‘ডাহুক’ কবিতার মূলভাব লেখ।
উত্তর : ফররুখ আহমদের ‘ডাহুক’ একটি প্রতীকাশ্রয়ী কবিতা। ইংরেজি সাহিত্যে ‘স্কাইলার্ক’ পাখিকে অবলম্বন করে ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী প্রমুখ কবি বিখ্যাত কবিতা রচনা করেছেন। স্কাইলার্ক পাখির মুক্ত ডানায় ভর করে তাঁরা আত্মমুক্তির যে প্রেরণা খুঁজে পেয়েছেন বাংলা কাব্যে ফররুখ আহমদ তা পেয়েছেন ‘ডাহুক’ পাখিকে আশ্রয় করে। ডাহুক বাংলাদেশের একটি জলজ পাখি । দৃষ্টিনন্দন এই পাখিটি চঞ্চল গতিসম্পন্ন। তবে এর পরিচিতি প্রেমিক পাখি হিসেবে। সাথীহারা ডাহুক পাখি ডেকে ডেকে মুখে রক্ত তুলে স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বরণ করে নেয়। ডাহুক পাখির এই আত্মনিবেদন ও আত্মসমর্পণের বৈশিষ্ট্য পাখিটিকে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করে তুলেছে। কবি ডাহুকের এই একনিষ্ঠ আত্মনিবেদনে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে তুলনা করেছেন মানুষের অক্ষমতাকে। ডাহুক যেভাবে নিজেকে নিবেদন করতে পারে মানুষ সেভাবে পারে না। কবি নিজেও আত্মিক মুক্তির জন্য পরম স্রষ্টাকে সর্বান্তকরণে ডাকতে সক্ষম নন। একারণেই সমালোচক মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ বলেছেন, “ফররুখ আহমদ বলতেন, তিনি ডাহুককে নিঃসঙ্গ সাধকের যিকির এবং তাঁর সাধনার সাফল্যের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহার করেছেন।” নিকুঞ্জবিহারী ডাহুকের ডাককে কবি দেখেছেন অনন্তের এক মহান বার্তা হিসেবে, যে বার্তা মানুষকে জাগতিক বলয় ভেদ করে অন্তর্লোকে পরমাত্মার সন্ধানে শক্তি ও প্রেরণা যোগায়। কবির কল্পনায় ডাহুক এসেছে পবিত্র আত্মার স্বরূপে। তিনি ডাহুককে শুদ্ধচিত্ত সাধকের প্রতীকে কল্পনা করে মানুষের ব্যর্থতার দিকটিকে সামনে নিয়ে এসেছেন। ডাহুকের একনিষ্ঠতা থেকে মানুষের অনেক কিছু শিখার আছে বলে কবি মনে করেন।