Answer

দু’দিন বাদে মোরে যখন তুই খেদাইয়া দিবি, ঘা’টি মুই তখন পামু কোয়ানে?”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু মার্কসবাদী সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : উক্তিটি পাঁচীর। সাবধানী পাঁচী ভিখুকে লক্ষ করে নিজের সতর্কতা প্রকাশে এই উক্তিটি করেছিল ।
বিশ্লেষণ : ডাকাতি করতে গিয়ে বর্শার খোঁচা খেয়ে ডান হাতটা পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় ভিখুর পক্ষে আর চুরি ডাকাতি করে জীবিকানির্বাহ করা সম্ভব হলো না। পেটের তাগিদে সে পৃথিবীর বহু পুরাতন ভিক্ষাবৃত্তির পেশাটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য হলো। বাজারের পথে গাছের তলে বসে ভিখু এখন ভিক্ষা করে। সারাদিনে যা আয় রোজগার হয় তাতে তার ভালোভাবেই চলে যায়। মাসিক আট আনায় ভাড়া করা বিন্নু মাঝির চালাটার নিচে সে রাত কাটায় একাকী। রাতে স্বরচিত শয্যায় পড়ে ভিখু ছটফট করে। নারীসঙ্গহীন এ নিরুৎসব জীবন তার আর ভালো লাগে না । বাজারে ঢোকার মুখেই এক ভিখারিণী প্রত্যহ ভিক্ষা করতে বসে। বয়স তার বেশি নয়। দেহের বাঁধুনিও বেশ মজবুত। তার একটা পায়ে হাঁটুর নিচে থেকে পাতা পর্যন্ত থকথকে তৈলাক্ত ঘা। এ ঘায়ের জোরেই সে ভিখুর চেয়ে বেশি রোজগার করে। সে কারণে ঘাটিকে সে বিশেষ যত্নে সারতে দেয় না। ভিখুর নজর পড়ে এই যুবতী ভিখারিণীর দিকে। কিন্তু ভিখারিণীর এই ঘাটা ভিখুর রুচিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভিখু মাঝে মাঝে তার কাছে গিয়ে ঘাটার
খোঁজখবর নেয়। ভিখারিণী জানায় ঔষধ দিলে ঘা’টা এক্ষুণি সারে। ভিখু তখন সাগ্রহে বলে- “সারা তবে, ওষুধ দিয়ে চটপট সারাইয়া ল। ঘা’টি সারলে তোর আর ভিখা মাগতে অইবো না জানস্। আমি তোরে রাখুম।” ভিখারিণী ভিখুর প্রস্তাব তাচ্ছিল্যভরে প্রত্যাখ্যান করে আলোচ্য সাবধানী উক্তিটি করে। ভিখারিণী পাঁচী ভালো করেই জানে যে, এ সকল পুরুষ বসন্তের কোকিলের মতো। দু’দিন বাদেই তৃষ্ণা মিটে গেলে তাকে তাড়িয়ে দেবে। তাই তার কথায় ভুলে আজ ঘা সারালে ভবিষ্যতে নিজের বিপদের সময় ঘাটা পাওয়া যাবে না। তখন তার ভিক্ষার অবলম্বন থাকবে না।
মন্তব্য : ভিখারিণী নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুবই সতর্ক। কামুক পুরুষদের কথায় ভোলার পাত্রী সে নয়।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!