Answer

নিভৃতে সাহিত্যের রসসম্ভোগের উপকরণের বেষ্টন হতে একদিন আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : ইংরেজি সাহিত্যের মোহে আবিষ্ট লেখকের মোহভঙ্গের প্রেক্ষাপট বর্ণনা প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন পাশ্চাত্য সভ্যতার আলোকে আলোকিত জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। তাই কৈশোর ও যৌবনে তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। শেক্সপিয়ারের নাটক ও বায়রনের কবিতা পাঠ করে তিনি ইংরেজ জাতির চরিত্রে নিহিত মানবমৈত্রীর বিশুদ্ধ পরিচয়ের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন। তাই আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়ে লেখক ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেন। তাঁর বয়স যখন অল্প তখন তিনি ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। সেখানে বিখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান জন ব্রাইটের পার্লামেন্টে ও পার্লামেন্টের বাইরের কোন কোন সভার বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেসব ভাষণে তিনি চিরন্তন ইংরেজের শাশ্বত বাণী শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর সাহিত্যানুরাগ ইংরেজকে উচ্চাসনে বসিয়েছিল বলে লেখক মনে করেন। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পাশ্চাত্য সভ্যতার নগ্নরূপটি তাঁর চোখের সামনে উন্মোচিত হয়। তিনি এ সভ্যতার অন্তঃসারশূন্যতাকে প্রত্যক্ষ করেন তাদের সাম্রাজ্য মদমত্ততার হিংস্রতার মধ্যে। এ সময় তিনি দেখতে পেলেন, সভ্যতাকে যারা চরিত্র উৎস থেকে উৎসারিত রূপে স্বীকার করেছিল, রিপুর তাড়নায় তারা তাকে অনায়াসে লঙ্ঘন করে গেল। লোভ-লালসার দ্বারা তাদের মহত্ত্ব পদদলিত হলো। এমতাবস্থায় রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজি সাহিত্যের রস সম্ভোগের উপকরণের বেষ্টন থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সেদিন ভারতবর্ষের জনসাধারণের যে নিদারুণ দারিদ্র্য তাঁর সম্মুখে উদ্ঘাটিত হলো তা হৃদয়বিদারক।
মন্তব্য : ইংরেজ সভ্যতার সাম্রাজ্যবাদী হিংস্রতার পরিচয় পেয়ে লেখক ইংরেজি সাহিত্যের বেষ্টন থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!