তথ্যসংগ্রহের কৌশলগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর।


অথবা, তথ্যসংগ্রহের কৌশলসমূহ বিশ্লষণ কর।
অথবা, তথ্যসংগ্রহের কৌশলগুলো কি কী ক্যাথ্যা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গবেষণায় তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা গবেষণার ধরন, সময়, বাজেট এবং গবেষকের প্রাধান্যতার উপরও নির্ভর করে। সাধারণত উপাত্ত সংগ্রহের কৌশল (Techniques) হিসেবে সামাজিক বিজ্ঞানে কতকগুলো পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। আর এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রধানত দুটি উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যথা :
ক.প্রাথমিক বা মুখ্য উৎস এবং
খ.পরোক্ষ বা গৌণ উৎস।
নিম্নে তথ্য বা উপাত্ত কি এবং সমাজ গবেষণায় অনুসৃত তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহের বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতি সম্পর্কে.আলোচনা করা হলো :
উপাত্ত সংগ্রহের বিভিন্ন পদ্ধতি বা কৌশল : সামাজিক গবেষকগণ যখন সরাসরি মাঠ পর্যায়ে তথ্য বা সংগ্রহ করেন, তখন তাকে প্রাথমিক বা মুখ্য তথ্যসংগ্রহ করা বুঝায় । যেমন- একজন গবেষক কোন অধিবাসীদের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য নিতে কিংবা অপরাধীদের উপর জরিপ চালিয়ে অপরাধ সম্পর্কে তথ্য নিতে পারেন । এভাবে যখন তথ্যসংগ্রহ করা হয়, তখন তাকে মুখ্য বা প্রাথমিক তথ্যসংগ্রহ করা বুঝায় । অর্থাৎ উপাত্ত গ্রামের উৎস থেকে পারেন, তথ্যের উৎস থেকেই সরাসরি তথ্যসংগ্রহ করা হয়।
আবার যখন গবেষক কোন গ্রাম সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করতে সে গ্রামে না গিয়ে সে গ্রাম সম্পর্কে district gazetteer, district record room বিবিএস, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, বি আর ডি বি, সমাজকল্যাণ বিভাগ ইত্যাদি থেকে তথ্যসংগ্রহ করেন, তখন তাকে বলা হয় গৌণ উৎস থেকে তথ্যসংগ্রহ করা । এভাবে অপরাধ সম্পর্কে তথ্য থানা, ইউনিয়ন, বিবিএস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। এ ধরনের তথ্যসংগ্রহকে গৌণ উৎস থেকে তথ্যসংগ্রহ করা বুঝায় । সামাজিক বিজ্ঞানে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিসমূহকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
১.পরীক্ষণ পদ্ধতি (Experimental Method),
২.আপাত পরীক্ষণ পদ্ধতি (Quasi experimental Method) এবং
৩.অপরীক্ষণ পদ্ধতি (Non-experimental Method) ।
পরীক্ষণ ও আপাত পরীক্ষণ পদ্ধতি এবং অপরীক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য হলো যে, কোন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন না ।
করেন না। সাধারণত, সমাজ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । নিম্নে সমাজ
প্রয়োগ
ক.পরীক্ষণ পদ্ধতির ন্যায় অপরীক্ষণ পদ্ধতিতে গবেষণাকারী গবেষণা পরিবেশের উপর
খ.অপরীক্ষণ পদ্ধতিতে গবেষণাকারী কোন অনির্ভরশীল চলও (variable) গবেষণায় তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহে কৌশল হিসেবে অপরীক্ষণ পদ্ধতিরই বেশি গবেষণার এ পদ্ধতির কৌশলসমূহ উল্লেখপূর্বক যথাপরিসরে আলোচনা করা হলো :
১.পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি (Observation Method),
২.সাক্ষাৎকার পদ্ধতি (Interview Method),
৩.প্রশ্নমালা পদ্ধতি (Questionnaire Method),
৪.দ্রুত গ্রামীণ মূল্যায়ন (Rapid Rural Appraisal),
৫.দ্রুত পৌর মূল্যায়ন (Rapid Urban Appraisal) ও
৬. অভিক্ষেপণ পদ্ধতি (Projective Technique)।
১. পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি : সামাজিক গবেষণায় তথ্যসংগ্রহের একটি অন্যতম কৌশল হচ্ছে পর্যবেক্ষণ । পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি হলো তথ্য সংগ্রহের একটি গবেষণা পদ্ধতি যেখানে গবেষক সরাসরি বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের আচরণ, বৈশিষ্ট্য, এবং মিথস্ক্রিয়া লিপিবদ্ধ করেন। এ পদ্ধতিতে আজকাল অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। তবে কোন রেকর্ডিং যন্ত্রপাতি ছাড়াও পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে । সমাজ গবেষণায় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পর্যবেক্ষণের ধরন পর্যবেক্ষণকারীর ভূমিকা অনুযায়ী দু’প্রকারের হয়ে থাকে । যথা :
ক. অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ (participant observation) এবং
খ. অংশগ্রহণবিহীন পর্যবেক্ষণ (Non-participant observation)।
২. সাক্ষাৎকার পদ্ধতি : তথ্যসংগ্রহের যে কয়টি পদ্ধতি রয়েছে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি তন্মধ্যে অন্যতম। এ পদ্ধতিতে একটি সাক্ষাৎকারমালা বা প্রশ্নমালা ব্যবহার করে উত্তরদাতার কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করা হয়। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে কোন বিষয়ে বা উত্তরদাতার নিজ অবস্থা বা পরিবার সম্পর্কে তথ্য বা মতামত নেয়া হয়। কিংবা প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় । তবে কখনো কখনো টেলিফোনেও সাক্ষাৎকার নেয়া যেতে পারে । কিন্তু সাক্ষাৎকার সাধারণত মুখোমুখি হয়ে থাকে ।
৩. প্রশ্নমালা পদ্ধতি : সমাজ গবেষণার জন্য তথ্যসংগ্রহের কৌশল হিসেবে প্রশ্নপত্র ব্যবহার একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদ্ধতি । মাঠ পর্যায়ে প্রশ্নমালা ব্যবহার করে তথ্যসংগ্রহের গুরুত্ব অনেক। প্রশ্নপত্রকে দু’ভাগে ভাগ করা হয় । যথা : ক. ডাকযোগে প্রেরিত প্রশ্নপত্র এবং খ. সাক্ষাৎকার অনুসূচি। ডাকযোগে যে প্রশ্নমালা প্রেরণ করা হয় তা সাক্ষাৎকারমালা থেকে খানিকটা ভিন্ন । এছাড়া প্রশ্নমালা এবং সাক্ষাৎকারমালার ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে হয়ে থাকে ।
৪. দ্রুত গ্রামীণ মূল্যায়ন : দ্রুত গ্রামীণ সমীক্ষা (Rapid Rural Appraisal RRA) সম্পর্কে International Institute of Environment and Development (IIED) এর বর্ণনা হলো যে, “A systematic, but semistructured activity carried out in the field by a multidisciplinary team and designed to quickly acquire new information on and new hypothesis for rural development.” বস্তুত গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের জন্য বহু বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দলের মাধ্যমে দ্রুত কোন নতুন তথ্যসংগ্রহ করা বা কোন কল্পনা যাচাই করাকে দ্রুত গ্রামীণ সমীক্ষা বলে । এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের একটি দল গঠন করা হয় এবং সে দল কোন একটি জনগোষ্ঠীর কোন একটি সমস্যা সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করে সে সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা প্রদান করে।
৫. দ্রুত পৌর মূল্যায়ন : দ্রুত পৌর মূল্যায়ন (Rapid Urban Appraisal RUA) দ্রুত গ্রামীণ মূল্যায়ন বা RRA পদ্ধতির মতোই একটি তথ্যসংগ্রহ কৌশল, যার সাথে শহর বা পৌর এলাকার প্রসঙ্গটি জড়িত থাকে ।
৬. অভিক্ষেপণ বা প্রক্ষেপমূলক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে যাদের উপর গবেষণা পরিচালনা করা হয় তাদেরকে কতকগুলো ছবি দেখানো হয় । ছবিগুলো দেখানো পর সেগুলো বর্ণনা করতে অথবা সেগুলোর উপর গল্প লিখতে বলা হয়। ছবিগুলো দেখে গবেষণাভুক্ত ব্যক্তি যে ধারণা ব্যক্ত করেন তা থেকে তার রুচি, মনোভাব ইত্যাদি জানা যায়। এ পদ্ধতিকে ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা (Project) হয় বিধায় একে অভিক্ষেপণ পদ্ধতি বলে । প্রক্ষেপমূলক সমীক্ষা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালনা করা যেতে পারে। তবে সাধারণত দু’ধরনের সমীক্ষা বেশি পরিচালনা করা হয় । যথা :
ক. রোরশাক কালির ছাপ অভীক্ষা (Rorschach’s Inkblot Test) এবং
খ.কাহিনী সংপ্ৰত্যক্ষণ অভীক্ষা (Thematic Apperception Test)।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, গবেষণা কার্যসম্পাদনের জন্য মূল সহায়ক বা অপরিহার্য উপাদান হিসেবে উপাত্ত বা তথ্যসংগ্রহের গুরুত্ব অপরিসীম । উপাত্ত সংগ্রহের বিভিন্ন পদ্ধতি বা কৌশল তত্ত্বগতভাবে থাকলেও উপাত্ত সংগ্রহের যৌক্তিকতা, যথার্থতা নির্ভর করে একজন গবেষকের নিজস্ব গুণাবলি ও গবেষণার দক্ষতার উপর ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*