নারীর উপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব কী কী?

অথবা, নারীর উপর বিশ্বায়নের নেগেটিভ দিকসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, নারীর উপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর উপর বিশ্বায়নের ক্ষতিকর দিকগুলোর বর্ণনা দাও।
অথবা, নারীর উপর বিশ্বায়নের সমস্যাসমূহ তুলে ধর।
অথবা, নারীর উপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
আমাদের নিত্যদিনের জীবনে বিশ্বায়নের প্রভাব নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। বিশ্বায়নের যেমন ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে তেমনি এর নেতিবাচক প্রভাবও আমাদের জীবনে কম নয়। বিশ্বায়নের ফলে সারা পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব ছোট হয়ে এসেছে। এর ফলে বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষ সহজেই অন্য প্রান্তের মানুষের জীবন যাপন সম্পর্কে জানতে
পারছে এবং এর প্রভাব আমাদের জীবনেও পড়ছে।
নারীর উপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব : নারীর উপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব বেশ মারাত্মক। এর ফলে নারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিম্নে এর নেতিবাচক প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও বিভ্রান্ত নারী : বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সংস্কৃতি ও নারীর সাথে নিবিড় সম্পর্ক থাকে। ভিন্নদেশের সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের কারণে সন্তানের লালনপালনের ক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং নারী বিভ্রান্তিতে পড়ে। ফলে তার
মধ্যে এক ধরনের সংকট তৈরি হয় যা তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।
২. পুরুষতন্ত্রের ভিত্তিকে দৃঢ় করে : বিশ্বায়ন হলো পুঁজিবাদের উপজাত। আর পুঁজিবাদ এর সাথে পুরুষতন্ত্রের সম্পর্ক নিবিড়। পুঁজিবাদ পুরুষতন্ত্র উভয় শোষণের মাধ্যমে নিজের অবস্থান অব্যাহত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পুরুষতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় হবার ফলে নারীরা গৃহে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
৩. পরিবেশ বিপর্যয় ও নারী : বিশ্বায়নের ফলে যত্রতত্র নগরায়ণ হচ্ছে এবং শিল্পায়ন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে নানা কলকারখানা গড়ে উঠছে এবং পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে নারীরা নিজের জীবন রক্ষা করতে পারছে না । শিল্পায়নের জ্বালানি সংগ্রহ করা দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। এর ফলে তার জীবনযাপন দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে।
৪. হস্ত ও কুটির শিল্পায়ন : বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবে শিল্প ও প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশ হচ্ছে। ফলে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বাজার দখল করে নিয়েছে শিল্পায়িত বিভিন্ন সামগ্রী। এতে করে নারী তার কর্মসংস্থান হারাচ্ছে এবং পরিবারে তার আয়ের যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
৫. কৃষিতে নারীর ভূমিকা হ্রাস : বিশ্বায়নের ফলে কৃষিকাজেও নারীর ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে। বীজ সংগ্রহ, চারা উৎপাদন, ফসল মাড়াই প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির আবিষ্কার হওয়ার ফলে কৃষিক্ষেত্রে নারীকে আর তেমন প্রয়োজন হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নারীকে এসব কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
৬. যুদ্ধ, জাতিগত সংঘর্ষ ও নারী : বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বিশ্বাব্যাপী একক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় যখন ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে। এর ফলে পুরুষেরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং নারীরা অরক্ষিত থেকে যায়। ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরে বিধবা নারীর সংখ্যা
প্রতিনিয়তই বাড়ছে ।
৭. গণমাধ্যম ও নারী : বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে বিভিন্ন পণ্যের গুণগত মান তুলে ধরার জন্য নারীকে অপ্রাসঙ্গিক ও অশালীনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব নারীর উপর পড়ছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়নের নানা নেতিবাচক প্রভাব নারীর উপর বিদ্যমান। বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব কখনই আমাদের জীবনে সুফল বয়ে আনতে পারে না। তাই এর নেতিবাচক দিকগুলোকে আমাদের পরিহার করতে হবে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!