নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।

অথবা, নেতৃত্বের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
নেতৃত্ব হলো ব্যক্তির এমন কতিপয় গুণাবলি যা জনগণকে বা গোষ্ঠী সদস্যকে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ ও পরিচালিত করে। করতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন জনগণ বা কোন গোষ্ঠী বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তি সংগঠন, নীতিমালা, আদর্শ, যোগাযোগ, সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা দ্বারা কিছুই ঐক্যবোধ সৃষ্টি। এগুলো অর্জন কেবল মাত্র নেতৃত্বের গুণাবলি বিশিষ্ট ব্যক্তির মাধ্যমেই সম্ভব। তাই যে কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রথম শর্ত হলো নেতৃত্ব যিনি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনা করে বিশ্বস্ততা ও আস্থা অর্জন করেন। এ আস্থা ও বিশ্বস্ততাই গোষ্ঠীকে লক্ষ্য অর্জনে সফল করে তোলে। তাই নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা : যোগ্য নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাণবন্ত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। জাতীয় অগ্রগতির জন্যও চাই সুযোগ্য নেতৃত্ব। যেসব কারণে নেতৃত্ব অত্যাবশ্যকীয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. নীতিনির্ধারণ : নীতিনির্ধারণের মাধ্যমেই কোন গোষ্ঠী তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। আর নেতা দেশ ও জনগণের স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সুষ্ঠু নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সচেষ্ট হন। কাজেই সুষ্ঠু নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের জন্য নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
২. দায়িত্ব নির্ধারণ ও বণ্টন : লক্ষ্য অর্জনের জন্য নীতিনির্ধারণ করে বিভিন্ন পর্যায়ে কে কি দায়িত্ব পালন করবে তা নেতারাই বণ্টন করে থাকেন। অর্থাৎ, দায়িত্ব নির্ধারণ ও তা সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের জন্য নেতৃত্বের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৩. কাজের সমন্বয় সাধন : নেতৃত্ব গোষ্ঠীর ক্রিয়াকলাপের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে থাকে। গোষ্ঠীর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে না পারলেও গোষ্ঠীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যাতে বাস্তবে পরিণত হয় সে দায়িত্ব অবশ্য নেতাকেই পালন করতে হয়। তাই এক্ষেত্রেও নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৪. সংগঠন ও কাজে শৃঙ্খলা : যে কোন সংগঠন ও তার কাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব হলো উক্ত সংগঠনের নেতার। আর এ শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হলো সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা করা। এসব কাজ যেহেতু নেতাকেই পালন করতে হয়, সেহেতু
এক্ষেত্রেও নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৫. সমস্যা সমাধানে অপরের উপদেশ ও ধারণা আহ্বান : একথা সত্যি যে, বিশিষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার জন্যই কোন ব্যক্তি অনেক সময় দলের নেতা নির্বাচিত হন। তবে নেতারা যে সব বিষয়ই জানেন এমন কথা নয়। তাই অনেক সময় দেখা যায় যে, বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে নেতারা এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফলে তারা সমস্যা
সমাধানের ক্ষেত্রে অন্যান্যের ধারণা, উপদেশ ও পরামর্শ আহ্বান করে থাকেন। তবে সবকিছু বিবেচনা করে যেহেতু নেতাকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় তাই নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
৬. অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ : অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গোষ্ঠীর সকল খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি নেতাকেই দৃষ্টি রাখতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
৭. কাজের জবাবদিহিতা : কাজের জবাবদিহিতা অর্জনের জন্য নেতৃত্ব অপরিহার্য। যেমন- গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দেখা যায় যে, জনগণ সকল ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কারণে সরকারকে তার ভালোমন্দ সকল কাজের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। অর্থাৎ, নেতাদেরকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। ফলে ইচ্ছা করলেই তারা যে কোন কাজ করতে পারে না।
৮. সংগঠনের মধ্যে আস্থা অর্জন : যে কোন সংগঠনের নেতা সংগঠনের মধ্যকার দায়দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করে এবং তা সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে সংগঠনের মধ্যে আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়। অতএব, সংগঠনের মধ্যে আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা যে রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়।
৯. নেতার ধারণা ও আদর্শ অপরের কাছে প্রকাশ করা : সংগঠনের জন্য কোন দিকটা ভালো আর কোন দিকটা মন্দ সে সম্পর্কে নেতার যে ধারণা রয়েছে তা অন্যের কাছে প্রকাশ করে এবং তাদের দেওয়া মতামতের উপর ভিত্তি করে নেতাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। কাজেই এক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
১০. সংগঠনে মানবিক সম্পর্ক স্থাপন : সংগঠনে বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন- সংগঠনের কেউ যদি কোন ধরনের অসুবিধায় পড়ে তাহলে অন্যান্য সদস্য আন্তরিকভাবে তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, একটি জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য নেতৃত্বের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। সুষ্ঠু নেতৃত্ব ছাড়া কোন জাতি উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে না, বরং অযোগ্য নেতৃত্বের কবলে পড়ে একটি জাতি অতি অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা ভেবেই নির্বাচন
করতে হবে। দেশের ও জাতির জন্য ক্ষতিকর নেতৃত্বকে কখনই মেনে নেওয়া উচিত নয়। সঠিক পথ প্রদর্শন ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে উন্নতির চূড়ায় পৌঁছে দেওয়াই হবে নেতৃত্বের একমাত্র লক্ষ্য। জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় সংহতি সংরক্ষণে যোগ্য নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*