নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার স্বার্থ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

অথবা, নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার স্বার্থ বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার স্বার্থ সম্পর্কে বিবরণ দাও।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার স্বার্থ সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার স্বার্থ সম্পর্কে আলোকপাত কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পিতৃতন্ত্রের পুরুষ নারীর প্রতিবাদ সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করার সামর্থ্য রাখে। নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছায় তোয়াক্কা না করে পুরুষ তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। পিতৃতন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করার সামর্থ্য নারীর নেই। তবে সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে নারী সকল বাধাবিপত্তি কাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও পরিবর্তন সাধন করার সামর্থ্য অর্জন করবে। নিজ চাহিদা পূরণ এবং নিজ ইচ্ছা বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। নারী হবে ক্ষমতাবান। নারী ও পুরুষে ক্ষমতার বৈষম্য থাকবে না। নারীর উপর পুরুষ প্রাধান্য রহিত হবে, নারীর অধীনতা পাশ ছিন্ন হবে। জাতিসংঘ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অনগ্রসর নারীদের জাগরণে জাতিসংঘ অর্থায়ন ও কৌশলের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে থাকে। জাগ্রত নারীসমাজ সৃষ্ট জেন্ডার ভূমিকা ও পুরুষের অধীনতা অগ্রাহ্য করে জেন্ডার বৈষম্যকে জেন্ডার সমতা ও ন্যায্যতায় রূপান্তরিত করবে।
নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার স্বার্থ : নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জেন্ডার স্বার্থ নারীর ক্ষমতায়নকে সহজতর করে। এ প্রসঙ্গে মলিনেক্স বলেছেন, “জেন্ডার বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সৃষ্ট সামাজিক অবস্থানের কারণে নারীর যেসব স্বার্থ দেখা দেয় সেগুলোকে জেন্ডার স্বার্থ বলা যায়। জেন্ডার স্বার্থ কৌশলগত হতে পারে, আবার ব্যবহারিকও হতে পারে। প্রতিটি স্বার্থ ভিন্ন ভিন্নভাবে উদ্ভূত হয় এবং নারীর অস্তিত্বের জন্য প্রত্যেকটির নিজ নিজ ফলিতাৰ্থ থাকে।” জেন্ডার স্বার্থকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
ক. কৌশলগত জেন্ডার স্বার্থ ও
খ. ব্যবহারিক/বাস্তবমুখী জেন্ডার স্বার্থ।
ক. কৌশলগত জেন্ডার স্বার্থ : জেন্ডার স্বার্থকে বিভিন্ন গবেষক জেন্ডার চাহিদা বলে অভিহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে Moser বলেছেন, “সমাজে পুরুষের অধীন অবস্থানের কারণে নারী যেসব চাহিদা চিহ্নিত করে সেগুলো কৌশলগত জেন্ডার চাহিদা। প্রসঙ্গ ভেদে জেন্ডার চাহিদা বিভিন্ন হয়ে থাকে। এগুলো শ্রম, ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের জেন্ডার বিভাজনের সাথে সম্পর্কযুক্ত।”
কৌশলগত জেন্ডার চাহিদার বিভিন্ন দিকগুলো নিম্নরূপ :
১. কৌশলগত জেন্ডার চাহিদা নারী-পুরুষ অধীনতার বিশ্লেষণ থেকে সূত্রায়িত করা হয়। এখানে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সকল কারণের বিশ্লেষণ করা হয়।
২. বর্তমানে সমাজের যে সংগঠন আছে তার বিকল্প এবং তার চেয়ে অধিকতর সমতাপূর্ণ ও সন্তোষজনক সংগঠনকে চিহ্নিত করা যায়।
৩. পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কগুলোর কাঠামো ও প্রকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট।
৪. নারীর অধীনতা পাশ ছিন্ন করে।
৫. কৌশলগত জেন্ডার চাহিদার মধ্যে আছে আইনগত অধিকার, পারিবারিক নির্যাতন, সমান মজুরি, নিজ দেহের উপর নারীর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সমস্যা ও প্রশ্ন।
৬.যৌন শ্রমবিভাজনের বিলুপ্তি সাধন।
গার্হস্থ্য শ্রম ও শিল্প পালনের গুরুভার বিমোচন।
৭.বৈষম্যের প্রাতিষ্ঠানিক রূপগুলোর অপসারণ। যথা : জমি ও সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার, ঋণ লাভের অধিকার ও সুযোগ, রাজনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা, সন্তান ধারণে নিজ মতের স্বাধীনতা এবং পুরুষের নির্যাতন ও নারীর উপর কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ।
খ. ব্যবহারিক বা বাস্তবমুখী জেন্ডার স্বার্থ বা চাহিদা : ব্যবহারিক জেন্ডার স্বার্থ বা চাহিদা নারীদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন নারীবাদী লেখক মন্তব্য করেছেন বিভিন্নভাবে। Moser বলেছেন, “নারী তাদের সমাজ স্বীকৃত ভূমিকার বৃত্তের মধ্যে যে চাহিদাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ব্যবহারিক জেন্ডার চাহিদা। ব্যবহারিক জেন্ডার চাহিদা জেন্ডার কর্মবিভাজন কিংবা সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থান চ্যালেঞ্জ করে না।
৮. ব্যবহারিক বা বাস্তবমুখী জেন্ডার চাহিদাকে ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় :
১.এটা নারী যে বাস্তব অবস্থা দেখতে অভিজ্ঞ, সে অবস্থার আলোকে সূত্রায়িত করা হয়।
২.এটা একটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গের সীমারেখার মধ্যে নারী কর্তৃক চিহ্নিত তাৎক্ষণিক অভাববোধের প্রতিক্রিয়া।
৩. ‘ব্যবহারিক জেন্ডার চাহিদা জেন্ডার কর্মবিভাজনের পরিধি রেখার মধ্যে নারীর অবস্থান থেকে উদ্ভূত।
৪.বেঁচে থাকার পরিবেশের অপূর্ণতার সাথে সম্পৃক্ত। যথা : পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, সেবা এবং কর্মসংস্থান।
.৫. জেন্ডার কর্ম বিভাজনকে সংরক্ষণ ও জোরদার করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে ব্যবহারিক জেন্ডার চাহিদাগুলোকে প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কিন্তু নারীমুক্তির জন্য ব্যবহারিক জেন্ডার চাহিদা পূরণ যথেষ্ট নয়। কৌশলগত জেন্ডার চাহিদা পূরণ না হলে নারী তার বৈষম্যমূলত অধস্তন অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে কখনো সক্ষম হবে না। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে কৌশলগত জেন্ডার চাহিদা পূরণ হওয়া সম্ভব, যার ফলে নারীমুক্তিও সম্ভব। তবে নারীমুক্তির পথ কুসুমাঙ্গীর্ণ নয়, সহজসরল নয়, হাজার হাজার বছর ধরে যে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা জিইয়ে রাখা হয়েছে তার অবলোপন কঠিন, বাধাসংকুল সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a7%8d/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*