভবের পেছনে প্রধান অনুঘটক।
৫. পুঁজিবাদী সমাজ : সমাজ বিকাশের ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাদী সমাজ সৃষ্টি হলে পুরুষের আধিপত্য চরম আকার ধারণ করে। এ সমাজে উৎপাদনের উপকরণের অধিকাংশ মালিক পুরুষ। এ সমাজে নারীদের শিক্ষা, ভোট, চাকরি, ইত্যাদির সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের আলোকে নারী নিজেকে গড়ে তুলেছে। পুরুষতন্ত্রকে তারা
স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পুরুষতন্ত্রের তিনটি সংস্থা-পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। পুরুষতন্ত্র পরিবারের প্রধান পুরুষটাকেই দিয়েছে সমস্ত কর্তৃত্ব। সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মীয় বিধানের সাহায্যে পুরুষতন্ত্র বহাল রাখা হয়েছে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রজন্ম হতে প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারণ করা হয়।