পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা লিখ
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির উপকারিতাসমূহ কী কী?
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধাগুলো তুলে ধর।
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির উপকারিতাসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রতিটি বিজ্ঞানই তার বিষয়বস্তু আলোচনা করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে । বিজ্ঞান হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানও এর ব্যতিক্রম নয়। আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান হিসেবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান যে কয়টি পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে, তার মধ্যে পরীক্ষণ পদ্ধতিটি অন্যতম ।
পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা : পরীক্ষণ একটি শক্তিশালী গবেষণা পদ্ধতি । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষণ পদ্ধতির অনেক সুবিধা রয়েছে। নিম্নে পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসরণ : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক নিয়ম নীতি সবচেয়ে বেশি মেনে চলা হয়। এর ফলে ফলাফল অনেক বেশি নির্ভরশীল হয় ।
২. চলের নিয়ন্ত্রণ : এ পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হলো এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অনুসন্ধান কার্য পরিচালনা করা হয় বলে কোন অবাঞ্ছিত চল পরীক্ষণে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
৩. চলের পরিবর্তন : পরীক্ষণ পরিবেশ পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে পরীক্ষক ইচ্ছামতো চলের পরিবর্তন করতে পারেন ।
৪. পরীক্ষণের পুনরাবৃত্তি : পরীক্ষণ পদ্ধতির আর একটি সুবিধা হলো পুনরাবৃত্তি। দৃষ্টান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি করে (Multiplication of instances) এ পদ্ধতিতে কোন বিষয়ের উপর বারবার পরীক্ষণকার্য পরিচালনা করা যায় । আমাদের প্রয়োজনমতো কৃত্রিম অবস্থাগুলো আমরা বারবার সৃষ্টি করতে পারি এবং যে মানসিক প্রক্রিয়াটিকে আমরা জানতে চাই বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। পরীক্ষণকার্য আমাদের সুযোগ, সময় এবং উদ্দেশ্য অনুযায়ী সম্পন্ন হতে পারে । মানসিক প্রক্রিয়া কখন স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে ঘটবে, তার জন্য অনির্দিষ্ট প্রতীক্ষায় বসে থাকতে হয় না।
৫. পরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ : পরীক্ষণের নিয়মাবলি ও ফলাফল বস্তুনিষ্ঠভাবে অন্যান্য বৈজ্ঞানিক অবগতির জন্য প্রকাশ করা যায় । ইচ্ছুক বৈজ্ঞানিক তা যাচাই করে দেখতে পারেন।
৬. সংক্ষিপ্ত ও সঠিক ফলাফল · পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে ফলাফল সংক্ষিপ্ত ও সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায়। এ পদ্ধতিতে ফলাফল ব্যক্তিদোষে দুষ্ট হতে পারে না। তাই ফলাফল অধিক নির্ভরযোগ্য হয়।
৭. সাধারণীকরণ : পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি বিশেষ সুবিধা হলো ফলাফলের সাধারণীকরণ । সাধারণীকরণের অর্থ হলো অল্পসংখ্যক দৃষ্টান্ত থেকে সাধারণ সত্যে উপনীত হওয়া। পরীক্ষক পৃথিবীর সকল লোকের উপর বা সকল প্রাণীর উপর পরীক্ষণ চালাতে পারেন না। তিনি মানুষ বা প্রাণীর একটি প্রতিনিধিত্বমূলক দলের উপর পরীক্ষণ করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সকল মানুষ বা প্রাণীর ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন ।
৮. অনির্ভরশীল চলের পরিবর্তন ও তথ্যের বিশ্লেষণ : পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে আমরা অনির্ভরশীল চলের পরিমাণগত পরিবর্তন এবং প্রাপ্ত তথ্যের সংখ্যাত্মক বিশ্লেষণ করতে পারি ।
৯. মানসিক প্রত্রিয়ার বিভিন্ন দিক : পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে মানসিক প্রক্রিয়ার অন্তর্দর্শন ও পর্যবেক্ষণ, অর্থাৎ এর অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ উভয়দিকই জানা যায় । ফলে মানসিক প্রক্রিয়ার পূর্ণরূপের পরিচয় পাওয়া যায় ।
১০. মানসিক ও দেহগত প্রক্রিয়ার সম্বন্দ্ব : মানসিক প্রক্রিয়া ও দেহগত প্রক্রিয়ার যে পরিমাণগত সম্পর্ক (Quantitative ht relations of mental processes to physiological processes) পরীক্ষণের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা যায় ।
১১. বস্তুনিষ্ঠতা : পরীক্ষণ পদ্ধতি বস্তুনিষ্ঠ । অর্থাৎ, এর উপর পরীক্ষণের কোন ব্যক্তিগত প্রভাব পড়ে না ।
১২. যথার্থতা প্রমাণ : পরীক্ষণ পদ্ধতির আরেকটির গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো ফলাফলের যথার্থতা প্রমাণ । বৈজ্ঞানিক
তার দীর্ঘদিনের গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে কোন সিদ্ধান্ত বা ফলাফল প্রকাশ করলেই তা বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না । পৃথিবীতে যে কোন বিজ্ঞানী একই বিষয়বস্তুকে নিয়ে ফলাফলের যথার্থতা নির্ণয়ের জন্য বারবার পরীক্ষা ও গবেষণা করতে পারেন। বিজ্ঞানী তার গবেষণামূলক নিবন্ধে তার সমস্যা, পরিবেশ এবং গবেষণামূলক পদ্ধতির উল্লেখ করে থাকেন । কাজেই যে কোন পরীক্ষক সে পরিবেশ সৃষ্টি করে সে বিশেষ সমস্যা নিয়ে সেসব বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে উক্ত পরীক্ষণটির ফলাফল মূল্যায়ন করে দেখতে পাবেন ।
১৩. ফলাফল পরিসংখ্যানের ভাষায় প্রকাশ : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ফলাফল পরিসংখ্যানের ভাষায় প্রকাশ ও বিশ্লেষণ করা যায় ।
১৪. নির্ভুল ও মার্জিত তথা : পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে নির্ভুল, যথার্থ, মার্জিত ও সংক্ষিপ্ত তথ্য পাওয়া যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, কিছু অসুবিধা থাকলেও পরীক্ষণ পদ্ধতিটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণায় একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, সংখ্যাতত্ত্বের উন্নতিসাধন ও ব্যাপক প্রচলন এবং সর্বোপরি গবেষণার নতুন নতুন উপকরণ আবিষ্কারের ফলে পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যাপক প্রসার লাভ ঘটেছে ।