নারীর প্রতি সহিংসতার স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, নারীর উপর সহিংসতার কারণগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর প্রতি সহিংসতার স্বরূপ সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর প্রতি সহিংসতার স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, নারীর প্রতি সহিংসতার স্বরূপ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, নারী নির্যাতনের স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে দৈনিক ইত্তেফাকের একটি রিপোর্টে বলা হয়- “সমাজ যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে তার দুই বাহু হলো নারী ও পুরুষ। একটিকে বাদ দিলে সমাজকাঠামোর দৈন্যদশা কখনো ঘুচবে না। একথা মনে রাখতে হবে যে, নারী মানব সম্পদের, বিশ্ব উন্নয়নের দীর্ঘদিনের দাবিদার। তার অধিকার বার বার অস্বীকার করা হয়েছে বলেই পৃথিবীতে এত হানাহানি চলছে।”

আর বিশ্বব্যাপী এ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হানাহানির ক্ষেত্রে একটি ভয়াবহ রূপ হলো নারীর প্রতি সহিংসতা। নারীনির্যাতন ও সহিংসতা কথা দু’টি প্রায় একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও সহিংসতা বলতে নারীনির্যাতনের একটি অংশকে বুঝানো হয়। নারীনির্যাতন বলতে নারীর শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের নির্যাতনকে বুঝায়। কিন্তু সহিংসতা হলো এমন একটি পর্যায় যেখানে নারীকে শুধুমাত্র শারীরিকভাবে উৎপীড়নের শিকার হতে হয়। গত দুই দশক ধরে নারীর প্রতি সহিংসতা আমাদের দেশে অন্যতম সামাজিক ইস্যু হিসেবে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে। নারীর প্রতি সহিংসতার এক বা একাধিক ঘটনা খবরের কাগজে ছাপা হয় নি এমন দিন পাওয়া দুষ্কর।
নারীনির্যাতনের স্বরূপ : নারীনির্যাতনের পরিধি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ নির্যাতন রূপ নিচ্ছে সহিংসতার। নারী নানাভাবে এ সহিংসতার শিকার হচ্ছে। নিম্নের তালিকা থেকেnএ সম্পর্কিত একটি ধারণা আমরা পেতে পারি-nনিম্নে নারীর প্রতি সহিংসতার স্বরূপ আলোচনা করা হলো :
১. ধর্ষণ : জোরপূর্বক নারী ও শিশুর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টাকে বলা হয় ধর্ষণ। নারীকে জোর করে অপহরণ করে ধর্ষকেরা দলবেঁধে পালাক্রমে রাতভর ধর্ষণ করছে। আবার অনেক সময় ধর্ষণের পর নারীকে হত্যা বা খুনও করা হচ্ছে। এ হলো নারীর প্রতি সহিংসতার এক ভয়াবহ ও ঘৃণ্যতম রূপ। কারণ ধর্ষণের দ্বারা ধর্ষিতা নিজেই
কলঙ্কিত হয়।
২. নারী হত্যা : বর্তমানে বাংলাদেশে নারী হত্যা একটি সাধারণ চিত্র। এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই হয়ে থাকে যৌতুক ও বহুবিবাহের কারণে। নারী হত্যা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন- আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, নারীকে পিটিয়ে হত্যা, বটি বা ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, শ্বাসরোধ করে হত্যা, বিষ খাইয়ে হত্যা প্রভৃতিসহ আরো বহু ধরনের হত্যা আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই সংঘটিত হচ্ছে। যার ফলে দিন দিন নারীনির্যাতনের মামলাও বেড়েই চলেছে।
৩. গর্ভপাত : গর্ভপাতের দ্বারাও নারী সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। নারীরা না চাইলেও অনেক সময় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাত ঘটানো হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষত চীন, ভারত, কোরিয়ায় বেআইনি হওয়ার পরেও কন্যা ভ্রূণ হত্যা করা হয়। এভাবে অকালে বার বার গর্ভপাত ঘটানো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং এর কারণে প্রায়ই নারীর অকাল মৃত্যু ঘটে। এটিও নারীর প্রতি সহিংসতার একটি বিশেষ রূপ।
৪. পতিতাবৃত্তি : অর্থের লালসায় আমাদের দেশের পুরুষেরা শিশু কিংবা যুবতী মেয়েদের কাজের প্রলোভন ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করে এবং পতিতালয়ে বিক্রি করে। পরবর্তীতে তাদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। যেহেতু তারা স্বতঃস্ফূর্ত বা ইচ্ছাকৃতভাবে এ পেশায় নিয়োজিত হয় না, তাই পতিতাবৃত্তিকে নারীদের প্রতি এক ধরনের সহিংসতাই বলা চলে।
৫. এসিড নিক্ষেপ : সময়ের সাথে সাথে নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে যে নতুন মাত্রাটি যোগ হয়েছে, তাহলো এসিড নিক্ষেপ । এ তরল আগুনে মেয়েদের শরীর বা মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেবার পিছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। যথা : প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। যার ফলশ্রুতিতে অহরহই প্রতিহিংসার বসে মানুষরূপী হিংস্র পশুরা এসিড নিক্ষেপ করে
বিভৎস করে দিচ্ছে নারীর মুখমণ্ডলকে। আর এ ঘৃণ্যতম কাজের জন্য নারীদেরকেই সারা জীবন মাশুল দিয়ে যেতে হয়।
৬. ফতোয়ার শিকার : দেশের প্রচলিত আইনকে অবমাননা করে ফতোয়া জারি করে নারী হত্যা নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম জঘন্য রূপ। সাধারণত ইসলামি শাস্ত্রানুযায়ী রায় দেয়াকে ফতোয়া বলা হয়। কিন্তু সমাজের অশিক্ষিত মোল্লারা এ ইসলাম ধর্মকে বিকৃত করে ফতোয়া দেন গ্রাম্য সালিশের দ্বারা। এ নির্মম ফতোয়া সাধারণত প্রদান করা হয়
প্রেম ও বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে। ফলে সকল ক্ষেত্রেই ফতোয়ার শিকার হয় নারীরা।
৭. নারী খত্না : নারীকে নির্যাতন করার আরেকটি পন্থা হচ্ছে যৌনাঙ্গ কর্তন। বিশ্বের ২৮টি দেশে এখনো এ সামাজিক কুপ্রথা প্রচলিত আছে। এ যাবৎ প্রায় ১২ কোটি নারীর যৌনাঙ্গ কর্তন বা খৎনা করা হয়েছে এবং প্রতি বছর ২০ লাখ নারী বা বালিকা এ ঝুঁকির সম্মুখীন। সমগ্র পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি কন্যা শিশুর খত্না বা ভগাঙ্গুর (Clitoris) ছিন্ন করা হয়। জিবুতি, মালি, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান ইত্যাদি দেশে প্রায় সকল নারীই এ প্রথার দ্বারা আক্রান্ত । অথচ এর ফলে নারীদের বধ্যত্ব, প্রসবকালীন মৃত্যু এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
৮. যৌতুক সম্পর্কিত : বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার পিছনে যে ক্রিয়াশীল কারণগুলো রয়েছে তার মধ্যে যৌতুক প্রথা অন্যতম। বিয়ের পর নারীকে তার বাবার বাড়ি থেকে নানা ধরনের যৌতুক আনার জন্য তার স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির অন্যান্য সদস্য কর্তৃক চাপ প্রয়োগ করা হয়। ফলে নারীর বিবাহিত জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে। যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে
শ্বাসরোধ করে হত্যা, পুড়িয়ে হত্যা, জবাই করে হত্যা, অত্যাচার করে অন্ধ করে দেয়া, বিকলাঙ্গ করে দেয়া প্রভৃতি আমাদের সমাজে হরহামেশাই হচ্ছে। নারী সহিংসতার এ রূপটি সমাজে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নারীর প্রতি সহিংসতার যে জঘন্যতম রূপ আমরা দেখতে পাই, তা কেবল সমাজজীবনকে কলুষিতই করছে না, বরং সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে এক চরম বিপর্যয়ের দিকে। দেশের অর্ধেক অংশ নারীসমাজকে রক্ষা করার জন্য যে কোন ধরনের কঠোর আইন প্রণয়ন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে সে আইনের বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু আইন প্রণয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না, সমাজের মানুষরূপী জানোয়ারদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য মানবতাবাদী, উদার ও মুক্তচিন্তার অধিকারী সব মানুষতে এগিয়ে আসতে হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%85/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*