নারী শিক্ষার অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকারের নীতি ও কর্মসূচির বর্ণনা কর।

অথবা, নারী শিক্ষার অগ্রগতিকল্পে সরকারি পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দাও।
অথবা, নারী শিক্ষার অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপসমূহ এবং কতিপয় সুপারিশ তুলেধর।
অথবা,
বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং বাস্তবায়ন করেছে।
উত্তর৷ ভূমিকা : “
শিক্ষা হচ্ছে সেই সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ যার মাধ্যমে লোকে নিষ্ক্রিয়তার পরিবর্তে অংশগ্রহণএবং প্রতিবিধানের নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অভ্যাস গড়ে তুলতে শেখে”- পাওলো ফেইর। শিক্ষা একটি মানবাধিকার । শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যত্বের বিকাশ, সুপ্ত গুণাবলিকে জাগ্রত করে তোলা, জাগতিক পরিবেশের সাথে পরিচয়
করিয়ে দেয়া। একটি দেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে সুফল পেতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারী শিক্ষাও সমান গুরুত্বের দাবিদার। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নিম্নে এগুলো তুলে ধরা হলো :
সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ : শিক্ষা ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। কেবলমাত্র একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশকে পৌছে দিতে পারে উন্নতির চরম শিখরে। যেহেতু দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, তাই নারীসমাজকে অবশ্যই শিক্ষিত করে তুলতে হবে। ব্যক্তিজীবনে একজন শিক্ষিত স্ত্রীর, একজন শিক্ষিত মায়ের যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি প্রয়োজন রয়েছে সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে শিক্ষিত নারীর। তাদেরকে কারিগরি শিক্ষা থেকে শুরু করে যাবতীয় শিক্ষার সুযোগ দিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সমসুযোগ সৃষ্টি করা আবশ্যক। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষা প্রসারে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সেগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো :
১. বর্তমানে সবার জন্য শিক্ষা-২০০০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০০৫ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।
২.১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ সালের মধ্যে সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য নতুন কিছু কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়।
৩.১৯৯০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৯২ সালে ৬৮টি থানায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয় এবং ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাস হতে সারা দেশে তা সম্প্রসারিত করা হয়।
৪. নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে ১৯৯২ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৫.সরকার আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার উদ্দেশ্যে প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাথমিকবিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
৬.ছাত্রীদের বেতন মওকুফ করা হয়েছে এবং বিনামূল্যে পাঠ্যবইও সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকার ২০০২ সাল থেকে বিনাবেতনে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
৭.শিক্ষক ও শিক্ষিকা নিয়োগে ৬০% শিক্ষিকা নিয়োগের বিধান রয়েছে।
৮. ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার হ্রাস করার জন্য সরকার উপবৃত্তি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। একজনের জন্য ২০০/= এবং দুটি সন্তানের জন্য ৩০০/= হারে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
উল্লিখিত কর্মসূচির বাইরেও আরো কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। যেমন-
১. শিক্ষাখাতে অর্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে : বর্তমানে মাত্র ২.১% জাতীয় আয় শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ করা হয়। এ বরাদ্দকে ৪% এ নিয়ে আসতে হবে, যার অর্ধেক ব্যয় হবে প্রাসঙ্গিক শিক্ষাখাতে।
২. বর্ধিত স্কুল ও দুই শিফটের প্রবর্তন : প্রায় ৪০ লাখ স্কুলবিমুখ মেয়েদের জন্য বর্ধিত স্কুল তৈরি করতে হবে এবং দুই শিফটের প্রবর্তন করতে হবে।
৩. মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে : মেয়েদের স্কুলগুলো এমন জায়গায় করতে হবে যাতে সহজেই তারাস্কুলে যেতে পারে । অন্যথায়, এদের স্কুলে পৌঁছানো ও বাড়ি পৌছে দেয়ার জন্য রক্ষীদল গঠন আবশ্যক।
৪. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি : শুধুমাত্র আইনের প্রসারই নারী শিক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। সেজন্য নতুন মূল্যবোধ তৈরি ও গণসচেতনতা বাড়াতে হবে।
৫. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানাদির ব্যবহার : স্কুলের স্বল্পতা দূর করতে হলে মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
৬. পিতামাতাকে উৎসাহিত করা : অশিক্ষিত পিতামাতাকে মেয়েদের শিক্ষায় উৎসাহিত করতে হবে।
৭. বিদ্যালয়ের পরিবেশ আকর্ষণীয় ও উন্নত করা : স্কুলে শিক্ষাদান পদ্ধতি আকর্ষণীয় ও সাবলীল হতে হবে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নত ও আকর্ষণীয় হতে হবে যাতে ছাত্রীরা স্বেচ্ছায় স্কুলে যেতে চায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, যেহেতু রাষ্ট্রের একটি উপাদান জনগণ এবং এ জনগণের অর্ধাংশ নারী তাই নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নতি সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাইলে প্রয়োজন Social change and political modernization. এ সচেতনতা বৃদ্ধি করা আর এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা। তাই দৃঢ়তার সাথে বলতে হয় শিক্ষাই জাতীয় উন্নয়নের একমাত্র মাধ্যম আর এ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হিসেবে নারীদের সম্পৃক্ত করতে হলে কেবল সরকারকেই পদক্ষেপ নিলে চলবে না। পাশাপাশি নারীদেরও নিজেদের উপযুক্ত শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়ন করতে চাইলে নিজেদের সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*