নারীর অদৃশ্য অবদান কী?

উত্তর৷ ভূমিকা : সভ্যতার বিকাশে নারী ও পুরুষের অবদান সমান হলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠ পিতৃতন্ত্রের একক আধিপত্য থাকায় নারীর অবদান অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়। ফলে নারীরা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বই
পড়ে। এ প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও জাতি গঠনে নারীরা যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে তার ব্যাপ্তি ও বিস্তৃতি বিশাল। বিশালত্বের প্রকৃতিটি আমাদের সমাজ ও জীবনে খুব একটা প্রস্ফুটিত নয়।
নারীর অদৃশ্য অবদান : যখন নারীর কোন অবদান বা কর্মকাণ্ড পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অস্বীকার করা হয়, যথাযথ স্বীকৃতি পায়না এবং অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান বা সবার কাছে বোধগম্য হয় না অথচ জাতি ও সমাজ গঠনে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে তখন সেসব অবদানকে নারীর অদৃশ্য অবদান বলা হয়। নারীর কয়েকটি অদৃশ্য অবদান নিম্নরূপ :
১. সন্তান লালন ও পালন : যেকোনো পরিবারে সন্তান লালন ও পালনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে মায়েরা। সন্তানের সুস্থ দেহ ও মন গঠনে মায়ের ভূমিকা যে কত বেশি কার্যকর তা দু এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। শিশুর
শৈশব ও শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত মা পালন করে সর্বব্যাপি ভূমিকা। অথচ মায়ের এই ত্যাগী অবদান আমাদের সমাজের শিরোনামে আসেনা বরং অদৃশ্য থাকে।
২. সংগ্রাম পরিচালনা : সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় একটি অনস্বীকার্য ফলশ্রুতি হল সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবারের অভ্যন্তরীণ শাখার নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করে একজন নারী। একজন নারী একটি সংসার দেখাশুনার তথা ভাল-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা সব কিছু দেখা-শুনার ভার নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে পরিবারের সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি ও স্থিতি নিশ্চিত করণে কার্যকর অবদান রাখে। অথচ প্রকৃতপক্ষে তার এই অবদানের কোন স্বীকৃতি থাকে না।
৩. সন্তানদের চরিত্র গঠন : মানুষ যখন শিশু হিসেবে জন্মগ্রহণ করে তখন সম্পূর্ণ অবোধ থাকে। এমতাবস্থায় ধর্ম- কর্ম, ন্যায়-অন্যায়, ন্যায্যতা অন্যায্যতা, ভাল-মন্দ, করণীয় বর্জনীয়, জীবনবোধ ও মূল্যবোধ সম্বন্ধে মা-ই তার সন্তানকে ধারাবাহিক শিক্ষা দিয়ে উন্নত মনের মানুষরূপে বিকশিত করে, প্রস্ফূটিত করে আলোকিত ধারায় ।
৪.ত্যাগের আদর্শ স্থাপন : মায়েদের ত্যাগের মহিমা শিশুকালে না বুঝলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে সব সন্তানই অনুভব করতে পারে। মায়েদের ত্যাগের এই দৃষ্টান্তই সন্তানদের ত্যাগী মানুষ হতে উদ্বুদ্ধ করে; যা পরবর্তীতে অনুকরণীয়, অনুস্মরণীয়রূপে দেশপ্রেমের শক্তিতে পরিণত হয়। অথচ নারীদের এই অবদান কারো প্রত্যক্ষ উপলব্ধিতে আসে না।
৫. সন্ত্রাস কমানো : আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী সুগৃহিনী ও স্নেহশীল মাতা হবার কারণে নিজ নিজ সন্তানকে প্রয়োজনীয় সময় ও যথাযথ যত্ন দিয়ে যাবতীয় সামাজিক কুপ্রভাব থেকে সন্তানকে আগলে রেখে প্রকারান্তে সমাজ ও জাতি গঠনে নীরবে অবদান রাখে। অর্থাৎ সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমাতে মায়েরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে; জাতিগঠনে নারীদের বহুমুখী ভূমিকা রয়েছে। অথচ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভারসাম্যহীন সমাজ কাঠামো নারীর কৃতকর্মের যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি প্রদানে আমাদেরকে অপারগ করে তুলেছে। নারীর অবদানগুলো তাই আজ অদৃশ্যমান। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সময় এসেছে। কেননা নারী তথা মা-ই হলেন সুনাগরিক গড়ার মূল কারিগর; যা উন্নত জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। ফরাসী বীর সম্রাট নেপোলিয়ান তাই যথার্থই বলেছেন, “Give me a good mother I will give you a good nation.”

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%85/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*