নীরবতা পাখা গুটিয়ে নিশ্চল হয়ে রয়েছে, আর জমাট বাঁধা ঘনায়মান কালোরাত্রি পর্বতের মতো দীর্ঘ, বৃহৎ ও দুর্লঙ্ঘ্য।” ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘নয়নচারা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে বানভাসি মানুষের কাছে শহরের অপরিচিত কালোরাত্রির স্তব্ধতা কীভাবে মূল্যায়িত হয়েছে, লেখক সে সম্পর্কে মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : বন্যার করালগ্রাসে ভিটেমাটি হারিয়ে একদল উদ্বাস্তু মানুষ শহরে এসেছে আশ্রয়ের জন্য, খাদ্যের জন্য। এ বানভাসি মানুষদের একজন আমু। ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে নয়নচারা গ্রামের বাসিন্দা সে। বন্যার অত্যাচারে টিকতে না পেরে আমু অন্যান্যদের সাথে শহরে এসেছে বেঁচে থাকার তাগিদে। কোথাও আশ্রয় না পেয়ে ওরা শহরের প্রশস্ত রাস্তার ফুটপাতে থাকতে বাধ্য হয়েছে। ফুটপাতে আমুরা সব এলিয়ে পড়ে থাকে খড়কুটোর মতো। দুপুরের দিকে লঙ্গরখানা থেকে দু’মুঠো খেতে পায় ওরা। তাই সারাদেহের ক্লান্তি রাতের বেলায় ঘুম হয়ে ওদেরকে অবশ করে ফেলে। কেবল ঘুম আসে না আমুর চোখে, মাঝে মাঝে কুয়াশা নামে তন্দ্রার। কখনও যদিওবা ঘুম আসে তা মনে নয়, দেহে। মন তার জেগে থেকে ময়ূরাক্ষীর তীরে তীরে ঘুরে বেড়ায়। ভুতনি নামের একজন রাতের বেলা কাশে। একবার শুরু হলে থামতে চায় না তার কাশি। তার কাশি শুনে মনে হয় দম বন্ধ না হলেও কাশি থামবে না। ভুতনির ভাই ভুতো গলায় ঘড় ঘড় আওয়াজ করে ঘুমায়। ভুতনি কাশতে কাশতে হাঁপায়। এছাড়া আর কোন শব্দ শোনা যায় না ওই কালোরাত্রির বুকে। সব শান্ত স্তব্ধ। নীরবতা যেন পাখা গুটিয়ে নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকে। আর জমাটবাঁধা কালোরাত্রি বৃহৎ, দীর্ঘ ওদুর্লঙ্ঘ্য। এ রাত্রি শেষ হতে চায় না। বানভাসি মানুষের প্রতিনিধি আমু এ অসহনীয় রাতের চেহারা দেখে বিস্মিত হয়। ময়ূরাক্ষী তীরের রাত এত দীর্ঘ ও অনতিক্ৰমণীয় নয়।
মন্তব্য : শহরের দুর্লঙ্ঘ্য রাত এবং গ্রামের স্বাভাবিক রাতের মধ্যে পার্থক্য অনেক, যা আলোচ্য বাক্যে ফুটে উঠেছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!