নারীর মানবাধিকার বলতে কী বুঝ?
অথবা, নারীর মানবাধিকার সম্পর্কে তোমার ধারণা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, নারীর মানবাধিকার কাকে বলে?
অথবা, নারীর মানবাধিকার কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রতিটি মানুষই সমান অধিকার, মূল্য ও মর্যাদা পাবার অধিকারী। আর সার্বজনীনতাই মানবাধিকার দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একটি ক্রোমোজোমের কারণে যেন নারীকে মানবাধিকার উপভোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। আর তাই আলাদা করে নারীর মানবাধিকারের বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে।
নারীর মানবাধিকার : রেনেসাঁ ও গণতান্ত্রিক বিপ্লব মানুষকে অতীতের পরাধীনতা ও অধিকারহীনতা থেকে মুক্ত করলেও মানুষ হিসেবে নারীরা মুক্ত হলো না। ফরাসি বিপ্লবের পর মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার ঘোষণাপত্রে পুরুষের মতো নারীর সমঅধিকার স্বীকৃতি মিললো না । পরবর্তীতে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় অধিকারকে সাধারণীকরণ করা হয়। অর্থাৎ সাধারণভাবে এখানে বিষয়টি এসেছে। নারী ও পুরুষকে একই সমতলে স্থাপন করে এই মানবাধিকার ধারণাটি গড়ে উঠেছে। পুরুষের তুলনায় নারীর ভিন্ন অবস্থা ও অবস্থানকে এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়নি। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ঘোষিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাস্তবে নারীরা একজন মানুষ হিসেবে তাদের জন্য প্রদত্ত অধিকারগুলো পুরুষের মতো সমভাবে ভোগ করতে পারে না। কমবেশি প্রায় প্রতিটি দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি, রীতিনীতি, প্রথা ও ঐতিহ্য ও আইনকানুন বিচারে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক হওয়ায় তা তাদের মানবাধিকারকে সংকুচিত করেছে। স্বাভাবিক কারণে তাই নারীরা সর্বক্ষেত্রে মানবাধিকার হরণের শিকার। আর এতই ব্যাপক ও নিয়মমাফিকভাবে নারীর অধিকার হরণ করা হয় যে, এই অন্যায়কে প্রকৃতির বিধান বলে মনে করা হয়। আসলে নারীর মানবাধিকার বলে কিন্তু আলাদা কোনো কিছু নেই। কিংবা পুরুষের মানবাধিকারের চেয়ে নারীর মানবাধিকার ভিন্ন কিছু নয়। প্রচলিত মানবাধিকার ধারণা নারীর মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ায় আলাদা করে নারীর মানবাধিকারের বিষয়টি এসেছে। আবার জাতীয় পরিসরে সাধারণভাবে মানবাধিকারকে দেখানো হয় রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে একটি চুক্তি হিসেবে। ফলে এক্ষেত্রে নারীরা থাকে উপেক্ষিত। কেননা নারীরা সকলে বলতে গেলে রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কহীন। স্বামী, পিতা, পুত্র, ভাই অর্থাৎ কোনো না কোনো পুরুষের দ্বারা রাষ্ট্রের সঙ্গে নারীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই পুরুষরাই রাষ্ট্র বা সমাজের তরফ থেকে নারীর কর্তৃত্ব ফলানো ক্ষমতা পায়। তাই আমাদের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে নারীর জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে মানবাধিকারকে বর্ণনা করতে হবে।
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে নারীর অধিকার লঙ্ঘন করা চলবে না। সেই সঙ্গে সত্যিকার অর্থে মানবাধিকারের সর্বজনীনতা বজায় রাখতে হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, নারীর মানবাধিকারকে আলাদাভাবে চিহ্নিত ও ব্যাখ্যা করা জরুরি। কেননা নারীর মানবাধিকার আজ গণতন্ত্র, সুশাসন, দারিদ্র্য দূরীকরণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর সেই জন্যই বিদ্যমান মানবাধিকার ধ্যানধারণা ও কাঠামোতে নারীর মানবাধিকারকে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস চলছে কয়েক দশক ধরে।