নারীর মর্যাদা কী?
অথবা, নারীর মর্যাদা বলতে কী বুঝ?
অথবা, নারীর মর্যাদা কাকে বলে?
অথবা, নারীর মর্যাদার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : পুরুষ শাসিত সমাজে নারী ও পুরুষের সামাজিক মর্যাদা এক নয়। এক সমাজের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নারী পুরুষের অধীন এবং পুরুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। নারীর এরূপ সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়েছে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ।
নারীর মর্যাদা : সামাজিক বিজ্ঞানে ‘নারীর মর্যাদা’ এর সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে দেয়া হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, “নারীর মর্যাদা বলতে একটি পরিবারে একজন মহিলার ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং তার প্রতি পরিবারের অন্যান্য সদস্য কর্তৃক প্রদর্শিত সম্মানকে বুঝায়।” আবার কেউ কেউ কেবল নারীদের অধিকার ও কর্তব্যের সংমিশ্রণকেই নারীর মর্যাদা হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের মতে, একজন কন্যা, ছাত্রী, স্ত্রী ও মা হিসেবে তাঁর পরিবারে অবস্থান ও বিভিন্ন ভূমিকায় তাঁর অধিকার ও কর্তব্যের সংমিশ্রণই হলো নারী মর্যাদা। আরও পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে, এই সংজ্ঞানুযায়ী একটি পরিবারে পুরুষের তুলনায় নারীর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন জ্ঞান অনুসন্ধানের সুযোগ, অর্থনৈতিক উপাদানের উপর নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক অধিকার ও জীবনের ভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার প্রকৃতিই নারীর মর্যাদা স্থির করে। বাংলাদেশের নারীরা পৃথক কোন শ্রেণি নয়, বরং গোটা মানবজাতিরই একট উল্লেখযোগ্য অংশ। কিন্তু মানবজাতিরই একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ঐতিহাসিকভাবেই নানা ধরনের শোষণ নিপীড়নের শিকার। জীবনের সকল স্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান ও মর্যাদা পুরুষের তুলনায় অবস্তন। আর এর জন্য বাংলাদেশে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই দায়ী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণেই নারীরা পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পশ্চাৎপদ। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশে মর্যাদা ও অধিকার ভোগের
ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকারে পরিণত হয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আইনগত সকল ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। কিন্তু অর্ধেক জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত তীব্র বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ পুরুষের স্বার্থকেই সংরক্ষণ করে এবং নারীকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল করে রেখে নারীর অধস্তনতাকে টিকিয়ে রাখে।