অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধাসমূহ আলোকপাত কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের পথে প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোকপাত কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের সমস্যাসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধাসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের পথে প্রতিবন্ধকতাসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সমতার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের অধিকার ও মর্যাদার সমতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সৃষ্টি করা বিশেষ প্রয়োজন। এর জন্য সর্বপ্রথমেই নারী ক্ষমতায়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করা আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীদের অবস্থা প্রান্তিক। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ধারায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীরা কতিপয় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়।
নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধাসমূহ বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ : নিম্নে সীমাবদ্ধতাসমূহ বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোকপাত করা হলো :
১. পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব : কিছু প্রগতিশীল ও অগ্রসর চিন্তার অধিকারী ব্যক্তি ছাড়া নারীদের প্রতি পুরুষদের এমনকি এক শ্রেণির নারীর দৃষ্টিভঙ্গিতে এখনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে তা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে তাদের মনোভাব বা আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে। এক্ষেত্রে এটাকে প্রতিবন্ধক বলা হয় এ কারণেই যে, এ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব বিদ্যমান থাকা মানে তাদের পক্ষ থেকে নারীর ক্ষমতায়নের পথে কোনো না কোনোভাবে বাধা আসবেই যা নারী অধিকার কর্মীদেরকে মোকাবিলা করতে হয়। নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে অনেকেই প্রচণ্ড বিরোধিতা করে। আসলে এসব হচ্ছে, পুরুষতান্ত্রিক রুগ্ন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
২. মৌলবাদ : একটা বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, মৌলবাদী শক্তিসমূহ সব সময় প্রগতিশীল চিন্তা চেতনা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়, যা সাম্প্রতিককালে বেশ বেড়েছে। মৌলবাদীরা কখনো কোনো প্রগতিশীল পরিবর্তনকে মেনে নেয় না। আমাদের দেশে মূলত দু’ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা কায়েম রয়েছে।
১. আধুনিক শিক্ষা,
২.মাদ্রাসা শিক্ষা।
পরিণতিতে তিন ধরনের নাগরিকের বিকাশ ঘটেছে।
১.সংস্কারমনা আধুনিক মানুষ।
২.গোঁড়ামিতে পরিপূর্ণ অন্ধবিশ্বাসী মানুষ ।
৩.বিভ্রান্ত ও দোদুল্যমান মানুষ ।
নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে নারী অধিকারে বিশ্বাসী এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিয়োজিতদেরকে উপযুক্ত অবস্থানগুলো মনে রাখতে হবে। কারণ নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্তদের কাছ থেকে প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হবে। তৃতীয় শ্রেণিভুক্তদেরকে Neutral করা কষ্টসাধ্য হবে এবং প্রথমোক্তদেরকে সাথি হিসেবে পাওয়া যাবে।
৩. ভারসাম্যহীন ক্ষমতা কাঠামো : আমরা যদি আমাদের দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রসমূহের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব যে, স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় সরকার পর্যন্ত সর্বত্র পুরুষদের বিপুল সংখ্যাধিক্য। একটি পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় যদি ক্ষমতা কাঠামোতে পুরুষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে সেখানে পুরুষালি মনোভাব কার্যকরী হওয়ার প্রবণতা থাকবেই, যা প্রকারান্তরে নারীর ক্ষমতায়নের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে।
৪. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণহীনতা : আমাদের দেশের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে একটা নির্ভরশীল সমাজ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছে। আর নগদ অর্থ উপার্জন করতে না পারাটাই নির্ভরশীলতার মুখ্য কারণ। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থার অপরিহার্য পরিণাম হিসেবে মেয়েরা শুধু নগদ অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রসমূহে প্রবেশ করতে বাধা পায় তা নয়, যেখানে মেয়েরা নগদ অর্থ উপার্জন করে সেখানে পরিবারের পুরুষ প্রধানরাই তা নিয়ন্ত্রণ করে। এ অর্থ উপার্জনে বাধা কিংবা নিরুৎসাহিত করা এবং নিজ অর্জিত অর্থ নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার না পাওয়াটাই মেয়েদেরকে অধস্তন অবস্থায় ঠেলে দেওয়ার পিছনে একটা বড় কারণ। তাই নারীর ক্ষমতায়নের সংগ্রামে নারীদের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণহীনতা যে অন্যতম প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
৫. বিদ্বেষমূলক প্রচারণা : নারীর অসুবিধার জন্য পিতৃতান্ত্রিক তথা পুরুষশাসিত সমাজই দায়ী। এ ক্ষোভ থেকেই অধিকার সংগ্রামী এক শ্রেণির নারী এমনভাবে পুরুষ শ্রেণিকে দায়ী করে বক্তব্য দেন এবং প্রচার প্রচারণা চালান যাতে করে নারী অধিকার সংগ্রামীদের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক উদারপন্থি লোক আহত হয় ও ক্ষুব্ধ হয়, যা বস্তুত নারী অধিকার
প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমে সামাজিক স্থিতি ও পারিবারিক শান্তি বিনাশের কোনোরূপ চেষ্টা অবচেতন মনেও যদি কেউ করে থাকে, তাহলে তা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবেই কাজ করবে।
৬. গণতন্ত্র ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের অভাব : মোটা দাগে দেখলে এটা প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে.যে, নারীর ক্ষমতায়নের সাথে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সরাসরি সম্পর্ক নেই। আসলে কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরি উল্টো। দেশীয় রাজনীতিতে যদি কোনোরূপ, অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা থাকে তাহলে শুধু পরিবেশ বিঘ্নিত হবে না, নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নও বিলম্বিত হবে।
৭. নারীসমাজের অসচেতন ও শিক্ষার অভাব : আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার বেশ কম। এক্ষেত্রে নারীদের অবস্থা আরো খারাপ। ফলে নারীসমাজের মধ্যে অন্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অন্যান্য ধ্যানধারণা লক্ষ করা যায়। বিষয়টা শুধু এ পর্যায়েই থেমে থাকেনি, শিক্ষাহীনতার কারণে দেশের বেশিরভাগ নারী বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়ায় তাদের সমস্যা, সমস্যার কারণ ও উৎস এবং সমাধান প্রক্রিয়া সম্পর্কে শুধু যথাযথভাবে ভাবতেই পারে না তা ছত নয়, তারা তাদের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বুঝতে খুব একটা সচেতন নয়। এ শিক্ষাহীনতা ও অসচেতনতাই নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অন্যতম প্রতিবন্ধক।
৮. নিরাপত্তাহীনতা : নারীর ক্ষমতায়নের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে বিদ্যমান নারীর গতিশীলতা বিরোধী সংস্কৃতি ও বিদ্বেষমূলক ধারণার রীতিনীতি। এসবের সাথে নারীর নিরাপত্তাহীনতা জড়িত। যা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচ্য।
৯. সামাজিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা : পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীদের কোনো রূপ সামাজিক অধিকার থাকতে পারে তা প্রচলিত সমাজ বুঝতে নারাজ। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার কারণেও মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পক্ষপাতী, যা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
১০. দরিদ্রতার অভিশাপ : পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোই নারীর ক্ষমতায়নের পথে প্রধান বাধা একথা চির সত্য। কিন্তু তা সত্ত্বে দারিদ্র্য সমস্যা নারীদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি মৌলিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, বাঙালি নারীসমাজ যে অবরোধ যুগ থেকে জাগরণের যুগ বেয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার যুগে প্রবেশ করেছে এ কথাটা যেমনি সত্য তার চেয়ে বেশি সত্য নারীরা আজও পুরুষদের অধস্তন পর্যায়ে আছে। এখনো সর্বত্র পুরুষের নিয়ন্ত্রণ বর্তমান। নারীরা আজও নির্যাতিতা ও নিরাপত্তাহীন। এ দু’সত্যের মাঝামাঝি কথাটি হলো নারীর ক্ষমতায়নের অভিযাত্রায় বন্ধন শিথিল হয়েছে বটে, কিন্তু টুটে যায়নি আদৌ। পরিশেষে, আবারও বলি নারী ক্ষমতায়নের জন্য মূলত পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, কাঠামো এবং দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবই প্রধানত দায়ী।
নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধাসমূহ বা প্রতিবদ্ধকতাসমূহ আলোচনা কর।
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079
Leave a Reply