পরিকল্পনা কী? পরিকল্পনার সংজ্ঞা দাও। পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, পরিকল্পনা বলতে কী বুঝ? পরিকল্পনার সংজ্ঞা দাও। একটি উত্তম পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, পরিকল্পনা কী? পরিকল্পনার সংজ্ঞা লেখ। একটি উত্তম পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যমালা আলোচনা কর।
অথবা, পরিকল্পনা কাকে বলে? পরিকল্পনার প্রামাণ্য সংজ্ঞা দাও ।
অথবা, একটি উত্তম পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, পরিকল্পনা কী? পরিকল্পনা প্রত্যয়টিকে সংজ্ঞায়িত কর। ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি উত্তম পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, পরিকল্পনা কী? পরিকল্পনার সংজ্ঞা দাও। একটি উত্তম পরিকল্পনার মানদণ্ডগুলো আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য আওতাধীন সম্পদের সুসম বণ্টনের নিমিত্তেমভবিষ্যৎ কার্যাবলির সুশৃঙ্খল পদক্ষেপই হচ্ছে পরিকল্পনা। যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ।
পরিকল্পনা : উন্নয়নের কৌশল নির্ধারণের পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক। পরিকল্পনা হচ্ছে প্রত্যাশিত কোনো কার্যসম্পাদনের পূর্ব প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় মূলত কোনো কার্যক্রম, প্রক্রিয়া বা কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে। অর্থাৎ সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত, সুনিয়ন্ত্রিত ও ধারাবাহিকবাবে কার্য পরিচালনার পাশাপাশি যথাযথ, অর্থবহ ও কার্যকর ফলাফল অর্জনের সহায়ক ব্যবস্থাই হচ্ছে পরিকল্পনা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : পরিকল্পনার সংজ্ঞা সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
Barker এর মতে, “পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণ, সেগুলো অর্জনের বিভিন্ন পন্থার মূল্যায়ন এবং উপযুক্ত কার্যক্রমের সুচিন্তিত বাছাই প্রক্রিয়া।”
জন ডি, ডিলেট (Johan D. Dillett) এর মতে, “Planning is the process of determining the adjective of administrative effort and of devising the means calculated to achieve them.”
Secker Hudson এর ভাষায়, “পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যৎ কর্মধারার ভিত্তি উদ্ভাবনের এক বিশেষ প্রক্রিয়া।”
Walter এর ভাষায়, “পরিকল্পনা হচ্ছে প্রাকচিন্তা, অভ্যন্তরীণ চিন্তা, বাহ্যিক চিন্তা এবং সামগ্রিক চিন্তা।”
M. L. Jhingan এর মতে, “পরিকল্পনা হচ্ছে একটা কৌশল, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পূর্বনির্ধারিত পদ্ধতি প্রণয়ন। এটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত হয়। পরিকল্পনা অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা সামরিক প্রভৃতি বিবিধ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রণীত হতে পারে । এটা বিভিন্ন পরিকল্পনার সমন্বয়েও গঠিত হতে পারে।” পরিশেষে বলা যায় যে, বহুসংখ্যক অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্য থেকে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় লক্ষ্যসমূহ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নির্ধারণ, সংশিষ্ট সকল বিকল্পসমূহ যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও লক্ষ্যার্জনে সীমিত সম্পদের যুক্তিগ্রাহ্য বিভাজনই হচ্ছে পরিকল্পনা। –
পরিকল্পনা/একটি উত্তম পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহ : অতীত ও বর্তমান অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যৎ কার্যসম্পাদনের সুচিন্তিত ও কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে পরিকল্পনা। সব ধরনের পরিকল্পনার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় যেগুলো পরিকল্পনা গঠন, বাস্তবায়ন কার্যক্রম প্রভৃতি বিভিন্ন দিককে নির্দেশ করে থাকে। পরিকল্পনা কেবল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহই স্থির করে না, বরং উক্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ কার্যকর করায় পর্যায়ক্রমিক ধারাও স্থির করে; আর সে সাথে এগুলোর সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা ও নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ড নির্ধারণ করে। একটি উত্তম পরিকল্পনার নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে । যথা :
১. সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত : একটি উত্তম পরিকল্পনার উদ্দেশ্যসমূহ সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত এবং সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণিত থাকে ।
২. নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : একটি আদর্শ পরিকল্পনা সবসময়ই নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যভিত্তিক।
৩. পূর্ণাঙ্গ বিবরণ : উত্তম পরিকল্পনায় সকল প্রকার প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে।
৪. সুপরিবর্তনীয় : উত্তম পরিকল্পনাকে সুপরিবর্তনীয় হতে হয় যাতে করে আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সাথে খাপখাওয়ানো সম্ভবপর হয়।
৫. আকস্মিক ঘটনার জন্য প্রস্তুতি : উত্তম পরিকল্পনাকে অনিশ্চিত বিষয়াদির মোকাবিলাকল্পে আকস্মিক সম্ভাব্য ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
৬. সম্ভাব্যতা পরীক্ষা : উত্তম পরিকল্পনা বারংবার বা ঘন ঘন সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে।
৭. পরিব্যাপ্ত করা : উত্তম পরিকল্পনা এর একনিষ্ঠ সমর্থকদের কাছে পরিকল্পনার বিষয়াদি সঠিকভাবে পরিব্যাপ্ত করে দেয়।
৮. সামঞ্জস্য রক্ষা : উত্তম পরিকল্পনা প্রাপ্ত সম্পদের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে কি করণীয় তা স্থির করে।
৯. লিখিত : উত্তম পরিকল্পনা লিখিত আকারে বিদ্যমান থাকে ।
১০. অভিজ্ঞতা ও তথ্যভিত্তিক : এটি সব সময় বাস্তবভিত্তিক অভিজ্ঞতা ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়।
১১. চলমান প্রক্রিয়া : একটি উত্তম পরিকল্পনা শুধু গঠনের মধ্য দিয়ে পরিকল্পনার কার্যক্রম শেষ হয় না, বরং এটি একটি চলমান বা গতিশীল প্রক্রিয়া।
১২. কর্মসংগঠনসমূহের নিয়ন্ত্রণ : পরিকল্পনা কর্মপ্রক্রিয়ার পাশাপাশি কর্মসংগঠনসমূহের ব্যবস্থাপনা, অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণকে নির্দেশ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পরিকল্পনা একটি সুচিন্তিত ও সুশৃঙ্খল কর্মপ্রক্রিয়া। এটি বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ। পরিকল্পনা সবসময়ই নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যভিত্তিক হয়ে থাকে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*