পয়সাই এখানকার জীবন নিয়ন্ত্রিত করিতেছে, প্রাণের কোন মূল্য ইহারা দেয় না।”- বিশ্লেষণ কর।

উৎস : প্রশ্নর জন্য নির্বাচিত অংশটুকু শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্পের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : নাগরিক জীবন সম্পর্কে গহুরালি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল, আলোচ্য বাক্যটিতে তারই প্রকাশ ঘটেছে।
বিশ্লেষণ : নতুন রাস্তা নির্মিত হবার পর গহুরালি তার সব কয়টি জামা গায়ে দিয়ে, মুখে, মাথায় ভালো করে তেল মেখে, শহর দেখতে বেরিয়ে পড়ে। শহরের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, দোকানপাট আর এখানকার l মানুষের চালচলন ও জীবনপদ্ধতি দেখে সে খুবই অভিভূত হয়। শহুরে মানুষের সুখ, ঐশ্বর্যময় জীবন তার কাছে পরম লোভনীয় বলে মনে হয়। তবে এ জীবনের সবকিছুই তার কাছে সুখকর কিংবা প্রশংসনীয় বলে মনে হয় না। শহরের মানুষদের মধে সে আন্তরিকতার প্রকট অভাব লক্ষ করে। এখানে কেউ যেন কারো দিকে ফিরে তাকায় না। কেউ কারো সাথে কোন কুশল বিনিময় করে না। বিশেষ করে দরিদ্র ও অপরিচিত জনের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। এ অভিজ্ঞতা গহুরালিকে পীড়িত করে। শহরের পথে ঘুরতে ঘুরতে সে একবার দেহপসারিণীদের এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়ে। দেহজীবী ঐ নারীদের মদির কটাক্ষকে সে আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ আহ্বান বলে মনে করে। কিন্তু সে ভুল ভাঙতে তার দেরী হয় না। অল্প কিছু মুহূর্ত পরেই সে অনুভব করে যে পয়সাই এখানকার সব সম্পর্কের উৎস। পয়সাই এখানে নিয়ন্ত্রণ করছে সবকিছু। এখানে হৃদয় বা ব্যক্তির চেয়ে পয়সার মূল্য অনেক বেশি। জীবনের সবকিছু এখানে পয়সার কাছে বন্দী। পয়সা ছাড়া জীবনের কোন মূল্য নেই। হৃদয়ের উষ্ণ অনুভব এখানে অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন। মানুষ এখানে নিঃসঙ্গ ও একাকী। হৃদয়ের উষ্ণতা হারিয়ে সে হয়ে পড়েছে অনেকখানি যান্ত্রিক। বণিক সভ্যতা শুষে নিয়েছে তার হৃদয় বৃত্তির সুকোমল অংশগুলো। অর্থের দুর্গে বন্দী মানবাত্মার এক অব্যক্ত হাহাকার তাই গুমরে মরে এখানকার আকাশে বাতাসে।
মন্তব্য : বণিক সভ্যতার কাছে নতজানু নাগরিক জীবনের অর্থই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*