নারী দশকের সাফল্য মূল্যায়ন কর।

অথবা, নারী সমস্যা সমাধানে নারী দশকের সফলতা বর্ণনা কর।
নারী দশকে নারীর সফলতা লিপিবদ্ধ কর।
অথবা, নারীর সমস্যা সমাধানে নারী দশকের সফলতা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় যথার্থ শ্রদ্ধাবোধ ও জনগণের জন্য অধিকতর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্ব আজ সচেষ্ট হয়েছে। যুগ যুগ ধরে নারীর প্রতি যে বৈষম্য চলে আসছে, তা দূর করার জন্য দীর্ঘকাল রেই জাতিসংঘ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নারীর অধিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ করে তুলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর প্রতি
“বষম্য দূর করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালকে বিশ্ব নারীবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৭৬-৮৫ সাল পর্যন্ত নারী দশক ঘোষণা করে। ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ বা Convention. বলা যায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে CEDAW নামের এ সনদ বা
Convention গৃহীত হওয়ার মধ্যদিয়ে নারীর সমান অধিকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নারী দশকের সাফল্য মূল্যায়ন : নারীসমাজের পরিপূর্ণ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই নারী দশক ও নারী দিবস পালনের সূত্রপাত। নারীসমাজের সমতা, অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে দেশে দেশে উন্নয়ন ও বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করাই প্রকৃতপক্ষে নারী দশকের লক্ষ্য। এ সামগ্রিক লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিবছর নারী দিবসে একটি আশু বা জরুরি লক্ষ্য
ঘোষণার মাধ্যমে বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। নিয়মিত নারী দিবস পালন এবং অন্যান্য কর্মসূচি অনুসরণের মাধ্যমে নারী দশকের লক্ষ্য কতখানি অর্জিত হয়েছে সেটা উদ্যোক্তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে দৃষ্টত মনে হয়, এ দশকের ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার অতি সামান্য অংশই হয়ত অর্জিত হয়েছে। গৃহাভ্যন্তর হতে শুরু করে চাকরি বা রাজনৈতিক মঞ্চ পর্যন্ত কোথাও এ যাবৎ নারীদের সমতা অর্জিত হয়নি। এ ব্যাপারটি শুধু উন্নয়নশীল ও পশ্চাৎপদ দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বা সত্য নয়, উন্নত দেশের অবস্থাও খুব যে আশাপ্রদ তা কিন্তু নয়। বাহ্যিক সংখ্যাগত সমতা না থাকলেও উন্নত দেশের মহিলাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আনুষ্ঠানিকভাবে মোটামুটি স্বীকৃত। এরপরও উন্নত দেশের নারীসমাজ যথেষ্ট অসুবিধা বা প্রতিকূলতার সম্মুখীন। এখানেও সমকাজের জন্য মহিলারা সমবেতন পায় না। এছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের জন্য এক স্বতঃসিদ্ধ ভাগ্যলিপি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে বাস্তব অবস্থা যখন এটাই, তখন নারীদের মর্যাদা বা অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় কিভাবে। অসংখ্য মহিলার পতিতাবৃত্তি গ্রহণে বাধ্য হওয়া ব্যাপারটিও তো তাদের অধিকার ও মর্যাদার অস্বীকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উন্নত দেশের ক্ষেত্রে এতটুকু বলা যায় যে, মহিলাদের অধিকার সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলেও তাদের মর্যাদা অনেকাংশে স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু পশ্চাৎপদ উন্নয়নশীল দেশে মহিলাদের মর্যাদার স্বীকৃতি আজ পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে পাওয়া যায়নি । অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপার তো এককথায় সুদূরপরাহত। একটানা দশ বছর নারী দিবস ও নারী দশক পালনের সমাপ্তি লগ্নে এসেও আজ পৃথিবীর বিরাট অংশের মহিলারা এ করুণ অবস্থার সম্মুখীন। এটাই যদি অনিবার্য পরিণতি হয়ে থাকে, তাহলে এত ঘটা করে আন্তর্জাতিকভাবে এমন কর্মসূচি পালনের সার্থকতা কি হতে পারে? সাধারণ জনগণ বিশেষত মহিলারা এসব কারণেই এসব কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে মত প্রকাশ করতে চান। কিন্তু আমরা ঠিক ততখানি হতাশাব্যঞ্জক বা নেতিবাচকভাবে কর্মসূচিকে দেখতে চাই না। তাই নারী দশক বা নারী দিবস পালনের ব্যাপারটিকে একেবারে সার্থকতাহীন বলে আমরা ধরে নিতে পারি না। এসব কর্মসূচির
মাধ্যমে সামান্য সংখ্যক হলেও মহিলাদের অধিকার চেতনা অনেকখানি গঠিত হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সামাজিক বা বাড়ির পর্যায়ে নারীদের সর্বাঙ্গীন অধিকার নিশ্চিত করতে চাইলে প্রথমত পরিবার থেকেই তাদের অধিকার নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কেননা, পরিবারেই তাদের অধিকার স্বীকৃত হওয়ার প্রাথমিক ধাপ। অনুন্নত দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই মেয়ে শিশু থেকে শুরু করে পরিবারের মহিলা সদস্যরা অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত । মোটামুটি কোনো ক্ষেত্রেই তারা সমান অধিকার ভোগ করতে পারে না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আজকের নারীসমাজ বিশেষ করে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফতোয়াবাজদের আক্রমণে প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত। এক কথায় সামাজিক, রাজনৈতিক অধিকার ছাড়াও নিছক মানবিক অধিকারের ক্ষেত্রেও তারা করুণভাবে বঞ্চিত। পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিদিন দেখা যায় ধর্ষণের চিত্র। অমানবিক পশুর সমতুল্য পুরুষরা শিশুদেরকেও তাদের যৌন হয়রানির শিকার করে। এদেশের প্রায় আশি শতাংশ মহিলা এখনও নিরক্ষর। এ নিরক্ষরতার হার দ্রুত হ্রাস করার মাধ্যমে মহিলাদের আত্মসচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করাই অধিকার নিশ্চিত করার প্রধান উপায় । তাই গারীসমাজের উন্নতির জন্য নারী দিবস বা নারী দশকের প্রয়োজন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*